পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভূঁইয়ার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয়
বিএনপি নেতাকর্মীরা। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় পোড়ানো, নেতাকর্মীদের উপর হামলা সহ বিভিন্ন নাশকতা কর্মকান্ডে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। নাশকতা ও সহিংসতা কর্মকান্ডে জড়িত এবং এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল পরবর্তী গত মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ১০টি নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুননে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী। পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের অফিসে ঢুকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয় পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমকে। তাছাড়া অহরহ নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের অফিস পুড়ানো ও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়টি মামলা রুজু হয়। এসব মামলায় ৩৭২ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও ১২২-১৫৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়। এসব মামলায় পুলিশ একজনকেও গ্রেপ্তার করেনি। এমনকি গত মঙ্গলবার বিকেলে পেকুয়া উপজেলা সদরে পুলিশের সামনে নাশকতার সব মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে মিটিং মিছিলে অংশ নেন। এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও চিত্র ও ছবি প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত আছে। এতে দেখা যায় পেকুয়া থানার ওসির গাড়ি সড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অন্য পাশে নাশকতা মামলার আসামি বাহাদুর শাহ, ইকবাল হোছাইন, শাহনেওয়াজ আজাদ মেম্বার, মোসলেহ উদ্দিন, কামরান জাদিদ মুকুট, ইউছুফ রুবেল, হারুনর রশিদ (বিলহাছুরা), মো. ইসমাইল মেম্বার, মনিরউদ্দিন শাকিল সিকদার, সাজ্জাদ মেম্বার, হাসমত আলী, ফরহাদ হোছাইন, সোহেল আজিম, মাহবুবুল করিম মেম্বার প্রকাশ্যে কয়েক হাজার বিএনপি নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, পুলিশের সামনে কি করে নাশকতা মামলার আসামিরা মিছিল করে? পুলিশ কেন একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারলো না?আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মামলা দায়ের করার পর পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশ কাউকেই ধরতে পারেনি। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরতে না পারার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে যাওয়ার আগে ফোন করে তাঁদের সর্তক করে দেয়। এর ফলে তাঁরা সটকে পড়েন। তাই চরম নিরাপত্তাহীনতায় নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। একইসাথে বিএনপি নেতাকর্মীরা ধারাবাহিক হামলা, অগ্নিসংযোগ সহ প্রচারণা কাজে বাধা অব্যাহত রেখেছে।আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভুঁইয়ার এক ভাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের নেতা। তাঁর প্রভাব খাটিয়ে পেকুয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাঁবু করে রেখেছেন তিনি। এছাড়াও পেকুয়া থানায় যোগদানের পর অতিউৎসাহী হয়ে আইওয়াশের অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রুজু করলেও বিএনপির কোনো নেতাকে তিনি গ্রেপ্তার করেননি। মামলার ভয় দেখিয়ে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকাও আদায় করেছেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচন মৌসুমের কারণে ওসির এমন বির্তকিত কর্মকান্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ নিরব রয়েছে। নির্বাচনের পরই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিষয়ে তাঁর ভুমিকা ও বির্তকিত কর্মকান্ড নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে কথা বলা হবে।তিনি আরো জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সালাহ উদ্দিন আহমদের কালো টাকায় চুপসে গেছে পেকুয়া থানার ওসি। ৩৫ লাখ টাকা লেনদেনের খবর চাউর হওয়াতে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে পেকুয়ার তৃণমূল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। আর থানা পুলিশের কৌশলী এ আচরণে ক্ষুব্ধ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বারেক বলেন, কক্সবাজার-১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাফর আলমের নির্বাচনী প্রচারণা বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। পেট্রোল বোমা হামলা, আগ্নিসংযোগ ও মারধরের শিকার হয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আশানুরূপ মিলছে না ‘আইনি সহায়তা’। এসব নাশকতা ঘটনার মূলহোতারা প্রকাশ্যে ঘুরে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচন বানচাল করতে পেকুয়ায় ব্যাপক নাশকতা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
উজানটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম বলেন, উজানটিয়া ইউনিয়নের করিমদাদ মিয়া ঘাট এলাকায় নৌকা প্রতীকের একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে আগ্নি সংযোগ ও গুধার পাড় এলাকায় অপর একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মী কর্তৃক হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় ছাত্রলীগের তিন নেতা আহত হয়েছে। কাফি নামের এক ছাত্রলীগ নেতার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেছে হামলাকারীরা। এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এসব মামলার কোন আসামী আটক করেনি পুলিশ। তবেঁ এসব মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং সহ নির্বাচনী প্রচারণায় সরব থাকলে পুলিশ ‘খুঁজে’ পাচ্ছেনা তাদের। তাই চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
টইটং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের দুটি স্থানে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় পেট্রোল বোমা ব্যবহার করেছে হামলাকারীরা। ১১টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও মূলহোতাদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে না পারায় তারা দ্বিগুণ উৎসাহে আরো বড়সড় সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাহাড়ে অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা সহ আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাই অতিসত্বর সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবী জানাচ্ছি।পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম জানান, তাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনি নিজে বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় সাতজনকে আসামী করা হলেও কোন আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।