যে স্ট্যাটাসটি নিয়ে রংপুরে তুলকালাম কাণ্ড হলো, লাশ পড়ল, পুড়ল ১০ সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর তা প্রথম দেন খুলনার ‘মাও. আসাদুল্লাহ হামিদী’। গত ১৮ অক্টোবর তিনি স্পর্শকাতর স্ট্যাটাসটি দেন এবং গতকাল পর্যন্ত ৮৭ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের ওয়ালে এর শেয়ার দিয়েছেন, যাদের একজন রংপুরের ‘এমডি টিটু’।
টিটুর নামে শেয়ার দেওয়া হয় ১৯ অক্টোবর। আসাদুল্লাহ হামিদী স্ট্যাটাস দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। তিনি ফেসবুকে নিজের পরিচয় দিয়েছেন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি এবং খুলনা জেলার সহসাংগঠনিক সম্পাদক।
ফেসবুকে আসাদুল্লাহ হামিদীর স্ট্যাটাসের নিচে আবুল কাশেম নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি ওই জানোয়ারের কার্টুন ও লেখা পোস্ট করেছেন। এতে মুসলিম সমাজের যতটা উপকার হচ্ছে তার চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। দয়া করে এটা মুছে ফেলুন। ‘ কিন্তু আসাদুল্লাহ হামিদী ওই প্রতিবাদ ও পরামর্শ আমলে নেননি এবং গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও আপত্তিকর স্ট্যাটাসটি দেখা যাচ্ছিল।
তবে আসাদুল্লাহ হামিদী যে এই আপত্তিকর কার্টুন ও লেখা প্রচার করেছেন তা তিনি অস্বীকার করছে না। নিজের স্ট্যাটাস নিয়ে তর্কের পর তিনি মন্তব্যের ঘরে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে দেন।
এই নম্বরে গতকাল সন্ধ্যায় থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সিলেট থেকে আমার পরিচিত একজন বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তা ডাউনলোড করে পোস্ট করি। আমি রাকেশ মণ্ডলের শাস্তির জন্য গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে এটি প্রচার করি। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘আমার জানা মতে, রাকেশ মণ্ডলের বাড়ি সিলেটে। ‘
এ ধরনের আপত্তির বিষয় প্রচার করা যে আইনত দণ্ডনীয় এ বিষয়টি কি আপনার জানা আছে? এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুল্লাহ হামিদী বলেন, ‘আমার জানা নেই। ‘ বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি বলে তিনি জানান।
আসাদুল্লাহ হামিদী তাঁর ফেসবুক ওয়ালে আপত্তিকর, স্পর্শকাতর কার্টুন সংবলিত একটি লেখার স্ক্রিনশট শেয়ার দিয়ে বলেন, ‘রাকেশ যে অপরাধ করেছে তাঁর শাস্তি জেল-জরিমানা নয়। আমরা গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তার ফাঁসি চাই। ‘
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া পরিচয়ে মোবাইল সিম যাদের কাছে রয়েছে তারা সেই ভুয়া পরিচয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে নানা ধরনের আপত্তিকর তথ্য প্রচার করতে পারে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থান করে কেউ যদি সে দেশের মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে এ অপকর্মে যুক্ত হয় তাতেও কিছু করার থাকে না।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ গতকাল বলেন, ‘ফেসবুক কর্তৃপক্ষের আপত্তিকর কনটেইন্ট সম্পর্কে নিজস্ব মানদণ্ড রয়েছে। সেই মানদণ্ডের বিচারে তারা যদি মনে করে যে কনটেইন্টটি বা ফেসবুক আইডিটি ক্ষতিকর তাহলে বন্ধ করে দেই। আবার কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অনুরোধও রক্ষা করা হয়। কিন্তু দেশে ফেসবুকের অ্যাডমিন ব্রাঞ্চ না থাকায় দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। ভারতে সম্প্রতি ফেসবুকের অ্যাডমিন ব্রাঞ্চ হয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। ‘ রংপুরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বন্ধের দিন এটি ঘটেছে। আমাদের টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। বিস্তারিত কিছু এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ‘
অনলাইন অ্যাকটিভিটিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, টিটু রায়কে ফাঁসাতেই যে এমডি টিটু নামের আইডিতে আপত্তিকর ছবিটি শেয়ার হয়েছে তা একেবারেই স্পষ্ট। এদিকে নির্ঝর মজুমদার নামে একজন আইনজীবী-ব্লগার তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘রংপুরের পাগলাপীর এলাকার মোহাম্মদ টিটু রায়ের ফেসবুক প্রফাইলের আর্কাইভ করলাম। কিছু তথ্য দেই। ১. প্রফাইলটা খোলা হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। ২. প্রফাইলে একই ছবি বারবার দেওয়ার প্রবণতা অসম্ভব লক্ষণীয়। এর পিছে শুধু একটি কারণই থাকতে পারে, সেটি হলো কোনো একজন নির্দিষ্ট মানুষের প্রফাইল হিসেবে সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করা। ৩. যে পোস্ট নিয়ে এত ঘটনা, সেটি এই প্রফাইল থেকে দেওয়া হয়নি। ৪. একই স্ক্রিনশট অন্তত দশবার বিভিন্ন তারিখে আপলোড করা হয়েছে। এটি যাতে অন্যদের চোখে পড়ে সে প্রচেষ্টা অত্যন্ত লক্ষ করার মতো। নির্ঝর মজুমদার নিজের বিশ্লেষণ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানান যে এটি ছবি চুরি করে আনাড়ি হাতে বানানো ফেক প্রফাইল এবং এটি যারা বানিয়েছে তারা প্রচুর ক্লু ছেড়ে গেছে।
সূত্র : কালেরকণ্ঠ