সূচক কমে ২৭ মাস আগের অবস্থানে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ফিরে গেছে ২৭ মাস আগের অবস্থানে।
সোমবার এ বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬২ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
এর আগে সূচকের ঘরে এর চেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে দিন শেষ হয়েছিল ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি। সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ১৫৮ দশমিক ৭০ পয়েন্টে।
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার ১৮৩ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৮৬৯ পয়েন্ট হয়েছে।
সোমবার ঢাকার বাজারে লেনদেন নেমে এসেছে ২৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে ৪৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা কম।
আর চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা কমে ১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
ডিএসইতে এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৪৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৬টির দর বেড়েছে, ২১৭টির কমেছে, অপরিবর্তিত ছিল ৪৪টির দর।
আর সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৪৭টির দর বেড়েছে, ১৫৭টির কমেছে, ২৯টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
দীর্ঘদিন মন্দা দশার পর জাতীয় নির্বাচনের আগে ১৭ ডিসেম্বর থেকে দেশে পুঁজিবাজারের সূচক বাড়তে শুরু করে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পর বাজার চাঙ্গাভাবে ফিরে আসে। ২৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স বেড়ে ৫৯৫০ পয়েন্ট হয়।
কিন্তু ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকেই বাজারে পতন শুরু হয়। তিন মাসে ঢাকার বাজারে সূচক কমেছে ৭১২ পয়েন্ট, যা ১৩ শতাংশের বেশি।
আর লেনদেনের পরিমাণ জানুয়ারির শেষে যেখানে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উঠেছিল, এখন তা নেমে এসেছে এক চতুর্থাংশে।
গত ২২ এপ্রিলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দাবি করেন, পুঁজিবাজার ঠিকই আছে, যে ওঠানামা হচ্ছে সেটা স্বাভাবিক।
কিন্তু রোববার সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি স্বীকার করলেন, দেশের পুঁজিবাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই, ব্যাংক খাতের অবস্থাও নাজুক।
“পুঁজিবাজারটি এখন নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই সেটাও বলব না। পুঁজিবাজারের যেসব সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করেছি। একে একে সবগুলি সমস্যার সমাধান দেব।”
সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে আন্তরিক জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সঙ্গত কারণেই পুঁজিবাজারের জন্য আগামি বাজেটে প্রণোদনা থাকবে। তবে কতটা থাকবে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। অবশ্যই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালীভাবে চালানোর জন্য যা কিছু দরকার সেটাই করা হবে।”
এদিকে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকালে মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে ১২ দফা দাবিতে প্রতীক অনশনে বসে।
লেনদেনের পুরো সময় অনশন চলার পর বিনিয়োগকারীদের অনশন ভাঙ্গান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন।
শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে দায়িত্ব নেওয়ার আহŸান জানান তিনি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এবং পুঁজিবাজারে মুনাফা বৃদ্ধির হার তাত্তি¡কভাবে সমান তালে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে তা ঘটতে দেখা যাচ্ছে না।
“এর মূল কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অনেক কারসাজি হয়েছে, ফলে মানুষ ভয় পায়, এই বুঝি ধস নামল। এখন যে পতন হচ্ছে এর পেছনে আমি মনে করি এ সমস্যাটাই বেশি। তাই এই পতন স্থায়ী হবে না।”
তবে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী মনে করেন, আস্থার সঙ্কটের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা রয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
“পুঁজিবাজারে টাকার অভাব আছে। কথায় কিন্তু পুঁজিবাজার উঠবে না, প্রচুর প্লেসমেন্ট শেয়ারে টাকা গেছে, এই টাকা তো সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে চলে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার বেশি। তারপর সবার উপরে আছে আস্থার সমস্যা।
“এখন সরকারকে খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্তির ব্যাপারে খুব কঠোর হতে হবে। বলতে হবে যে এই সরকারের আমলে আর কোনো বাজে কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে না। এতে পুঁজিবাজারে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে আর এই বাজেটে যদি সরকার বলে যে একটা ভালো টাকার শেয়ার আইসিবি কিনবে, তাহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।”