May 8, 2024, 7:53 am

সংবাদ শিরোনাম
সরিষাবাড়ীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন রংপুর নগরীরতে ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্যের তদারকি পীরগঞ্জে   নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে মুখ খুলছেনা ভোটার উলিপুরে কয়েলের আগুনে একটি গোয়ালঘর পুড়ে আড়াই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সুন্দরগঞ্জ আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তার সাফল্য রাঙ্গাবালীতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ ১ থেকে ৭ ই মে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পেতে প্রধান মন্ত্রী বরাবরে দরখাস্ত প্রদান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী নিহত শেরপুর ময়মনসিংহ ঢাকা মহাসড়কের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে সুন্দরগঞ্জ আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তার সাফল্য

আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির ৪৩তম মৃত্যু বার্ষিকী

রুহুল আমিন, টাঙ্গাইল :

টাঙ্গাইলে আজ ১৭ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। অসংখ্য মুরিদান ও ভক্তদের কন্ঠে যুগ যুগ জিও তুমি মওলানা ভাসানী শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে মজলুম জননেতার সমাধিস্থল টাঙ্গাইলের সন্তোষের মাজার প্রাঙ্গন।এই মহান নেতার মৃত্যু বার্ষিকীতে আজ নানা পেশার মানুষ উপস্টহিত হয়ে তার রুহের ময়াগফেরাত কামনা ক্রেন,সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে মওলানা ভাসানী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পুস্প স্তবক প্রদান ও মোনাজাতের মাধম্যে দিনের কার্জ্যক্রম শুরু হয়,তার উপস্থিত হন কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও তার সমর্থক গন,টাংগাইল থেকে নির্বাচিত এম পি সানোয়ার হোসেন,গোপালপুর এর এম পি তানভির হাসান ছোট মনি,টাংগাইলের পৌর মেয়য় জামিলুর রহমান মিরন।এর মধ্যেই বি এন পি কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ জেলা বি এন পির নেত্রীবৃন্দ উপস্থীত হয়ে মাজারে পুস্প স্তবক অর্প্ন করে মোনাজাত করেন,তার পর টাংগাইলের বিভিন্ন স্কুল কলেজ, রাজনৈতিক, পেশাজীবি ও অনান্য রাজনৈতীক অঙ্গ সংগঠন পুস্প স্তবক অর্পন করেন’যিনি যৌবনের শুরুতেই গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে চিরদিনের জন্য গৃহত্যাগ করেছিলেন। যিনি ছিলেন সত্যিকারার্থে একজন কিংবদন্তী নেতা।সাধারন মানুষের কাছে যিনি পরিচিত ছিলেন মজলুম জননেতা হিসাবে।অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার ছিল আপসহীন সংগ্রাম।এই সংগ্রাম ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। ছিল পাকিস্তানের স্বেরচারী শাসকদের বিরুদ্ধে।ভাসানী জীবনের সমস্ত সময়ই ব্যয় করেছেন গনমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। মুলত তিনি রাজনীতিতে এসেছেন কংগ্রেস এবং খেলাফত মজলিসের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে। ১৯৪৭ সালের বিভাগ-পূর্ব সময়ে আসামে লাইনপ্রথা-বাঙাল খেদাওবিরোধী আন্দোলন ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ আন্দোলন অত্যাচারী জমিদার শ্রেণীর জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কৃষক নেতা।১৯৩৭ সালে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লিগে যোগ দেন |১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধীদলের গোড়াপত্তন করেন।গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিমলিগ, যার সভাপতি নিযুক্ত হন মাওলানা ভাসানী।যার সাধারন সম্পাদক হলেন শেখ মুজিবুর রহমান।২৩ নভেম্বর পল্টনে জনসভা করলেন।তুলে ধরলেন দক্ষিণ বঙ্গের হাহাকার। জনসভার বিবরণ রিপোর্টারের কলমে জনপদের হাহাকার ততটুকু আসেনি যতটুকু ঐ সময়ের প্রধান কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘সফেদ পাঞ্জাবি’ কবিতায় ধারণ করেছিলেন।রাজনীতি বলতে মাওলানা ভাসানী যা করেছেন, তাঁর বিবেচনায়, তিনি হক্কুল ইবাদ অর্থাৎ সৃষ্টির হক আদায় করা।, মাওলানা ভাসানী সদা-সর্বদাই আক্রমণাত্মক, বিদ্রোহী, বিপ্লব তাঁর ইস্পিত লক্ষ্য।অন্যদিকে ছিলেন খুবই বিনয়ী। যখনই আতিথেয়তার পর্যায় আসত দেখা যেত তার বিনয়একটি আতিথেয়তার বর্ণনা লিখেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ওয়ালিউল্লাহ। ১৯৪৭ সনের ৩ ও ৪ মার্চ আসামের ধুবরিতে মাওলানা ভাসানীর আহুতদু’দিনের সম্মেলনে কোলকাতা থেকে মাওলানার আমন্ত্রণে নামজাদা রাজনীতিক ও সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সম্মেলন শেষে ঐ বিশিষ্ট মেহমানগণ মাওলানার নিকট থেকে বিদায় নিবেন, কিন্তু তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই ভাবলেন সম্মেলনের চাপে নিশ্চয়ই তিনি ক্লান্ত। হয়তো ঘরোয়া পরিবেশে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন ভলান্টিয়ারের চিৎকার শোনা গেল, হুজুরকে পাওয়া গেছে। কোলকাতার মেহমানগণ ছুটে চললেন। ভলান্টিয়ার তাঁদেরকে যেখানে নিয়ে গেলেন, সেখানে পৌছে তাঁদের চক্ষুকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাঁরা দেখলেন সংগ্রামী মাওলানা ভাসানী একটি বড় ইন্দারা থেকে একাই পানি তুলছেন। ৮/১০টি বালতি ভরে আছে পানিতে। মাওলানা মেহমানদের বললেন, তোমাদের গোসলের জন্য পানি তুললাম। কোলকাতা থেকে এসে সম্মেলনের তোড়জোড়ে তোমরা গোসল করতে পারনি। ইন্দারার পানি গোসলের জন্য খুব আরামদায়ক। গোসল কর, খাওয়ার কাজ শেষ কর, তারপর তো যাবে। এ কর্ম ছিল মাওলানা ভাসানীর বিনয়। আমাদেরকেও বলেছেন, “জালিমের মোকাবিলায় তুমি অবশ্যই মারমুখী হবে, উদ্ধত হবে। কিন্তু ক্ষুধার্ত সেই জালিমকে অতিশয় বিনয়ের সাথে আপ্যায়ন করেন”।মানবসেবায় মাওলানা ভাসানির আরেকটা ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়।১৯৩৭ সনে মাওলানা ভাসানীর ব্যক্তি-জীবনে একটি ঘটনা ঘটে। ব্রহ্মপুত্র নদের এক পাড়ে ভাসান চর, অপর পাড়ের এলাকা শালমারা নামে পরিচিত। শালমারা এলাকা আসামের গৌরীপুরের জমিদার প্রভাত কুমার বড়ুয়ার অধীন ছিল। শালমারায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাওলানা ভাসানী একটি হাইস্কুল স্থাপন করেন। তিনি হাইস্কুলটির নামকরণ করেন “প্রজাবন্ধু হাইস্কুল”। এতে জমিদার প্রভাত কুমার বড়ুয়া ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। মাওলানাকে জমিদার ২টি কারণে স্কুল ভেঙ্গে নিতে বলেন। প্রথমত যে জায়গায় স্কুল করা হয়েছে তা তার জমিদারিভুক্ত। মাওলানা ভাসানী জমিদারের অনুমতি না নিয়েই স্কুলের পত্তন করেছেন। দ্বিতীয়ত স্কুলের নামকরণ করেছেন ‘প্রজা’ নামে। রাজার নামে প্রতিষ্ঠান হবে। প্রজার নামে কেন? এই জেদাজেদিতে উভয়ের লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে থেকে থেকে সংঘর্ষ হতে থাকে। এমন দিনগুলোর মধ্যে মাওলানার প্রথম সন্তান দশম বর্ষীয় আজিজ-উল হক খান টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন। ভাসান চরের বাড়ি থেকে প্রতিদিন সকাল বিকাল বেগম ভাসানী খবর পাঠাচ্ছেন, ছেলেটার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেকালে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা ছিল না। মাওলানার মাথায় এ খবর যেন স্থানই পাচ্ছে না। স্কুল রক্ষা করতে হবে। দিবারাত্রি এই এক চিন্তা। যেদিন খবর পেলেন জমিদার প্রভাত কুমার বড়ুয়া তাঁর হাতির দলকে মদ খাইয়ে মাতাল করে স্কুল প্রাঙ্গণে লেলিয়ে দিবেন এবং অনায়াসে স্কুল ভেঙ্গে চুরমার করে যাবে- সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মাওলানার কাছে খবর এল, প্রিয় পুত্র আজিজুল হক খান আর নেই, বেগম ভাসানী দাবি জানালেন, অন্তত ছেলেটার জানাজা ও দাফনকর্ম সেরে যান- তাতেও মাওলানা সায় দিলেন না, বলে দিলেন তোমরা সব সম্পন্ন করে ফেল, স্কুল রক্ষা করার পর আমার যাওয়া হবে।বড়ুয়া জমিদারের মাতাল হাতি বাহিনীর মুকাবিলা করতে সম্মুখ সমরে নেমেছিলেন মাওলানা ভাসানীর ‘রামদা’ বাহিনী। প্রথম সন্তানের কচি মুখখানা দেখা হল না, তবু তো স্কুলটি রক্ষা পেল। “প্রজাবন্ধু” নামকরণও টিকে গেল।তাঁর অনাড়ম্বর জীবন-যাপন সর্বজনবিদিত। ত্যাগ-ই তাঁর জীবন। ভোগ-বিলাস নয়। ব্যক্তি-জীবনে তিনি যুগপৎ সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ বিরোধী রাজনীতিক এবং একই সাথে তিনি আধ্যাত্মিক গুরু যিনি শোষণ ও জুলুমকে কোনদিন আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি।১৯৭৬ সালে ১৭ নভেম্বর এই মহান মজলুম নেতার সংগ্রামী মহাকাব্যের শেষ অধ্যায় রচিত হয়।

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৭ নভেম্বর ২০১৯/ইকবাল

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর