রড ও অ্যাঙ্গেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বাড়ছে নির্মাণ ব্যয়
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে অন্যতম নির্মাণ সামগ্রী রড় ও অ্যাঙ্গেলের দাম। আর হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের মে-জুন মাসে ভ্যাট ইস্যুতে শুরু হয়েছিল রডের দাম নিয়ে জটিলতা। ভ্যাট বাড়ার খবরে সে সময় রডের দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু পরে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরেও কমেনি রডের দাম। এবার এর সঙ্গে আরো তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে নির্মাণের অন্যতম প্রধান এই উপকরণটির দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণেই রডের দাম বেড়েছে। এমনকি দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দেশের বাজারে গত দুই মাসে রডের দাম ১০ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ হাজার টাকায়। কোনো কোনো ব্যবসায়ী রডের দাম বৃদ্ধির জন্য গ্যাস সংকটকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে ম্যানুয়াল (হস্তচালিত) পদ্ধতির মিল কমে গেছে। এসব মিলে দৈনিক ৪০-৫০ টন রড উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশে অধিকাংশই অটো মিল। এসব মিলে গ্যাসসঙ্কটের কারণে বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে দাম। সামনে চাহিদা বাড়লে বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী হবে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রডের দাম বেড়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে রডের দাম বেড়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন. আন্তর্জাতিক বাজারে যে স্ক্র্যাবের দাম আগে ছিল ২৭০-৩০০ ডলার এখন সেটা হয়েছে ৩৫০-৩৮০ ডলার পর্যন্ত। আবার জাহাজ ভাঙা থেকে যে স্ক্র্যাব দেশের ভেতর থেকে সংগ্রহ করা হয় সেটার দাম কমে একসময় এসেছিল ২৪ হাজার টাকায়। এখন সেটা আবার ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে রডের যে দাম বেড়েছে সেটা ১ মাস আগে। কাঁচামালের দাম আরো আগে বাড়লেও সেটাই এখন ধাপে ধাপে সমন্বয় করা হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষার সিজন শেষ হলেই রডের দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, এখন রডের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। কারণ আগে খরচের তুলনায় দাম কম ছিল। কিন্তু কাঁচামালের দাম যে হারে বেড়েছে সেটা সামনে রডের দাম আরো বাড়িয়ে দেবে। জানা গেছে, প্রায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুম শেষে ঘর-বাড়ি তৈরিসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে গতি আসে। প্রচুর পরিমাণ রড-সিমেন্টের প্রয়োজন হয়। আর চাহিদা বেশি থাকায় এ সময়ে সবাই নির্মাণ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে রডের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রডের দাম আরো বাড়বে। এবার অতি বর্ষণের কারণে বাড়িঘর নির্মাণকাজ অনেকটা বন্ধ ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে অনেকেই বাড়িঘর নির্মাণ শুরু করছে বা করবে। আর এ সয়টাতেই বাড়ানো হয়েছে রডের দাম, যা নির্মাণকাজে ব্যাঘাত তৈরি করে। রডের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন জানান, বাজেটের পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে রডের দাম বাড়িয়েছিলেন। আমরা মিলমালিকেরা বাড়াইনি। অবশ্য বাড়তি দাম পরে সংশোধন হয়। তবে মাস দুয়েক আগে বিশ্ববাজারে হঠাৎ করেই রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি ৪০-৪৫ ডলার বেড়ে যায়। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজটের কারণে প্রতি টনে খরচ বেড়েছে ৩০-৩৫ ডলার। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে গ্যাস-সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দেড় মাস ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে গেছে। এসব কারণেই রডের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, দেশের ভেতরে আগে যেখানে একেকটি ট্রেইলারে ৩০-৩৫ টন পণ্য পরিবহন করা যেত, এখন ২০ টনের বেশি যাচ্ছে না। এই জন্যও রডের দাম বেড়েছে। অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইস্পাত কারখানাগুলো বছরে ৫০-৫৫ লাখ টন রড উৎপাদন করছে। এর মধ্যে সরকারি প্রকল্পে ৪০ শতাংশ এবং শহর ও গ্রামে ৩০ শতাংশ করে ৬০ শতাংশ রড ব্যবহৃত হয়। একটি স্থাপনার কাঠামো দাঁড় করাতে কেবল রডের পেছনে ৪০-৪৫ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। এখন রডের দাম আরও বাড়লে তার প্রভাব পড়বে নির্মাণও খরচে।