‘সেবা’ আর ‘কল্যাণ’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে লুটপাট
বাংলাদেশে অবৈধভাবে ভারতীয় ট্যুরিস্ট অমিতাভ চ্যাটার্জী
মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার
কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চার্চ অব দ্যা ন্যাজারিনের শ্রীমঙ্গল এরিয়া অফিসে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, নগদ অর্থ, চাকরি, চিকিৎসাসেবা প্রভৃতির লোভ-প্রলোভন দেখিয়ে হতদরিদ্র অসহায় চা শ্রমিক ও পাহাড়িদেরকে ধর্মান্তরিত করা, অভাব ও দারিদ্র্যকে বোকা বানিয়ে ‘সেবা’ আর ‘কল্যাণ’- শব্দ দু’টি ব্যবহার করে লুটপাট ও প্রতারণা ইত্যাদিও অভিযোগ রয়েছে ট্যুরিস্ট হিসাবে সস্ত্রীক বাংলাদেশে এসে ন্যাজ্যারিন মিশনের ডিস্ট্রিক্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট (ডিএস) পদে চাকরী করছেন ভারতীয় নাগরিক অমিতাভ চ্যাটার্জী। একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। বিশ্বের কোন দেশের কোন নাগরিক ট্যুরিস্ট হিসাবে অন্য কোন দেশে গিয়ে সে দেশের কোন পেশায় নিয়োজিত হওয়া বেআইনী ও অবৈধ হলেও, ট্যুরিস্ট হিসাবে সস্ত্রীক বাংলাদেশে এসে ন্যাজ্যারিন মিশনের ডিস্ট্রিক্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট (ডিএস) পদে চাকরী করছেন ভারতীয় নাগরিক অমিতাভ চ্যাটার্জী। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এনজিও ব্যুরো অনুমোদিত এ প্রতিষ্ঠানটির তিনি একজন বোর্ড সদস্যও। এছাড়াও, তিনি চার্চ অব দ্যা ন্যাজ্যারিনের এসিস্ট্যান্ট ফিল্ড স্ট্র্যাটেজি কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশ, সাউথ এশিয়া ফিল্ড, নর্থওয়েস্ট পদেও দায়িত্ব পালণ করছেন। বাংলাদেশে হাউজ # ১৬, রোড # ১৪, সেক্টর # ১২, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা- ১২৩০ স্থিত চার্চ অব দ্যা ন্যাজারিনের প্রধান কার্যালয়ে বসে তিনি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাসপোর্ট অনুযায়ী অমিতাভ চ্যাটার্জী ৮২, ডা. সুরেশ সরকার রোড, কোলকাতা, পিন ৭০০০১৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত এর রবিন দাশ ও মিতা দাশের পুত্র। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর জেড৩৫৯৯৩০৪। পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ০৩/০৩/১৯৬৮। পাসপোর্টের মেয়াদ ২৫/০৭/২০১৬ থেকে ২৪/০৭/২০২৬ পর্যন্ত। তার স্ত্রী রোজমেরী চ্যাটার্জী ৪৮/১, নাইনান পাড়া লেন, বারানগর, উত্তর চব্বিশ পরগনা, পিন ৭০০০৩৬, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত এর শুকুমার চ্যাটার্জী ও নমিতা চ্যাটার্জীর কন্যা। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর কে৯১৩৫৩৮৪। পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯/০৮/১৯৭৮। পাসপোর্টের মেয়াদ ১৯/০৩/২০১৩ থেকে ১৮/০৩/২০২৩ পর্যন্ত। কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন কর্তৃক বিগত ৩০/০৫/২০১৬ ইং ইস্যুকৃত কনস্যুলার মনসুর আহমদ স্বাক্ষরিত অমিতাভ চ্যাটার্জীর ভিসা নং ৭-১৪৬৬৫/১৬, মেয়াদ ২৯/০৫/২০১৭, টাইপ অব ভিসা- টি, জার্নি পারমিটেড- মাল্টিপল। এমপ্লয়মেন্ট এন্ড কালচারাল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য তিনি বাংলাদেশে আসেন। তাছাড়া, ২৯/০৫/২০১৭ এর পর তিনি ভিসা নবায়ণ করেছেন কি-না, তা অবশ্য জানা সম্ভব হয়নি। আইনানুযায়ী, ট্যুরিস্ট হিসাবে কোন দেশে অবস্থানকারী কোন বিদেশী নাগরিক কোন অবস্থাতেই কোন পেশায় নিয়োজিত হওয়া সম্পূর্ণ বে-আইনী ও অবৈধ হওয়া সত্তেও, ভারতীয় ট্যুরিস্ট অমিতাভ চ্যাটার্জী সস্ত্রীক বাংলাদেশে অবস্থান করে চার্চ অব দ্যা ন্যাজ্যারিনের ডিস্ট্রিক্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট (ডিএস) পদে চাকরী, বোর্ড সদস্য ও এসিস্ট্যান্ট ফিল্ড স্ট্র্যাটেজি কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশ, সাউথ এশিয়া ফিল্ড, নর্থওয়েস্ট পদে দায়িত্ব পালণ করছেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ডিস্ট্রিক্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসাবে অমিতাভ চ্যাটার্জীর কার্যএলাকা মৌলভীবাজার জেলা ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন এরিয়া অফিসে কর্মীদের সাথে আলোচনা সভার রেজুলেশন, বাংলাদেশে উক্ত মিশনারী কাজের বিভিন্ন পরিকল্পনা, বাৎসরিক সভার প্রতিবেদন, আর্থিক লেনদেনের নথি ইত্যাদি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সভার রেজুলেশনেও একজন বোর্ড সদস্য হিসাবে তার স্বাক্ষর রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গঠনতন্ত্রে (ধারা-৫) নিঃস্ব, বিত্তহীন ও কর্মহীন মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণই এ সংস্থার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ লিপিবদ্ধ থাকলেও, হতদরিদ্র অসহায় লোকজনকে ধর্মান্তরিত করাই প্রতিষ্ঠানটির কাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর, ধর্মভিত্তিক কার্যক্রম আড়াল করতে তারা কিছু সামাজিক কাজ যেমন- ছাগল-গরু, নলকূপ, বীজ প্রভৃতি বিতরণ করে থাকে। আর, ট্যুরিস্ট হিসাবে সস্ত্রীক বাংলাদেশে অবস্থান করে এসব কর্মকান্ড পরিচালনা ও তদারকি করছেন ওই ভারতীয় ট্যুরিস্ট অমিতাভ চ্যাটার্জী। প্রশ্ন হচ্ছে- ভারতীয় ট্যুরিস্ট অমিতাভ চ্যাটার্জী বাংলাদেশের এনজিও প্রতিষ্ঠানে চাকরী, ওই প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য ও এসিস্ট্যান্ট ফিল্ড স্ট্র্যাটেজি কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশ পদে দায়িত্ব পালণ করছেন কিভাবে ? তাছাড়া, তিনি বাংলাদেশ বিরোধী কোন তৎপড়তা পরিচালনা করছেন কি-না, কিংবা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন কোন স্পর্শকাতর তথ্যাদি তার দেশে অথবা অন্য কোন বিদেশী রাষ্ট্রে পাচার করছেন কি-না এ সন্দেহও উড়িয়ে দেয়া যায়না। তাই, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক জরুরী ভিত্তিতে এসব বিষয় তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।