December 21, 2024, 9:55 pm

সংবাদ শিরোনাম
পার্বতীপুরে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা ২০২৪ অনুষ্ঠিত বাংলাভিশন ডিজিটালের নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে নাবিলের অপপ্রচারের প্রতিবাদ হিলিতে বিজিবি দিবসে বিএসএফকে মিষ্টি উপহার বিজিবির কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা গ্রেপ্তার পটুয়াখালীতে বাড়ির সীমানা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত-৬ গভীর রাতে আশ্রায়ন প্রকল্পের শীতার্তদের পাশে হাকিমপুরের ইউএনও অমিত রায় যশোরে জামিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসার অনুষ্ঠানের ভিডিও নিয়ে তোলপাড় পটুয়াখালীতে রাখাইনদের ধান লুটের ঘটনা মিথ্যে দাবী করে যুবদল নেতার মানববন্ধন ভারত সীমান্তের ইছামতী নদীর তীর থেকে ৩ বাংলাদেশী যুবকের লাশ উদ্ধার সেন্টমার্টিন দ্বীপে শতাধিক ইট-পাথরের স্থাপনা : ২০৪৫ সালের মধ্যেই সাগরে তলিয়ে যাবার আশংকা

অনুপস্থিত আনসারের নামে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ

অনুপস্থিত আনসারের নামে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার


মৌলভীবাজারে দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় ৯শ পুলিশ থাকলেও ৭ হাজার আনসার ছিলনা। বিভিন্ন মন্ডপের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট মন্ডপে নির্ধারিত সংখ্যক অনসার না থাকার বিষয়টি সিসিতে উল্লেখ করা সত্তেও অনুপস্থিত আনসারের নামেও সম্মানীর টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে মন্ডপে কাগজে কলমে নির্ধারিত আনসারের সংখ্যা ৫ জন, সেখানে বাস্তবে ছিল আনসার ৩ জন। ওই মন্ডপে দায়িত্ব পালণকারী পুলিশ কর্মকর্তা ২ জন আনসার কম থাকার বিষয়টি প্রতিটি জেলার প্রায় অধিকাংশ এলাকার পুজা মন্ডপে  দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সিসিতে উল্লেখ করেছেন। তেমনি পুরো ৫ জন আনসারের সম্মানীর টাকা উত্তোলন করেছেন জালিয়াতির মাধ্যমে আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শামসুননাহার। দুর্ণীতি ও অনিয়মকে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন- রাজনগর উপজেলা আনসার ভিডিপি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামছুনাহার, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আনসারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুনা চৌধুরী, কমলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা নাসিমা বেগম, কুলাউড়া উপজেলার আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাইসহ প্রায় সকল উপজেলার আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা। এ বছর জেলায় দুর্গাপূজায় ১ হাজার ৪২ টি মন্ডপ তৈরি হয়েছিল। ৭ হাজার আনসারদের মধ্যে অংগীভূত আনসাররদের সমমান বেতন ৪শত ৩৫ টাকা পাওয়ার কতা থাকলেও পাচ্ছে ৩শত ২০ টাকা। সাধারণ আনসারদের ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার নিয়ম রয়েছে। রাজনগর উপজেলায় ১শত ১৮ টি পূজা মন্ডপ ছিলো। সেখানে খাতা পত্রে ৫শত ১০ জন আনসার দায়িত্ব পালন দেখানো হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে ১শত ৬৬ টি মন্ডপে ৭শত ৯৮ জন আনসার খাতা পত্রে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১শত ৭৫ জন আনসার কম ছিল। কমলগঞ্জে ১শত ৩০টি মন্ডপে ৬শত ৮৪ জন আনসার কাগজে পত্রে ডিউটি পালন করছে। কিন্তু ডিউটিতে অনুপস্থিত ছিল প্রায় ১শত ৭১ জন। কুলাউড়ায় ২শত ১২টি মন্ডপ ছিলো। কাগজে পত্রে ডিউটি পালন করছে ১ হাজার ১শত ৪৮ জন আনসার।  কিন্তু ডিউটিতে অনুপস্থিত ছিল প্রায় ৩শত ৩৩ জন আনসার।  এভাবেই জেলায় ১ হাজার ৪২টি পূজা মন্ডপে প্রায় ১৭ শত আনসারের নাম কাগজ পত্রে দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা কর্মচারী। এভাবেই জেলার ৭ উপজেলার প্রায় প্রতিটি মন্ডপে কাগজে কলমে নির্ধারিত সংখ্যক আনসারের স্থলে ১ থেকে ৩ জন আনসার কম নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাৎ করেছেন সরকারের লাখ লাখ টাকা। গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা পুলিশ আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল জানিয়েছিলেন, শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সারা জেলার প্রত্যেক মন্ডপে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারসহ মোবাইল ডিউটি থাকবে। পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সারা জেলায় ৯শ ৫ জন পুলিশ ফোর্সসহ ৭ হাজার আনসার নিয়োজিত থাকবে। কিন্তু, অধিকাংশ মন্ডপেই নির্ধারিত সংখ্যক আনসার ছিলনা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলা, রাজনগর উপজেলা, কুলাউড়া উপজেলা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১৯টি পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে সেগুলিতে নির্ধারিত সংখ্যক আনসার নেই। কর্তব্যরত আনসাররা দীর্ঘ সময়েও নির্ধারিত সংখ্যক আনসারকে সামনে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয়। তবে, কয়েকটি মন্ডপের আনসাররা তাদের মন্ডপে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে কম আনসার নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কাগজে কলমে নির্ধারিত সংখক আনসার নিয়োগ দেখানো হলেও বাস্তবে অধিকাংশ মন্ডপেই নির্ধারিত সংখার চেয়ে কম আনসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাগজে কলমে সারা জেলায় ৭ হাজার আনসার নিয়োগ দেখানো হলেও, বাস্তবে তা ছিলনা। একটু অনুসন্ধান করলেই বিষয়টি হাতেনাতে প্রমান পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য- পূজা, ইউপি নির্বাচন, পৌর নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য আনসার নিয়োগে কারচুপির বিষয়টি অনেক পুরনো। এসব প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়োগকৃত আনসারের সংখ্যা কাগজে কলমে যা দেখানো হয়, বাস্তবে থাকে তার চেয়ে কম। এই কম নিয়োগ দেয়া আনসারদের সম্মানীর টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আতœসাৎ করেন উপজেলা ও জেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, নিয়োগ করার জন্যও আনসারদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করা হয় নির্ধারিত হারে। ওই উৎকোচের অর্থও ভাগাভাগি হয় উপজেলা ও জেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের মধ্যে। কিন্তু, নিয়োগ থেকে বাদ পড়ার ও কালো তালিকাভূক্ত হবার ভয়ে আনসাররা মুখ খোলার সাহস পাননা। এভাবেই সরকারের সাগর চুরি করে চলেছেন আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর