আজ ৩০ অক্টোবর। নাসিরনগরে হামলার ১ বছর পূর্ণ হল। তবে এখন পর্যন্ত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলেছে, মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিনবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাস (৩০) ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাশরীফের উপর শিবমন্দিরের ছবি পোস্ট করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উক্ত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা ওই যুবককে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপরও তীব্র প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। কয়েকটি ইসলামী সংগঠন পরের দিন ৩০ অক্টোবর প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। পৃথক দুটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোক অংশ নেয়। প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন একদল লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর-মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এরপর ৪ নভেম্বর আবারো হিন্দু পরিবারের একটি মন্দিরসহ ৫টি বাড়ির রান্নাঘর, গোয়াল ঘর, ১৩ নভেম্বর সকালে হিন্দু পরিবারের একটি পরিত্যক্ত ঘরে ও ১৬ তারিখ রাতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেবের একটি গোয়াল ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সারা দেশে তখন এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠে। ঘটনার পর নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদেরকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বহিষ্কার করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে। হামলা এবং ৮টি মামলা হওয়ার এক বছর পরও পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি।
নাসিরনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব ও মামলার বাদী কাজল জ্যোতি দত্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক সংঘাত কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কখনো শুভ হতে পারে না। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হোক। প্রশাসনের কাছে আমাদের এটাই দাবি।
নাসিরনগর থানার ওসি মো. আবু জাফর বলেন, নাসিরনগর থানায় দায়ের হওয়া ৮টি মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্রগুলি পর্যায়ক্রমে আদালতে দাখিল করা হবে।
এদিকে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও পুলিশি রিপোর্ট দাখিল করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে অঞ্জন কুমার দেব, আদেশ চন্দ্র দেব ও সুজিত কুমার চক্রবর্তীর নের্তৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে সোমবার দুপুরে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী ও ওসি মো. আবু জাফরের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।