দিয়াজ হত্যা: চবির সাবেক সহকারী প্রক্টর কারাগারে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া জামিন শেষ হওয়ার পর গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে ফের জামিন চান আনোয়ার। শুনানি শেষে বিচারক মুন্সি মশিয়ার রহমান জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী চট্টগ্রাম বারের সভাপতি রতন কুমার রায় বলেন, আসামিদের কেউ কেউ অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছিল। আদালতের তাদের ছয় সপ্তাহ সময় দিয়েছিল।
“আদালতের নির্দেশে আসামি আনোয়ার হোসেন গতকাল মুখ্য বিচারিক আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত দুই পক্ষের শুনানি শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। শুনানিতে আনোয়ারের একটি ‘ভয়েস রেকর্ড’ বিচারককে শুনানো হয়েছে জানিয়ে আইনজীবী রতন বলেন, “ওই রেকর্ডে প্রমাণিত হয় যে ঘটনার সঙ্গে আসামি আনোয়ারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এতে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাকে কারাগারে পাঠায়।
তবে ওই রেকর্ডের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেনি ।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে এ ঘটনাকে দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা শুরু থেকেই ‘পরিকল্পিত হত্যাকা-’ বলে দাবি করলেও নিহতের তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়।
তার ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও করে পুলিশ।
তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন।
তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য বাতিল কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। আসামি করা তৎকালীন সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকেও।
দিয়াজের মায়ের আপত্তিতে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। গত ৩০ জুলাই দেওয়া প্রতিবেদনে তারা বলেন, দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত রয়েছে।
আনোয়ার হোসেনের জামিন আবেদনের শুনানি চলার সময় মামলার অন্যতম আসামি আলমগীর টিপুর নেতৃত্বে অন্য আসামিরা আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করে।
মিছিলে সিআরবি জোড়া খুন মামলার আসামি সাইফুল আলম লিমনকেও দেখা গেছে।
দিয়াজের মায়ের মামলার পর সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ারকে যখন কারাগারে নিতে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছিল, তখন ‘আনোয়ারের কিছু হলে, জ¦লবে আগুন ঘরে ঘরে,’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
এসময় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী টিপু ও তার সমর্থকদেরকে নাছিরের পক্ষেও স্লোগান দিতে শোনা যায়।