পেকুয়া প্রতিনিধিঃ
পেকুয়ায় অগ্নিকান্ডে একটি পরিত্যক্ত বসতবাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। উপজেলার মগনামা
ইউনিয়নের পূর্বমটকাভাঙ্গা গ্রামে ২২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সাড়ে ৫ টার দিকে অগ্নিকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখায় পরিত্যক্ত ওই বসতবাড়িটি সম্পূর্ন পুঁড়ে ছাই হয়ে যায়। বসতবাড়িটির মালিক ওই এলাকার মৃত বজল আহমদ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বজল আহমদের বিধবা স্ত্রীকে এ বাড়ি থেকে ২ বছর আগে জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়। এতে করে অগ্নিকান্ডে মালামাল ও দ্রব্যাদি ভস্মীভূত হয়নি। তবে টিনের ছালার এ ঘরটি ভস্মীভূত হয়েছে। পেকুয়া থানা পুলিশ ও মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম, ৬ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য নুরুল আজিম দ্রুত অগ্নিকান্ড স্থান পরিদর্শন করেছেন। অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় সুত্র জানায়, পূর্বমটকাভাঙ্গা গ্রামে তোফাজ্জল করিমের ছেলে প্রবাসী ওবাইদুর রহমান জিসানের বসতবাড়ি ও এর নিকট মৃত বজল আহমদের বাড়িতে দ্বিতীয় দফা অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছে। বুধবার (২১ নভেম্বর) রাত ৯ টার দিকে ১ম দফা অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। জিসানের রান্নাঘরে বেড়ায় আগুন দেখতে পায়। এ সময় রান্নাঘরের বাঁশের বেড়ার আংশিক ভস্মীভূত হয়। তবে ওই রান্নাঘরটি অক্ষত থাকে। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে জিসানের বসতবাড়ির বাউন্ডারী ওয়ালের বাইরে তার চাচা মৃত বজল আহমদের পরিত্যক্ত বসতবাড়িতে আগুনের সুত্রপাত হয়। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখায় পরিত্যক্ত এ বাড়িটি পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে। ১ম দিন আগুনের সুত্রপাতের এ বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। পেকুয়া থানার পুলিশ ওই স্থানে পৌছে। এ সময় আগুন নিয়ে রহস্য দেখতে পান পুলিশ। পরদিন সকালে জিসানের পিতা তোফাজ্জল আহমদ পেকুয়া থানায় পৌছে। তবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। পেকুয়ার দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে ওই স্থানে যায়। তবে তারা পৌছার পূর্বেই এ বাড়িটি ভস্মীভূত হয়। স্থানীয়রা জানায়, ওই দিন বিকেলে মটকাভাঙ্গায় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ চলছিল। খেলা উপভোগ করতে হাজার হাজার দর্শক মাঠে জড়ো হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় শেষের দিকে আকাশে ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখতে পায়। এ সময় আগুন দেখতে পেয়ে দর্শকরা ওই স্থানে ছুটে যান। স্থানীয় সুত্র জানায়, মটকাভাঙ্গা গ্রামে ওবাইদুর রহমান জিসান ও কুমপাড়ার মৃত ইয়াকুব মিয়ার ছেলে সোলেমানের বিরোধ চলছিল। জিসানের বাড়ির পশ্চিম দিকের জমি নিয়ে মুলত এ বিরোধ। ২০/৩০ কানির জমি নিয়ে জিসান ও সোলেমানের মধ্যে আধিপত্য দেখা দেয়। জমির মালিক সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া গ্রামের প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সোলেমানকে লাগিয়ত করে। প্রায় ২০/২৫ বছর ধরে এ জমি সোলেমান চাষ করছে। তবে সেখানে জিসানেরও আড়াইকানি জমি আছে। বর্ষার সময় মাছ চাষ নিয়ে দ্বন্ধ তৈরী হয়। জিসান যুবদল করেন। জোট সরকারের সময় প্রচন্ড ক্ষমতাধর ছিলেন। আ’লীগ ক্ষমতায় আসলে সে হয়রানির ভয়ে বিদেশ পাড়ি দেয়। মৎস্যঘেরের বিরোধের জের ধরে ২০১৬ সালে জিসান বাদী হয়ে চকরিয়া জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সিআর পিটিশন দেয়। ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী হয়েছে এ ভিত্তিতে সোলেমানকে আসামী করে এ মামলা হয়। এর সত্যতা নেই মর্মে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়। বাদী নারাজি পেশ করে। তদন্তের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে মামলা আমলে নেয়। এ মামলায় লবণ চাষী সোলেমান ১ মাস ধরে জেলে। ইউপি সদস্য নুরুল আজিম জানায়, জিসান ১ জন মামলাবাজ। বিএনপির সময় তৌহিদ, জিসান ও তার মামা বেদার মন্ত্রী সালাহ উদ্দিনের বডি গার্ড ছিল। সোলেমানসহ আমরা যারা আ’লীগ করেছি তারা ছিলাম চরম নির্যাতিত। সে সময় সোলেমানকে কি পরিমান হয়রানি করছে আমরা দেখেছি। আগুন দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। মটকাভাঙ্গা গ্রামের নুরুল হক, হাজি রফিক আহমদ, হাজী আবুল কালাম, লবণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসাইন জানায়, জিসান মামলাবাজ। যে ঘরটি পুঁড়ে গেছে সেটি তার নয়। তার বিধবা চাচীকে দাদার বসতভিটা থেকে নির্যাতন চালিয়ে বিতাড়িত করেছে। এ ঘরটি তার চাচার। পরিত্যক্ত ঘরটিতে আগুন দিয়ে সোলেমানের পরিবারের বিরুদ্ধে আর একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলার চেষ্টা চলছে। আমরা চাই এ ধরনের বর্বরতার সঠিক তদন্ত হউক। বিনা কারনে আর কোন নিরীহ মানুষ পিষ্ট না হয়। নুরুল আবছার ও হেলাল উদ্দিন নামের দুই গ্রামবাসী জানায়, ঘরটিতে ধরবার আগে জিসানের এক ফুফাতে ভাই পেকুয়ায় ফায়ার সার্ভিস অফিসে ছিল। ওই ব্যক্তিও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ছিল। পেকুয়া বাজারে জানজটের মধ্যে তাকে লোকজন দেখেছে। এতে বুঝা যায়, এটি স্পষ্ট চক্রান্ত। তবে ওবাইদুর রহমান জিসানের ফুফাতো ভাই যুবলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার সহসভাপতি মোজাম্মেল হক জানায়, আগুন জিসানের প্রতিপক্ষরা দিয়েছে। রাতেও তারা জিসানের রান্না ঘরে আগুন দেয়। দ্বিতীয় দফা বাউন্ডারীর বাহিরে এ ঘরটিতে আগুন দেয়। জিসানের; পিতা তোফাজ্জল আহমদ জানায়, তিন চারজন মিলে আমার বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছে। তারা আমাকে এলাকা ছাড়া করতে চায়। পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভূইয়া জানায়, এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত চলবে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২২ নভেম্বর ২০১৮/ইকবাল