June 24, 2025, 12:57 am

সংবাদ শিরোনাম
সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনী-অস্ত্রধারীদের গোলাগুলি, ৪ জন আটক যশোরে মাদক মামলায় বেনাপোলের দু’জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ঢাকার কামরাঙ্গীচর যেন অনিয়মের দূর্গ সিরাজগঞ্জে কাব স্কাউটদের কাব কার্ণিভাল অনুষ্ঠিত বেনাপোল কাষ্টমস হাউজে ফের কলমবিরতি চলছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে প্রতিবেশীর ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো ৬টি গাছের নিচে মৃত্যু ঝুঁকিতে সাংবাদিক পরিবারের বসবাস, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা! ইউএনও’র তদন্ত ‘দায়সারা’ ভারতীয় পন্যসহ ৩ জনকে আটক করেছে শেরপুর ফাঁড়ি পুলিশ ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোলে আটক “তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান” আনিছুর রহমান গৌরনদীতে ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজে পারাপার এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়মুখী মানুষের চরম দুর্ভোগ বামনায় নবগঠিত গভনিং বডির অভিষেক অনুষ্ঠান

মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনে ভয়াবহ স্থলমাইনে শহীদ হয়েছিলেন একঝাঁক বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ

২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের স্থানীয় শোক দিবস। আজ থেকে ৪৭ বছর আগে- ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর সমগ্র দেশে পত্পত্ করে উড়ছিল বিজয়ের পতাকা। এই দিনে মৌলভীবাজারে শহীদ হয়েছিলেন একঝাঁক বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা। এ ঘটনাটিই ১৯৭১ সালের সর্বশেষ ট্রাজেডি এবং এ শহীদরাই সর্বশেষ শহীদ। তাই ১৯৭১ সালে মৌলভীবাজারবাসীর জন্য সবচেয়ে শোকের, সবচেয়ে বেদনা-বিধুর এই দিনটিকে স্থানীয় শহীদ দিবস ঘোষনা করা হয়। তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমার বিভিন্ন রনাঙ্গন থেকে দলে দলে ফিরে আসছিলেন বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বিশ্রাম ও সম্মানী গ্রহনের জন্য অবস্থান নিচ্ছিলেন মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পে। ক্যাম্পের ভিতরে অনেকে ঘুমুচ্ছিলেন, অনেকে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন, অনেকে গল্প-গুজব করছিলেন, অনেকে আনন্দ-উল্লাস করছিলেন, অনেকে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, অনেকে বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অনেকে রনাঙ্গন থেকে মুক্তিযোদ্ধাগন কর্তৃক ফেরত নিয়ে আসা অস্ত্র-গোলাবারুদ-মাইন-ডিনামাইড ইত্যাদি গুছিয়ে রাখছিলেন, অনেকে প্রাকৃতিক কর্ম সেরে নিতে ক্যাম্পের বাইরেও যাওয়া-আসা করছিলেন। এছাড়াও, যুদ্ধের তান্ডবে শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নেয়া লোকজনও শহরে ফিরছিলেন। এমনি অবস্থার মাঝে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ৯ টার মধ্যে আকষ্মিকভাবে একসাথে একাধিক স্থলমাইন বিষ্ফোরিত হয়েছিল প্রলয়ংকরী বিকট শব্দে। নিমিষেই ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়ে পড়েছিল ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত, বৃটিশ আমলে নির্মিত মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল টিনশেড ভবন। ক্যাম্পে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে পেঁজা তুলার মত উড়ে গিয়েছিল। বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, বিদ্যালয়ের চারপাশের এলাকা ও বিদ্যালয়ের বিশাল খেলার মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল মুক্তিসেনাদের ছিন্নভিন্ন মাংসপিন্ড। সে এক অভূতপূর্ব মর্মান্তিক দৃশ্য- যা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। এ দূর্ঘটনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। দূর্ঘটনার সময় ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত যেসব মুক্তিযোদ্ধা আহত হলেও বেঁচে গিয়েছিলেন এবং এখনও যারা বেঁচে আছেন, তাদের কয়েকজনের মতে- উক্ত স্থলমাইন দূর্ঘটনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দু’শতাধিক। কারো কারো মতে এ সংখ্যা আরও বেশী। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। এ ভয়াবহ দূর্ঘটনায় শহীদদের মধ্যে মাত্র ৩১ জনের নাম পরিচয় জানা গেলেও, অনেক শহীদের নাম পরিচয় আজও অজানা রয়ে গেছে। দু’একজন শহীদের নাম পরিচয় জানা গেলেও, তাদেরকে শহীদের তালিকায় সংযোজন করা হয়নি বলে অভিযোগ ছিল। তবে, এ ব্যাপারে আর কিছু জানা যায়নি। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন আজও বেঁচে আছেন সেই স্থলমাইন দূর্ঘটনার ভয়াল স্মৃতির জীবন্ত স্বাক্ষী হয়ে। স্মরনকালের এ ভয়াবহ স্থলমাইন দূর্ঘটনার পর মিত্রসেনা, মুক্তিসেনা ও স্বেচ্ছাসেবকরা সারাদিন ধরে খুঁজে খুঁজে কুড়িয়ে জড়ো করেছিলেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মাংসপিন্ডগুলো। মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আজিজ আহমদ বেগ নিজেই মাইকিং করে জানাযা ও সৎকার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের জন্য মুসলমান ও হিন্দু জনসাধারনের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঐদিনই গোধুলী লগ্নে বিদ্যালয় মাঠের একেবারে পূর্ব-দক্ষিন কোনে মাংসপিন্ডগুলোকে সমাহিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এসব শহীদদের সমাধিস্থলের সম্মুখভাগে নির্মান করা হয় শহীদ মিনার। এ শহীদ মিনারটিই মৌলভীবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এরপর এ শহীদ মিনারের পূর্বদিকে একে একে স্থাপন করা হয় এসব শহীদদের নামাঙ্কিত দুটি স্মৃতিস্তম্ভ। মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের একেবারে পূর্ব-দক্ষিন কোনে, বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ দুটির পৃষ্টদেশে দৃশ্যমান পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা প্রাচীর ঘেরা স্থানটি, স্থলমাইন দূর্ঘটনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরই সমাধি। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর উপর বাঙ্গালীদের সর্বপ্রথম হামলার ঘটনাস্থল যেমন এই মৌলভীবাজার তেমনি, এই মৌলভীবাজারই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুক্তিসেনা শহীদ হবার সর্বশেষ ঘটনাস্থল।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৪ ডিসেম্বর ২০১৮/ইকবাল

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর