October 10, 2024, 4:22 am

সংবাদ শিরোনাম
আসন্ন শারদীয়া দুর্গাপূজা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রশাসন ও জনগণের প্রীতি আহ্বান – পর্ব ৮ প্রশাসন সংস্থা ব্রিটিশ আইনের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা চলতে পারে না-পর্ব ৭ মাতৃভূমির এক ইঞ্চি জমি ছাড় দেওয়া হবে না, পর্ব ৬ স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি রক্ষা করতে হলে প্রতিটি ঘরে সেনাবাহিনী তৈরি করতে হবে(পর্ব-৫) আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন

রমেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেশিন সিটি স্ক্যান, এমআরআইসহ বেশিরভাগ মেশিনই অকেজো রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে প্রাইভেটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে বাহিরে

রংপুর ব্যুরো
মাটি মামুন

উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সর্বাধুনিক মেশিন সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রেসহ বেশিরভাগ মেশিনই অকেজো হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন থেকে।এগুলো সচল করার কোনও উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।ফলে রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে প্রাইভেটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে বাহির থেকে।অপরদিকে হাসপাতালে সব ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ  রোগীরা।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রংপুরসহ পুরো বিভাগের ৮ জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়।কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাদের সব ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা; বিশেষ করে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, বিভিন্ন ধরনের এক্স-রে করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।কারণ সব সর্বাধুনিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে বেশ কিছুদিন ধরে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এসব বিকল মেশিন সচল করার কোনও উদ্যোগ নেই।ফলে প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে চড়া মূল্যে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে রোগীরা। এতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় অন্যদিকে সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র রোগীরা অতিরিক্ত মূল্যের কারণে পরীক্ষা করাতে পারে না।স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়ার কারণে বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করছেন।অথচ হাসপাতালের সর্বাধুনিক প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থাকার পরও সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।সব মিলিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এতে রোগীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
সরেজমিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ বিশেষায়িত হাসপাতালটির অবস্থা অত্যন্ত করুণ।এখানে নিয়মনীতি বলতে কিছুই নেই ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদবির চিকিৎসকরাই ঠিকমতো আসেন না।অন্যদিকে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক আর অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসকরা দুপুর ১২টার থেকে ১টার মধ্যে ইচ্ছেমতো আসেন।রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো। আবার তাদের কাজের মনিটরিং বা দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কি না, এসব দেখভাল করারও কেউ নেই।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এসব বিকল মেশিন সচল করার উদ্যোগ নেই।রোগী ও স্বজনদের আরও অভিযোগ, তারা রংপুর মেডিকেল  কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন।সরকারি হাসপাতালে তাদের পাওয়া না গেলেও, দুপুরের পর বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখেন।মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী সালামত উল্লাহ জানান, তিনি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থেকে মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিন দিন ধরে।কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসেননি তবে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আসেন আর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ ধরিয়ে দেন।তিনি আরও জানান, রেজিস্ট্রার আর সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসকরা এলেও একই কাজ করেন।তবে ইন্টার্ন চিকিৎসক বা নার্সরা বলে দেন বাইরে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাতে হবে।একই কথা বলেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে আসা নজরুল ইসলাম, রংপুরের গঙ্গাচড়ার আসমা বেগম, নীলফামারীর জলঢাকা থেকে আসা রহিমাসহ অনেকেই।
এদিকে হাসপাতালে সব ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে রোগীদের পরীক্ষা করাতে হয়।সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার, সেবা প্যাথলজিক্যাল সেন্টার, সেন্ট্রাল ল্যাবসহ বড় বড় প্রাইভেট প্যাথলজিক্যাল সেন্টারের লোকজন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক ঘোরাঘুরি করে।তারা নিজেরাই রক্ত ও প্রস্রাবের স্যাম্পল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তারাই পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে যায়।এতে দ্বিগুণ টাকা খরচ হচ্ছে রোগীদের।অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বাইরে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বলে জানান বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজন ও রোগীরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও প্যাথলজিকাল ল্যাবের টেকনিশিয়ানরা জানান, সব ল্যাবে তাদের লোক নিয়োগ করা আছে।তাদের বলেই দেওয়া হয় কোন ওয়ার্ড থেকে রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য নিতে হবে।তারা আরও বলেন, যে চিকিৎসক বা ইন্টার্ন পরীক্ষা করার জন্য দেন, তাদের শতকরা ৪০ ভাগ অর্থ কমিশন দেওয়া হয়।রংপুরের হারাগাছ থেকে আসা রোগী সানজিদা আখতার জানান, হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করালে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা লাগতো।বাইরে প্রাইভেটে করালে ৩ হাজার টাকার বেশি লাগে। এমআরআই করাতে হাসপাতালে ২ থেকে আড়াই হাজার, বাইরে থেকে করালে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগে।একই অবস্থা বিভিন্ন ধরনের এক্স-রের বেলায়ও প্রযোজ্য বলে জানালেন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর স্বজন ও রোগীরা। শুধু হৃদরোগ রোগীদের ইসিজি পরীক্ষা হাসপাতালে হয়, কিন্তু অন্যান্য পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে।রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট সমাজসেবক রেজাউল ইসলাম মিলন পুরো দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ করে বলেন, একটা হাসপাতালের সব স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেশিন অকেজো থাকা অবাস্তব হলেও সত্য। তিনি এ জন্য চিকিৎসকদের দায়ী করে বলেন, বাইরে থেকে পরীক্ষা করালে চিকিৎসকরা মোটা অঙ্কের কমিশন পান বলেই এখানে কোনও চিকিৎসাসেবা পায় না রোগীরা।তিনি আরও বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনও চিকিৎসা নেই।এখানে চরম নৈরাজ্য চলছে, কার কথা কে শোনে? চেইন অব কমান্ড নেই। এ জন্য সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে নিয়োগদানের দাবি জানান তিনি।সর্বাধুনিক প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থাকার পরও সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর