June 24, 2025, 12:59 am

সংবাদ শিরোনাম
সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনী-অস্ত্রধারীদের গোলাগুলি, ৪ জন আটক যশোরে মাদক মামলায় বেনাপোলের দু’জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ঢাকার কামরাঙ্গীচর যেন অনিয়মের দূর্গ সিরাজগঞ্জে কাব স্কাউটদের কাব কার্ণিভাল অনুষ্ঠিত বেনাপোল কাষ্টমস হাউজে ফের কলমবিরতি চলছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে প্রতিবেশীর ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ৬টি গাছের নিচে মৃত্যু ঝুঁকিতে সাংবাদিক পরিবারের বসবাস, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা! ইউএনও’র তদন্ত ‘দায়সারা’ ভারতীয় পন্যসহ ৩ জনকে আটক করেছে শেরপুর ফাঁড়ি পুলিশ ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোলে আটক “তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান” আনিছুর রহমান গৌরনদীতে ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজে পারাপার এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়মুখী মানুষের চরম দুর্ভোগ বামনায় নবগঠিত গভনিং বডির অভিষেক অনুষ্ঠান

ভোট এলেই আতঙ্কে থাকে বরিশাল-১ আসনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

ভোট এলেই আতঙ্কে থাকে বরিশাল-১ আসনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ততই অজানা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে আগৈলঝাড়া উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দা ও ভোটারদের মাঝে। ২০০১ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে নির্যাতনকারীরা এখন আওয়ামী লীগের যোগদিচ্ছে। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অংশ হওয়ায় নির্বাচন পরবর্তী ওই সকল হাইব্রিড নেতাকর্মী ও বিএনপি’র হামলার আশংকায় চরম উৎকণ্ঠা মধ্যে রয়েছে উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গ্রামের ভোটাররা। ২০০১ সালে জামাত জোটের জুলুম নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত ‘মানবতার বিরুদ্ধি অপরাধ’ তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ১০বছর পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে। ক্ষোভ রয়েছে নির্যাতীত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের মধ্যেও। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসিন্দরা বলেন, ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আগৈলঝাড়ার সংখ্যালঘু জনপদের লোকজনের উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতণ। ওই নির্যাতন থেকে বাদ পরেনি আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরাও। তাদের সরকারী রাস্তা দিয়ে হাটতে গেলে, হাট-বাজারে গেলেও দিতে হয়েছে চাঁদা। এক কথায়, আওয়ামী লীগের লোকজন ছিল ‘নিজ ভূবনে পরবাসিন্দা’। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রাজিহার গ্রামের কমলা রাণী রায় ২০০১ সালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওই বছর ৪ অক্টোবর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় তার বসত ঘরসহ একই বাড়ির ১৮টি বসত ঘর, একই এলাকার বাবুলাল মুন্সির ঘর, টিভিসহ আসবাবপত্র কুপিয়ে ভাংচুর করে স্থানীয় বিএনপি জামাতের ক্যাডাররা। হামলা চালানো হয় বাড়ির নারী ও পুরুষদের উপর। একইভাবে রাজিহার ছাড়াও উপজেলার রামানন্দেরআঁক, বাশাইল, গোয়াইল, গৈলা, পতিহার, কোদালধোয়া, বাকাল, বাটরা, বাহাদুরপুর, আমবাড়ী, ফেনাবাড়ী, নওপাড়া, জলিরপাড়, বড়মগরা, সরবাড়ী, জোবারপার, পাকুরিতাসহ পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার চাঁদশীসহ বিভিন্ন গ্রামের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামের লোকজনের উপর তান্ডব চালায় তারা। তাদের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত রামশীল গ্রামে (প্রধান মন্ত্রী নির্বাচনী এলাকা)অন্তত পঞ্চাশ হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আশ্রয় নেয়। ২০০১ সালের হামলাকারীরা এখন আওয়ালীলীগ হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে নৌকায় ভোট চাইছে। নির্বাচনের পর ওই হাইব্রিড নেতা কর্মীদের দ্বারা পুণঃরায় আক্রান্তর ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। জোট ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছিলেন ওই বাড়ির রেভা রানী রায়, বিধান রায় খগেন রায়ের স্ত্রী বেলা রায় ও হরিহর রায়ের স্ত্রী অনিমা রায়। তাদের হামলার স্বীকার হয়ে দুই সন্তান নিয়ে রাতের আধাঁরে পানি সাঁতরে রামশীল গ্রামে আশ্রয় নেয় তারা। বেলা রায় ও অনিমা রায় আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের পরিবার নিয়ে আতংকের কথা জানালেন। জামাত বিএনপি জোট ক্যাডারদের তান্ডবের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হলে সারা দেশে সমালোচনার মুখে পরে ক্ষমতাসীন সরকার বিএনপি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তৎকালীন স্বরা’্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী জনসভা করতে বিএনপি জোটের মনোনীত নবনির্বাচিত এমপি জহির উদ্দিন স্বপনকে সাথে নিয়ে ২০০১ সালের ১২ই অক্টোবর আগৈলঝাড়ায় আসতে বাধ্য হন। ওই দিন উপজেলার ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমি মাঠে স্বরা’্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠিত জনসভায় এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিল নির্যাতিত ইউপি সদস্য কমলা রাণী রায়। কমলা রানীকে বক্তব্যর জন্য দেয়া হলে কমলা মঞ্চে উঠেই ‘হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেন।’ নির্যাতীত কমলা উপর ও এলাকায় ঘটে যাওয়া বিএনপি ক্যাডারদের তান্ডবের চিত্র জনসভায় তুলে ধরেন। কমলার প্রতিবেশী রাজিহার গ্রামের ইউনুচ হাওলাদারের স্ত্রী অজিফা খাতুন বলেন, তার ছেলে আাওয়ামীলীগ করার কারণে বাড়ি থেকে তাকে ধরে নিয়ে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করে ফেলে রাখে তারা। একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা কালাম হাওলাদার জানান, বিএনপি জোট ক্যাডারদের নির্যাতনে তিনি প্রাণ ভয়ে পার্শ্ববর্তী এক হিন্দু বাড়িতে আত্মগোপন করেন। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোটের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধরে এনে বাজারে বসে মারধর করে। গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ বরিশাল -১ আসনে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদী উপজেলার সরিকল গ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ২০০১ সালে নির্যাতনের ১৭ বছর পার ঘটনার দায় স্বীকার করে সেই সময়ের এমপি হিসেবে দুঃখ প্রকাশ করে নির্যাতিত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। ২০০২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাস জুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের অব্যাহত ঘটনা ঘটে। এর কারণ উদ্ঘাটন ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি রিট করেছিল। ওই রিটের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ২০১০ সালে গঠিত হয় তদন্ত কমিশন। আদালতের নির্দেশে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল ‘‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন, সদস্য ও স্বরা’্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মনোয়ার হোসেন আখন্দ, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মীর শহীদুল ইসলাম বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে নির্যাতিতদের কাছ থেকে বর্ননা ও ঘটনার লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। আগৈলঝাড়াস্থ জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ তদন্ত কমিশনে শুধু আগৈলঝাড়াতেই ৫৮৮টি অভিযোগ জমা পরেছিল। অ’ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোটের ক্যাডারদের হাতে আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের ৫০টি, রামানন্দেরআঁক গ্রামের ২৫টি, বাহাদুরপুর গ্রামের ৩০টি, বাকাল গ্রামের ২৫টি, পতিহার গ্রামের ৩০টিসহ অসংখ্য পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। জোট ক্যাডারদের হিংসা থাবা থেকে এসব এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের রক্ষা করতে অধিকাংশ মেয়েকে গোপনে ভারতেও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, শুধু সংখ্যালঘু নয় সকল ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। নির্বাচন পরবর্তি কোন সহিংসতার আঁচ নেই বলে জানান তিনি, যে কোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুলিশ বাহিনীকে সকলের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছে। বরিশাল -১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাতির পিতার ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ -এমপি বলেন, সময় পাল্টে গেছে। ২০০১ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তির সুযোগ দেশে আর নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রয়েছে। তারপরেও প্রশাসন তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর