কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার
কমলের নির্বাচনী পথসভায় একজন বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে দিয়ে মোনাজাত করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে দুবাই প্রবাসি সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা মারা গেছেন। দাবি করা হচ্ছে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাজউদ্দিন রাসেল নামের ওই যুবক মারা যান। ওই সময় আরও অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।গত ২৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে এক পথসভায় এই ঘটনা ঘটে।নিহত তাজউদ্দিন রাসেল রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি সাইমুম সরওয়ার কমলের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন। তার পারিবারিক সূত্র জানান, মাত্র তিনদিন আগে রাসেল দেশে এসেছেন।স্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের মৌলভীকাটা বাজারে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে মঙ্গলবার রাতে এক পথসভার আয়োজন করা হয়। ওই পথসভায় কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মাওলানা মোকতার আহমদকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আসতে বাধ্য করা হয়। ওই পথসভায় তাঁকে বক্তব্য দেয়ারও অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। পরে পথসভা শেষে মাওলানা মোকতার আহমদকে অন্তত মোনাজাত করার অনুরোধ করা হয়।সূত্রগুলোর দাবি, মাওলানা মোকতার আহমদ মোনাজাতে বলেন, ‘আমি বেশি চাপের মধ্যে আছি। এই বুড়ো বয়সেও আমাকে মিথ্যা মামলার আসামি হতে হয়েছে। ঢাকায় গিয়ে জামিন নিয়ে এসেছি। আপনারা যাকে ভালো মনে করবেন তাকেই আপনারা ভোট দেবেন!’সূত্র মতে, মাওলানা মোকতার আহমদ মোনাজাতে সাইমুম সরওয়ার কমলের নাম না বলায় তাঁর সমর্থক কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তারা মাওলানা মোকতার আহমদকে চরম ভাবে নাজেহাল করেন। ওই সময় পথসভায় থাকা মোকতার আহমদের নিকটাত্মীয়রা ক্ষিপ্ত নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায়।প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সাইমুম সরওয়ার কমলের সাথে থাকা অস্ত্রধারি বডিগার্ড ওই সময় দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুইপক্ষের সংঘর্ষ ব্যাপক আকার নেয়। এক পর্যায়ে তাজউদ্দিন রাসেল আহত হন। তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মারা যান।তবে রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেও তার শরীরে গুলির আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর সাংবাদিকদের জানান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তাজউদ্দিন রাসেলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ওই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।তিনি জানান, আহত ৫ জনের মধ্যে দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।তবে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, তাজউদ্দিন রাসেলের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন, তারা অসুস্থ অবস্থায় রাসেলকে পেয়েছেন। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার বলেছেন, তিনি মারা গেছেন।রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর সাংবাদিকদের জানান, বুধবার দুুপুর পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু হওয়ার পর রামু থানায় হওয়া নাশকতা মামলায় মাওলানা মোকতার আহমদকেও আসামি করা হয়। ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন তিনি।স্থানীয় সূত্র মতে, তিনি নির্বাচনী কর্মকান্ডে কারও পক্ষেই কাজ করছিলেন না। বরং ‘মিথ্যা মামলা’য় আসামি হওয়ায় তিনি চরম ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৭ ডিসেম্বর ২০১৮/ইকবাল