May 9, 2024, 4:49 am

হাতিরঝিলে ভয়ঙ্কর ‘ম্যাজিক মাশরুম’ মাদকসহ গ্রেফতার ২

আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিশেষ প্রতিনিধি:

 

বর্তমান সময়ের আলোচিত ভয়ঙ্কর মাদক ‘ম্যাজিক মাশরুম।’ ম্যাজিক মাশরুম একটি সাইকেলেডিক (হ্যালোসিনোজেন) ড্রাগ। এই ড্রাগটি বিভিন্ন খাবারের সাথে, বিশেষ করে কেক ও চকলেটে মিক্সড অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়াও পাউডার ও ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। এই ড্রাগ ব্যবহারে সেবনকারী নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এমনকি কেউ কেউ উঁচু ভবন থেকে ঝাঁপিয়েও পড়তে পারে। ইহা সেবনে শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মানসিক রোগ যেমন সাইকোসিস ছাড়াও অবিরাম হ্যালুসিনেশনের কারন হতে পারে। নতুনত্বের প্রতি আগ্রহের মাধ্যমে এই ধরণের অপ্রচলিত ড্রাগের চাহিদা তৈরী হয় মাদক সেবীদের।
আলোচিত এই ভয়ঙ্কর মাদক ‘ম্যাজিক মাশরুম’সহ দুই যুবককে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ এর ৫ টি বার উদ্ধার করা হয়, যাতে ১২০টি স্লাইস রয়েছে এবং প্রতিটি বারে ম্যাজিক মাশরুম বা চংরষড়পুনরহ এর পরিমান ২৫০০ এমজি। এছাড়া তাদের কাছ থেকে ২ বোতল বিদেশী মদও জব্দ করা হয়। আটকদের একজন হলো লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানা এলাকার হায়দারগঞ্জের মো. শওকত আলীর ছেলে নাগিব হাসান অর্নব (২৫) এবং অন্যজন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানা এলাকার মনজুর রশিদের ছেলে তাইফুর রশিদ জাহিদ (২৩)। গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রচলন রয়েছে এমন কিছু মাদকের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে আমাদের যুব সমাজ এতে আসক্ত হচ্ছে। এই ধরণের মাদক উদ্ধারে র‌্যাব সচেষ্ট রয়েছে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এর ধারাবাহিকতায় নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) রাত আনুমানিক পৌনে ২’টার দিকে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে নাগিব হাসান অর্নব ও তাইফুর রশিদ জাহিদকে উল্লেখিত মাদকসহ গ্রেফতার করে।
র‌্যাবের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, আটক তাইফুর রশিদ জাহিদ প্রথমে গাঁজা ও মদ্যপানে আসক্ত ছিল। এরপর সে ২০১৯ সালে ক্রমান্বয়ে এলএসডি ও ডিএমটিসহ বিভিন্ন ধরণের সাইকেডেলিক ড্রাগ নিয়মিত সেবন ও বিক্রি করা শুরু করে। ভয়ঙ্কর ‘ম্যাজিক মাশরুম’ ড্রাগ সম্পর্কে তার আগ্রহ সৃষ্টি হলে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ জন্মানো বিভিন্ন মাশরুম এর মধ্যে সাইকেডেলিক বা ম্যাজিক মাশরুম আছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে সে ব্যর্থ হওয়ার পর ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ করতে শুরু করে। সে ইন্টারনেটে এই ড্রাগের উপরে অনুসন্ধান শুরু করে। এভাবে সে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ সর্ম্পকে অনলাইনে জানতে পারে। ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ পাওয়ার পর সে বিদেশে অবস্থানরত তার বন্ধু ও পরিচিত জনদেরকে ম্যাজিক মাশরুম বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুরোধ জানায়। এ সময় কানাডায় অবস্থানরত তার বাল্যবন্ধু গ্রেফতারকৃত নাগিব হাসান অর্নব অধিক মুনাফা লাভের আশায় তাইফুর রশিদ জাহিদের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। তাইফুর নাগিবকে আরো জানায় যে, সে ম্যাজিক মাশরুমের বারগুলো বাংলাদেশে বিক্রির ব্যবস্থাও করবে। গত মে মাসে নাগিব হাসান ম্যাজিক মাশরুমের একটি চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তাইফুর ও নাগিব এই ম্যাজিক মাশরুমের বারগুলি বিভিন্ন স্থানে বিক্রিও করে। অত্যন্ত বিপদজনক এই ম্যাজিক মাশরুম সেবন করে তাইফুর নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং অত্যন্ত বিভৎসভাবে নিজেই নিজের হাতের বিভিন্ন অংশ ধারালো বস্তু দিয়ে কেটে ফেলে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, নাগিব হাসান অর্নব বাংলাদেশে এসএসসি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছে। সে সময় তাইফুর রশিদ জাহিদ তার সহপাঠি ছিল। অর্নব পরবর্তীতে ২০১৪ সালে কানাডায় চলে যায়। বর্তমানে সে কানাডায় একটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন শেষে সেখানে কর্মরত ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, বাল্যবন্ধু তাইফুরের সাথে যোগসাজসে কানাডা থেকে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ ক্রয় করে নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশে চড়া মূল্যে বিক্রি করে।

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর