ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরে আটকে থাকা ওষুধ ও খাবারের দু্টি চালান জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের অনুমতি দিতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। নাহলে ১৫ দিন ধরে চলা অবরোধের কারণে প্রায় ১০ হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ইয়েমেনে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বয়ক জেমি ম্যাকগোল্ডরিক বলেন, ‘অবস্থা এখন খ্বুই খারাপ। ত্রাণের দুটি চালানের মধ্যে একটিতে কলেরার ওষুধ, অন্যটিতে চাল ও শস্যসহ খাবার রয়েছে।
সম্প্রতি ইয়েমেন থেকে সৌ্দি আরবের রাজধানী রিয়াদকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হুথি বিদ্রোহীরা। আকাশেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করলেও সৌদি সরকার অভিযোগ করে ইরানের সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়েই হামলা চালিয়েছে হুথিরা। এরপর ইয়েমেনের সব বন্দরে অবরোধ আরোপ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের যুক্তি ইরানের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতেই তারা এই অবরোধ আরোপ করেছে। তাদের দাবি, ত্রাণের আড়ালে ইয়েমেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাচার হচ্ছে।
তবে ম্যাকগোল্ডরিক দাবি করেন, ‘অস্ত্র পাচারের কোনও প্রমাণ নেই। ত্রাণের মধ্যে কখনও অন্য কিছু পাওয়া যায়নি। জাতিসংঘের ফ্লাইটগুলোরও একই অবস্থা।’
এসময় তিনি ত্রাণ সরবরাহের ওপর থেকে অবরোধ দ্রুত তুলে নিতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবকে জানাচ্ছি, যদি বাণিজ্যিক চালানগুলো নিয়ে সন্দেহ থাকে, তাহলে তা আলাদা করে দিন। কিন্তু সব চালান বন্ধ করে দেবেন না।’
কোনও পক্ষ নিচ্ছেন না দাবি করে ম্যাকগোল্ডরিক বলেন, ‘সৌদি আরবে মিসাইল হামলার পর আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। তবে এর বিপরীতে সংকটের মাত্রাটা বিবেচনা করতে হবে। এখানকার প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষ মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল, ৪ মিলিয়ন মানুষের জন্য খাবার পানি ও জ¦ালানি সরবরাহ করা প্রয়োজন। আর এ কারণে এখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই অবরোধ এখানকার মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। কলেরা নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যাভাব দূর করতে আমাদের এতোদিনের প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। অবরোধের কারণে দেশটিতে জ¦ালানির দাম অনেক বেড়ে গেছে। পাঁচটি বড় শহরে পাম্প স্টেশন না চলায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।’
ম্যাকগোল্ডরিক বলেন, ‘ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে অনেক মানুষ মারা গেছে।’ এখনই টিকা দিতে না পারলে আরও অনেকে মারা যাবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে এর আগে যুক্তরাজ্যের সাবেক কেবিনেট মন্ত্রী অ্যান্ডু মিচেল সৌদি আরবের এই কৌশলকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এ সিদ্ধান্ত দুর্ভিক্ষ ডেকে আনছে। তিনি সৌদি আরবকে সহায়তা করায় ব্রিটেনকে কৌশলগত ব্যর্থতার কারণে দ-িত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সৌদি আরব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রিয়াদ ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরগুলোর ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিলেও হোদেইদাহসহ হুতি নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চলের বন্দরগুলোর ওপর তা জারি রেখেছে। আর এসব বন্দর দিয়েই প্রায় ৭০ শতাংশ ত্রাণ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সহায়তায় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে বোমা হামলা চালাচ্ছে। প্রায় তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সৌদি আরব ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এতে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের মানুষের মৃত্যু হয়েছে।