January 11, 2025, 4:36 am

সংবাদ শিরোনাম
সেনাবাহিনীর অভিযানে নবীগঞ্জ থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার নাটোরে ফেন্সিডিলসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার জেলে শ্রমিক থেকে হয়ে উঠলেন কোটি টাকার দালান, ট্রলার মালিক জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর হাজার মামুষের ভালবাসায় চির বিদায় গাজী মারুফ মধুপুরে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাঘাটায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ, ঘটনা শুনে বাবার মৃত্যু বেনাপোল দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে নতুন শর্তপণ্য বারো ধরনের আমদানিতে পরীক্ষণ করবে আর আই এম

জেলে শ্রমিক থেকে হয়ে উঠলেন কোটি টাকার দালান, ট্রলার মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক/ কক্সবাজার প্রতিনিধি :

কয়েক বছর আগেও ছিলেন জেলেদের দৈনিক মজুর। সকাল বিকাল নদীতে জেলেদের সাথে জাল ফেলা, নৌকা আনা নেওয়া, জাল উঠানো।মাছ ধরার কাজে ব্যস্ততা। সময়ের পরিবর্তনে একপর্যায়ে সখ্য গড়ে
সীমান্তের প্রভাবশালী পরিবারের এক সদস্যের সাথে।

ক্ষমতা কেন্দ্রিক পরিবারের আনুকুল্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর টহলকারী এক শ্রেণির সদস্যদের সাথে। তারপর শুরু। সীমান্তের এপার থেকে খাদ্য পণ্য, সিমেন্ট পাচার। উপার থেকে মাদক, মানব পাচারের মত জঘন্য অপরাধ কর্ম। মাঝে মধ্যে মাদক পাচার মামলার আসামি হলেও ঘুরে ফিরে নাফ নদীর একটি অংশ বহাল তবিয়তে থাকছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলেও রাজত্বে ধ্বস নামিনা তার। বরং ক্ষমতার পালাবদলে সেও বদলিয়ে নিয়েছেন অভিভাবক। যার ফলে নাফ নদীতে অবাধে চলে তার নৌকা, শহরে গড়ে উঠেছে একাধিক দালান, বাড়ছেও বৌ ” র সংখ্যা। বলছিলাম, কক্সবাজারে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পৌর সভার ৭ নং ওয়ার্ড চৌধুরী পাড়ার সৈয়দ আলম ওরফে লাল কিয়ারা”র কথা। স্হানীয় রুহুল আমিন প্রকাশ লুইল্লা”র ছেলে তিনি।

লাল কিয়ারা”র পিতা লুইল্লা এক সময় নাফনদীর জাল ফেলার জায়গা “ফার” দখল দারিত্ব তদারকি করত। কেউ মাসিক টাকা না দিলে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর “নাসাকা” বা বিজিপি ” র দাওয়ায় তা আদায় করতো এমন অভিযোগ অহরহ ছিল। এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সীমান্তে রাজত্ব কায়েম করেছেন রুহুল আমিন প্রকাশ লুইল্লার ছেলে সৈয়দ আলম ওরফে লাল কিয়ারা।

অনুসন্ধানে যানা যায়, টেকনাফ সীমান্তের নাফনদীতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুর রহমান বদির পরিবারের। বিশেষ করে পৌর সভার কায়ুখখালী খালের ঘাট ও নাফনদীর বাংলাদেশ- মিয়ানমার ট্রানজিট জেটির ঘাট নিয়ন্ত্রণে ছিল এমপি বদির ভাই ও স্হানীয় পৌর কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান। ওই মুজিবুর রহমানের ক্যাশিয়ার হিসেবে নাফনদীতে রাজত্ব কায়েম করেছে সৈয়দ আলম ওরফে লাল কিয়ারা।

৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে কাউন্সিল মুজিবুর রহমান আড়ালে চলে যায়। তারপর সৈয়দ আলম ওরফে লাল কিয়ারাও তার অভিভাবক মুজিবুর রহমানের পরামর্শে নতুন প্রভাবশালী পরিবার গুলোর সাথে সখাতা গড়ে তুলে। পাশাপাশি নাফনদীর মধ্যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পুশব্যাক কার্যক্রমে ট্রলার সরবরাহ দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে মাদক ও মানব পাচার এবং বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম কৌশলে পরিচালনা করে যাচ্ছে। যার ফলে সামান্য জেগে মজুর থেকে হয়ে উঠেন কোটিপতি।
টেকনাফ পৌর এলাকার জালিয়া পাড়া, কায়ুকখালী পাড়া ও সদরের চক বাজার এলাকায় গড়ে তুলেছে ৩ টি জমিসহ দালান।

নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক স্হানীয় জেলেদের অভিযোগ ২০১৭ সালের পর থেকে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তারপর থেকে স্হানীয় জেলেরা নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে না পারলেও সৈয়দ আলম ওরফে লাল কিয়ারা”র অবাধে মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে। নাফনদীর বাংলাদেশ অংশে গরীব অসহায় জেলেরা ছোট ছোট ডিংগী নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে গেলেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এসব হয়রানির জন্য লাল কিয়ারা”র সিন্ডিকেট দায়ী বলে জানিয়েছেন স্হানীয় জেলেরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সৈয়দ আলম বলেন, ” আমার মাছ ধরার নিজস্ব ট্রলার ও জাল রয়েছে।

সেসব নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। তা ছাড়া সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তথা রাস্ট্রের প্রয়োজনে আমার ট্রলার দিয়ে পুশব্যাক কার্যক্রম করে থাকি। যে সব কাজ সরাসরি বাহিনী তদারকি করে থাকে। এখানে নাফনদী দিয়ে পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। অনেকে বাধাগ্রস্ত হলে আমাকে সন্দেহ করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করছে।”

এদিকে টেকনাফে নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পাওয়ার জন্য স্থানীয় ও জেলেদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে । গত ১৯ আগস্ট সোমবার দুপুরে নাফ নদী খুলে দেওয়া দাবিতে স্থানীয় ও বঞ্চিত জেলেদের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধনের অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি স্মারকলিপি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী হাতে তুলে দেন।

এ সময় নাফ নদী খুলে দেওয়ার দাবিতে টেকনাফ উপজেলার শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং পৌর সভার জালিয়া পাড়া, নাইট্যং পাড়া, সদরের বরইতলি, কেরুনতলী সহ হ্নীলার স্থানীয় জেলেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন, গুরা মিয়া, ছৈয়দ হোসাইন, মো: ইব্রাহিম, মো. শহিদ, আজগর আলী, শফিক আলম, গফুর, তৈয়ুব, জিয়াউর রহমান, ফরিদ, গণি সহ আরও অনেকেই।

এরই প্রেক্ষিতে দিনের বেলায় নাফনদীতে মাছ ধরার অনুমতি বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানালে মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে সংঘাত চলমান থাকায় তা এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি গত ৩০ ডিসেম্বর টেকনাফ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন কালে সাংবাদিকের এসব তথ্য জানান।

মাদকের জন্য টেকনাফ খ্যাত উল্লেখ করে স্বরাষ্ট উপদেষ্টা আরে বলেন, ‌‘মাদকের জন্য বাংলাদেশে মি. বদি বিখ্যাত ছিল। কিন্তু মাদক অনেক আগের সমস্যা। তবে মাদক রোধ করতে সবার সহযোগিতা দরকার। কারন এটা শুধু আইন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব না। সীমান্তে সব পরিস্থিতি সমাধান হয়ে গেলে নাফনদে মাছ শিকারসহ শাহপরীর দ্বীপে করিডোর খুলে দেওয়া হবে।’
———

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর