May 13, 2025, 11:33 pm

সংবাদ শিরোনাম
ভারতের পেট্রাপোলে দু’দেশের বিজিবি-বিএসএফ’র সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত ভারতের পেট্রাপোলে দু’দেশের বিজিবি-বিএসএফ’র সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত বাগানবাজারের কৃতি সন্তান নায়েক রাসেলের পুলিশ ব্যাজ ও সনদপত্র অর্জন অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিসিইউ শার্শার চাঞ্চল্যকর সুমন হত্যা মামলার আসামী জহিরুল আটক লামায় দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাজার সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাটে চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদ, মূলহোতা খাজের আলী যশোরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আটক ৬ বেনাপোলে সড়ক দুর্ঘটনায় মটরসাইকেল শ্রমিকের মৃত্যু পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নিরাপদ ও টেকসই যানবাহনের লক্ষ্যে মত বিনিময় সভা

লোকসানের গ্যাঁড়াকল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সাকারি চিনিকলগুলো

লোকসানের গ্যাঁড়াকল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সাকারি চিনিকলগুলো

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

নানা আর সমস্য অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা, বরং প্রতিবছরই তাদের লোকসানের আকার বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। ভবিষ্যতে চিনি বিক্রি করে তারা লাভ করবে, এমন আশাও নেই। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) একটি সূত্রে জানা গেছে, বাজারদরের চেয়ে সরকারি চিনির উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়া প্রতিবছর এ লোকসানের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে বিএসএফআইসির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এরপরের বছর লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে এনে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে লাভের মুখ দেখে চিনিকলগুলো। এরপর লোকসানের পাল্লা শুধু ভারিই হয়েছে। পরের বছর ১০৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার লোকসান হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নীট লোকসান ছিল ৫৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা কমে প্রায় ৪৪০ কোটি টাকায় নেমে আসে। কিন্তু অংকের হিসেবে সংখ্যাটি মোটেও ছোট নয়। সব মিলিয়ে ১৬ বছরে লোকসানের পরিমাণ ৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর প্রায় সব কটিই ভর্তুকির মাধ্যমে চললেও চিনি শিল্প ভর্তুকির বাইরে। অর্থমন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাগুলোকে ভতুর্কি দেয়া হয় ২ হাজার ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। আর যেসব সংস্থায় সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর বেশির ভাগই বাণিজ্যিক। সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই সংস্থাগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে। তবে ভর্তুকির বাইরে রাখা হয়েছে কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্প বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থাকে। এই শিল্পের সাথে লাখ লাখ চাষি জড়িত। আছে ২০/২২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার। বিশ্বের সেরা ও মানসম্পন্ন চিনি উৎপাদন করছে এই সংস্থাটি যদিও চাহিদার তুলনায় কম। কাঁচামালের সঙ্কটসহ নানা কারণে এই সংস্থাটি চাহিদার তুলনায় চিনি উৎপাদন করতে পারছে না। তারপরও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে না। দিনদিন রাষ্ট্রয়াত্ব এই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমাণ বাড়তেই আছে। দুইটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর এখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বিএসএফআইসির আওতায় চিনিকল আছে ১৫টি। এসব চিনিকলের তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে, নয়টি পাকিস্তান আমলে ও তিনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে। এদের মোট উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ২ লাখ ১০ হাজার টন। সরকারি হিসাবে দেশে এখন বছরে ১৪ লাখ টন পরিশোধিত চিনির প্রয়োজন হয়। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারি চিনিকলে চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র ৫৮ হাজার টন চিনি। বিপরীতে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনিকলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল। এ মিলের লোকসান প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া কুষ্টিয়া সুগার মিল ৩০ কোটি টাকা, ফরিদপুর সুগার মিল ২৮ কোটি, জিল বাংলা সুগার মিল ২১ কোটি, পাবনা সুগার মিল ৩২ কোটি, মোবারকগঞ্জ সুগার মিল ১৬ কোটি, নাটোর সুগার মিল ৩৩ কোটি, রাজশাহী সুগার মিল ৩৪ কোটি, জয়পুরহাট সুগার মিল ২৬ কোটি, রংপুর সুগার মিল ২৮ কোটি, শ্যামপুর সুগার মিল ১৫ কোটি, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল ২৬ কোটি, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল ৩১ কোটি এবং পঞ্চগড় সুগার মিল ২৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এদিকে, বিএসএফআইসি’র অধীনস্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে বেশিরভাগই দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এগুলোর উন্নয়নও জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ ছাড়া আখচাষ বৃদ্ধি, আখের দাম বৃদ্ধি করাও দরকার বলে মনে করছেন। তবে অনেকটা আশার কথা হলো যে, এই সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্পের উন্নয়নে ইতোমধ্যে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ ও পরিকল্পনায় আছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহারের মাধ্যমে কো- জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চিনিকলের নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি সুগার রিফাইনারিও স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে ‘র’ সুগার হতে হোয়াইট সুগার উৎপাদন করে দেশে চিনির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখা হবে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত চিনিকল ও ডিস্টিলারি কারখানা কেরু এ- কোম্পানি (বিডি) লি.। এর আধুনিকীকরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিএমআর প্রকল্প। এতে ৭৩ বছরের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিনিকলটির বর্তমান আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষিত হবে। এছাড়ও সাম্প্রতিক অন্যান্য যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা হলো সনাতন পুর্জি প্রথার পরিবর্তে একটি মোবাইল এসএমএস’র মাধ্যমে সকল আখচাষির কাছে মিলে আখ সরবরাহের আগাম বার্তা পৌঁছে দেয়া (ই-পুর্জি)। তবে আশার কথা হলো, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা দূর করে দেশের চিনিকলগুলোকে লাভজনক করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসএফআইসি। এজন্য সরকার দেশের ১৫টি চিনিকলের আধুনিকায়ন ও বহুমুখীকরণে সংস্কারে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর