মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজারঃ
নিরাপদ বিচরণের অভাব ও শিকারিদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার অংশে সংঘবদ্ধ শিকারিচক্র নির্বিচারে অতিথি পাখি নিধণ করছে। বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘সিএনআরএস’ হাওরের বিভিন্ন বিলের পাখি ও মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য স্থানীয় কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে বিলের পাহারাদার নিযুক্ত করেছেন। কিন্তু এসব পাহারাদারের অধিকাংশ ব্যক্তি নিজেরাই অতিথি পাখি শিকার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের সাথে স্থানীয় অসাধু শিকারীরা জাল ও বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন করছে। সরেজমিন হাকালুকি হাওরের চাতলা, বালিজুরি, জলাহ, হাওরখাল, পলোভাঙ্গাসহ কয়েকটি বিলে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গুনা শামুকখোল, পানকৌড়ী, বক, সরালি ছাড়া অন্যান্য প্রজাতির পাখির তেমন সমাগম নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- গত ৩-৪ বছর ধরে পাখি কম আসছে। বিল পাহারার নামে সিএনআরএস’র পাহারাদাররা দেদারছে পাখি শিকার করছে। তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেই স্থানীয় শিকারী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাতের বেলা জাল, বন্দুক ও বিষটোপ দিয়ে পাখি মারছে। হাওরের বোরো চাষীরা জানান, পাখি শিকারিরা দিনে গরু-মহিষ ও হাঁস চড়ানোর নামে ছদ্মবেশে হাওরে ঘোরা ফেরা করে অতিথি পাখির অবস্থান নিশ্চিত করে। পরে সুযোগ বুঝে বিষটোপের মাধ্যমে পাখি শিকার করে বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। তবে এবার শিকারীরা পাখি শিকারের ধরণ পাল্টে ফেলেছে। আগে সন্ধ্যার পর থেকেই ১০-১২ জন করে সংঘবদ্ধ হয়ে পাখি শিকারে নামতো। এবার সংঘবব্ধভাবে বিচরণ না করে দিনের বেলা বিচ্ছিন্নভাবে গিয়ে বিল পাহারাদারের অস্থায়ী বাসায় অবস্থান করে। রাতে তারা জাল দিয়ে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে ভোর হওয়ার আগেই হাওর থেকে বেরিয়ে পড়ে। স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীর সামনে সরকারের অভয়াশ্রম ঘোষিত পলোভাঙ্গা বিলের পাড়ে একটি অস্থায়ী বাসায় ২০-২৫ জন লোক থাকার জিনিসপত্র পাওয়া যায়। বাসার বহিরে বড় ডেগে এক ব্যক্তিকে ভাত রান্না করতে দেখে নাম জিঙ্গেস করলে বলেন নুরুল ইসলাম বাড়ি ইসলামপুর গ্রামে। অন্যান্য লোকজন বিলের অপরপ্রান্তে রয়েছেন জানিয়ে নিজেকে তিনি সিএনআরএসের পাহারাদার দাবী করলেন। বাসার পাশেই বেশ কয়েকটি অতিথি পাখির ডানা ও পশম পড়ে থাকতে দেখা যায়। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী গোলাম রাব্বী ও বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ জানান- হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কোনভাবেই অতিথি পাখি নিধণ করা যাবে না।