May 30, 2024, 12:39 pm

সংবাদ শিরোনাম
রংপুর সিটির তিন মাথায় নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু, ইউপি চেয়ারম্যান ও ভবন মালিকের যোগসাজসে গোপনে লাশ দাফন আদমদীঘির ধান শরিয়তপুরে উদ্ধার; গ্রেপ্তার-২ অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ০৬ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকা হতে গাঁজা ও বিদেশী পিস্তলসহ কুখ্যাত অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ী সাগর’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ধাক্কায় চালকের মৃত্যু ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে উপকুলের সতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত কুড়িগ্রামে বেবী তরমুজের চাষে তিন মাসে আয় দেড় লাখ টাকা মাঝরাত্রে প্রবাসীর ঘরে ঢুকে স্ত্রীও মা কে ছুরি মেরে পালালো দুর্বৃত্তরা বগুড়ার শিবগঞ্জে জাতীয় অনলাইন প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন: এমদাদুল আহবায়ক রবি সদস্য সচিব গাইবান্ধা প্রেসক্লাব’র কমিটি গঠিত

ধ্বংসপ্রাপ্ত অভিশপ্ত শহর পম্পেই: স্রষ্টার ক্রোধের জীবন্ত নিদর্শন

ধ্বংসপ্রাপ্ত অভিশপ্ত শহর পম্পেই: স্রষ্টার ক্রোধের জীবন্ত নিদর্শন

পম্পেই নগরীর নাম শুনেছেন? ভাবতে পারেন একটি নগরীর ধ্বংস হয়েছিল মুহূর্তের মধ্যে! চোখের পলক ফালারও সুযোগ পায়নি একটি মানুষ। জীবন্ত মোমিতে পরিণত হয় অনাচার আর পাপাচারের প্রতীক মানুষগুলো। আজকে আপনাদের শোনাবো পম্পেই শহরের আদিকথা।

ইতালী’র নেপল উপসাগরের উপত্যকায় অবস্থিত ছিল এই পম্পেই নগরী। এই শহরের গোড়াপত্তন হয় প্রায় খৃীষ্টপূর্ব ৬-৭ শতাব্দী’র দিকে মধ্য ইতালীর তৎকালীন রাজা ওসকানের দ্বারা। ভেজিভিয়াস পাহাড়ের পাদদেশে নেপল উপসাগরের উপত্যকায় শহরটি গড়ে উঠে। শহরের একপাশে হারকুলেনিয়াম শহর এবং অন্যপাশে ষ্ট্যাবি শহর অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিপুল সমাহার ছিল এই শহরে। গ্রীক বানিজ্যিকরা সে সময় পম্পেই শহরকে ব্যবহার করতো বানিজ্যিক বন্দর হিসেবে। ইউরোপের বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধের মাধ্যমে খৃষ্টপূর্ব ৮০ এর দিকে এই শহরটি রোমান সম্রাজ্যের দ্বারা অধিকৃত হয় এবং সেখানে গড়ে উঠে রোমান সম্রাজ্যের অন্যতম বানিজ্য বন্দর। বানিজ্যিক টুরিস্টদের জন্য সেখানে গড়ে উঠেছিল অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা প্রাসাদ, বাজার ইত্যাদি।

অভাব অনটন বলতে কোন কিছু ছিলনা পম্পেইবাসীর। শহরটি ধীরে ধীরে প্রাচীন কালের আধুনিক সভ্যতার সকল ধরনের চিত্তরঞ্জনের জন্য প্রানবন্ত একটি শহরে পরিনত হয়ে উঠে। তৎকালীন অভিজাত মানুষগুলোর আমোদপ্রমোদ এর কেন্দ্রস্থল ছিল এই নগরী। রোমের সব সম্পদশালী মানুষের অবসর কাটানোর শহর ছিল এই পম্পেই। কিন্তু প্রকৃতির এত সম্পদ পাওয়ার পরও ধীরে ধীরে প্রকৃতির নিদর্শনকে অস্বীকার করে পাপাচারে লিপ্ত হতে থাকে পম্পেইবাসী।

“গ্লাডিটোরিয়াল কমব্যাট” ও “সেক্স স্লেভারী” তে দিনকে দিন অভ্যস্ত হতে থাকে পম্পেইবাসী। “গ্লাডিটোরিয়াল কমব্যাট” হচ্ছে কোন স্টেডিয়ামের মাঠে কিছু পুরুষ মানুষের মধ্যে আমৃত্যু এক ধরনের স্বশস্ত্র যুদ্ধ যা ষ্টেডিয়ামের দর্শকদের বিনোদনের জন্য পরিচালিত হতো। যোদ্ধারা যুদ্ধ করতো যতক্ষন না একজন যোদ্ধার দ্বারা অপর যোদ্ধার রক্তাক্ত মৃত্যু না হয়। আর এই মৃত্যুকে উপভোগ করতো সে সময়ের রোমান এলিট শ্রেনীর দর্শকরা।

“সেক্স স্লেভারী” তে এরা এতই অন্ধ ছিল যে বাড়ীর গৃহকর্তা বা গৃহিনী অথবা নিজের ছেলে/মেয়েদের দিয়ে অতিথির যৌন বিনোদনের ব্যবস্থা করতে তাদের দ্বিধা হত না। এমনকি পশু পাখি দিয়েও নিজেদের যৌন বিকৃতির পিপাসা মেটাতো। বিভিন্ন নগ্ন মূর্তিকে তারা “ফারটিলিটি গড” হিসেবে বিশ্বাস করতো, যৌনক্ষমহীন নারী/পুরুষরা এই সব ফারটিলিটি গড এর মূর্তি ক্রয় করতো এবং মূর্তির সাথে যৌনকর্মের মাধ্যমে দেবতার পূজা করতো যাতে তাদের যৌনক্ষমতা ফিরে আসে।

দিনকে দিন খ্রিষ্টান ধর্ম থেকে বিচ্যুত হতে থাকে তারা। সকল ধর্মযাজক নগরী ছেড়ে চলে যায়। ধর্মীয় মানসিকতায় সামাজিক বা ধর্মীয় কনফ্রন্টেশন বা ব্যাকল্যাশের ভয়ে ইউরোপের কনজারভেটিভ ধর্মীয় সম্প্রদায় সাধারনত পমপেই শহর পরিভ্রমনে বিরত থাকতো।

খৃষ্টাব্দ ৭৯ সালের ২৪শে আগষ্ট। দুপুরবেলা ইতালী’র পম্পেই শহরের অধিবাসীরা কেউ কেউ বিশ্রামে ব্যাস্ত ছিল অথবা কেউ কেউ আনন্দ উদ্দীপনায় নিজেদের মত্ত রেখেছিল। ঠিক সেই সময় হঠাৎ শহরের অধিবসীদের উপর প্রকৃতির নির্মম দুর্যোগ নেমে আসে। শহরের পাশে অবস্থিত ভেসুভিয়াস পর্বতে কোন প্রকার পূর্বসংকেত ছাড়াই এক বিরাট ধরনের ক্যাটাস্ট্রোফিক অগ্নুৎপাত ঘটে ঐ সময়। সাধারনত কোন অঞ্চলে আগ্নুৎপাত হবার কিছুক্ষন আগে ঐ অঞ্চলের পশুপাখির আচরণের মধ্যে একধরনের পূর্বসংকেত লক্ষ্য করা যায়। পম্পেই শহরের বেলায় তার কিছুই পাওয়া যায়নি বলে ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেছে। ফলে পম্পেই শহরসহ শহরের ২০ হাজার অধিবাসী দিনে দুপুরে মাত্র অল্প কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রায় ২০ ফুট আগ্নিয় লাভা আর ছাইভষ্মের নিচে বিলিন হয়ে যায়। শহরের সমস্ত মানুষ, প্রানী ও উদ্ভিদরাজীর তাৎক্ষনিক জীবন্ত কবর হয়। তারপর থেকে প্রকৃতির অভিশপ্ত এবং পাপিষ্ঠ শহর হিসেবে এই শহর প্রায় ১৭০০ বছর ধরে আধুনিক মানব সভ্যতার অগোচরে থেকে যায়, কেউ কখনও সেখানে ভুল করেও প্রবেশ করেনি।

কিছু এ্যামেচার আর্কিওলজিষ্ট অলৌকিকভাবে খৃষ্টাব্দ ১৭৪৯ সালে সর্বপ্রথম আবিস্কার করেন ধ্বংস হয়ে যাওয়া পম্পেই। তারপর থেকে সেখানে উৎসাহী মানুষের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার বছর সময়ে শহরটি কয়েক হাজার ফুট মাটির নিচে বিলিন হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় আশ্চার্য্যের বিষয় হচ্ছে এখনও সেই মাটি আর ছাইভষ্মের নিচ থেকে প্রাণী সহ মানুষের মৃতদেহ অবিকল ফ্রোজেন অবস্থায় সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। মৃত্যুর সময় যে যেভাবে অবস্থান করছিল তাকে সেভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। যেমন কাউকে পাওয়া গেছে বাড়ির মধ্যে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় পরিবারের সকল সদস্যকে সমবেত অবস্থায়। বাড়ির কুকুরটার মৃতদেহ উঠানে ঠিক সেভাবেই আছে যেভাবে থাকার কথা। প্রকৃতি তার অমোঘ নৈপুন্যতা আর বৈজ্ঞানিক উপকরন দিয়ে এই সব মৃতদেহকে বছরের পর বছর মাটির নীচে স্বযত্নে সংরক্ষন করেছে যা আমাদের মত সাধারন মানুষের জ্ঞানে অবিশ্বাস্য।

এই সব প্রানী ও মানুষের মৃতদেহ দিয়ে ইতালীর সরকার নতুন করে তাদের ঐতিহাসিক যাদুঘর সাজাচ্ছে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এখন এই স্থানে জাতীসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন টুরিস্ট ভ্রমন করে।

তাহলে কি স্রষ্টা সত্যিই অনেক ক্ষুব্ধ ছিলেন এই পম্পেইবাসীর উপর! জীবন্ত কবর দিয়ে দিলেন পুরো শহরকে আর রেখে দিলেন নিদর্শন যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য…

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর