শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর ডেফলাইয়ে বেদে পল্লীতে শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা !!
বুলবুল ইসলাম বিভাগীয় প্রতিনিধি ( ময়মনসিংহ)
Unicef এর The Convention on The Rights of The Child by (James R. Himes) বইয়ে বলা হয়েছে সকল মানব সন্তানই শূণ্য থেকে আঠারো বছর বয়সি সকলেই শিশু ও সবারি অধিকার সমান কিন্ত ‘রিভার জিপসি’বা বাংলায় বেদে। এই সম্প্রদায়ের মানুষের নির্দিষ্ট কোন আবাস নেই, এলাকা নেই। যেখানে জায়গা হয় সেখানেই অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলে ‘বেদে’ হিসাবে পরিচিত এই সম্প্রদায়টি। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের ডেফলাই গ্রামে এমনি একটি আবাস রয়েছে বেদেদের। স্থানীয়রা একে বেদে পল্লী হিসাবেই জানে। এই পল্লীতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ২ শতাধিক বেদে পরিবারের বাস। বেদেরে যা পেশা, সাপের খেলা, বাঁদরের খেলা দেখিয়ে জীবনযাপন করে তারা। এ পেশায় জড়িত বয়স্কদের নিয়ে কথা নেই, কিন্তু কথা হলো শিশুদের বেলায়। সাপের মতন হিংস্র একটি প্রাণির সাথে শৈশব থেকেই এদের জড়িয়ে যেতে হচ্ছে। পড়াশোনার তেমন সুযোগ-সুবিধা না থাকায়, ঝুকিপূর্ণ পেশার সাথে বেড়ে উঠতে হচ্ছে তাদের।একদিকে এমন পেশা, তারোপর স্থায়ী আবাস না থাকায় এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়ে জীবনযাপন, সব মিলিয়ে বেদে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা থেকে। যার ফলে পেশা পরিবর্তন করে লাভ ও সম্মানজনক কোন পেশায় যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ডেফলাইয়ের বেদে পল্লীর প্রধান, যাকে ডাকা হয় সর্দার হিসাবে। সেই জামাল বললেন, ‘আমাদের নানান জায়গা ঘুরে বেড়াতে হয়। নির্দিষ্ট কোন জায়গায় থাকা হয়ে উঠে না। ফলে বাচ্চাদের স্কুলে দেয়ার ব্যাপারটি আমাদের পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব। নিজেদের পেশা সম্পর্কে জামাল জানালেন, এখন সময় পরিবর্তন হচ্ছে। আগে মানুষ গাছ-গাছড়ার অষুধের উপর নির্ভর করতো, ব্যাথা কমাতে শিঙ্গা লাগাতো। কিন্তু এখন হাতের কাছেই এলোপ্যাথিক অষুধ পাওয়া যায়, ফলে মানুষ আর আমাদের টোটকার উপর নির্ভর করে না। এর ফলে আমাদের আয়-রোজগারও কমে গেছে। এ কারনেও আমাদের বাচ্চাদের পড়ানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।
এই পল্লীর বেড়ে উঠা শিশুরাও জানালো, তাদেরও লেখাপড়া করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু তাদের বাবা-মার পক্ষে খরচ বহর করা সম্ভব হয়ে উঠে না বলেই তাদের স্কুলে যাওয়া হয় না।এমনি শিক্ষা বঞ্চিত এক বেদে শিশু শারমিনা জানালো, তাদের ঘরে ঠিকমত খাবারই জোটে না, অভাব অনটন লেগেই আছে। তাই তার বাবা-মা তাকে পড়তে পাঠায় না।
শারমিনার সাথে থাকা কুড়িমা, নূপুর, ইমনসহ অন্যান্যরাও বললো একই কথা। তাদের সবার কথার মূল সুর হচ্ছে অভাব এবং স্থায়ী আবাস না থাকায় তাদের পক্ষে পড়াশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বেদে সর্দার জামালের দাবী ছিল, সরকার যদি তাদের কাজ এবং আবাসনের ব্যবস্থা করে তাহলে তাদের জীবনযাপন সহজ হবে। একই সাথে তাদের বাচ্চারাও স্কুলে যেতে পারবে, পড়াশোনা করতে পারবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বেদেদের এমন দাবীর কথায় বলেন, ‘বিষয়টি আমি উর্ধতনদের জানাবো। একই সাথে চেষ্টা করবো এ সম্প্রদায়ের বাচ্চাদের স্কুলে যাবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে।’