ইনস্টাগ্রামে ‘শিশু বিক্রি’, গ্রেপ্তার ৪ ইন্দোনেশীয়
ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে ‘শিশু বিক্রি’র অভিযোগে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ।
একটি পরিবার কল্যাণ সংস্থার ওই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গর্ভবতী নারী, আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজ ও বেশ কয়েকটি বাচ্চার ছবি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অ্যাকাউন্টটিতে একটি টেলিফোন নম্বরও দেওয়া আছে, যেন সম্ভাব্য ক্রেতারা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন, বলছে সুরাবায়ার পুলিশ।
১১ মাস বয়সী একটি শিশু বিক্রির লেনদেন আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিক্রি হয়ে যাওয়া অন্তত একটি শিশুর খোঁজে অভিযান চলছে বলেও নিশ্চিত করেছে তারা।
“যারা শিশুদের দত্তক নিতে চায় তারা ওই অ্যাকাউন্টটি দেখে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করত, ” দেতিক ওয়েবসাইটকে এমনটাই বলেছেন সুরাবায়ার প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল সুদামিরান।
ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্টটিতে পরিবার কল্যাণ সংস্থাটি নানা ধরনের পারিবারিক সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেওয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছিল।
৭০০ অনুসারীর ওই অ্যাকাউন্টে মুখাবয়ব অস্পষ্ট করে রাখা বেশ কয়েকটি শিশুর ছবি, তাদের বয়স, স্থান ও ধর্ম বিষয়ক তথ্যও দেওয়া ছিল।
অ্যাকাউন্টটিতে লেনদেন পরিচালনাকারী ও ক্রেতাদের কথোপকথনের স্ক্রিনশটও ছিল; যার একটিতে সাত মাসের গর্ভবতী এক নারী জানান, পরিবারের সদস্যরা যেন তার গর্ভধারণের কথা জানতে না পারে, তাই চান তিনি।
অন্য এক পোস্টে গর্ভবতী এক নারীর ছবির পাশাপাশি স্থানেরও নাম দেওয়া আছে। সন্তান দত্তক নিতে আগ্রহীদের জন্য ছবির ক্যাপশনে রাখা আছে ফোন নম্বর।
ইনস্টাগ্রামের ওই অ্যাকাউন্টের কোনো পোস্টেই অবশ্য টাকার বিনিময়ে শিশু কেনা-বেচার কথার উল্লেখ নেই।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সুরাবায়া পুলিশ জানায়, ৩ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা ছিল এমন একটি লেনদেন আটকে দেওয়ার পর ‘শিশু বিক্রি’র চেষ্টার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে তারা।
এলএ নামের ২২ বছর বয়সী এক নারী তার ১১ মাস বয়সী শিশুকে বিক্রির চেষ্টা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ তাদের। এজন্য এলএকে ১৫ মিলিয়ন ইন্দোনেশীয় রুপিয়াহ (৯৮৫ মার্কিন ডলার), দালালকে ৫ মিলিয়ন ও ইনস্টাগ্রাম পেইজটির সন্দেহভাজন মালিক অ্যালটন ফিনান্দিতাকে আড়াই মিলিয়ন রুপিয়াহ দেওয়ার কথা ছিল ক্রেতার।
লেনদেনের সঙ্গে জড়িত চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান সুদামিরান। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে শিশু সুরক্ষা আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে; প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ১৫ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে বলেও জানিয়েছেন এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
ইন্দোনেশিয়ায় এর আগেও শিশু চোরাচালানির ঘটনা ছিল, বলেছেন দেশটির শিশু সুরক্ষা কমিশনের (কেপিএআই) ভাইস-চেয়ারম্যান রিতা প্রনওয়াতি।
“ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা বিরল, এটি নতুন উপায়,” বলেন এ নারী।
কোন ধরনের ক্রেতারা এই অ্যাকাউন্ট থেকে শিশু কিনত, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না মিললেও প্রনতি বলছেন, যে ব্যক্তিরা আইনি উপায়ে শিশু দত্তক নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তারাই এভাবে মনোবাসনা পূরণ করছিলেন।
অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের যৌন কাজে ব্যবহারের জন্যও অনেকে দত্তক নেন, আগেও ইন্দোনেশিয়ায় এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে বলে জানান এ সরকারি কর্মকর্তা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ‘শিশু বিক্রির’ এ অভিযোগ বিষয়ে ইনস্টাগ্রামের মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দেয়নি, জানিয়েছে বিবিসি।