স্পেনের সরাসরি শাসনের আওতায় আসতে পারে কাতালুনিয়া
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
স্পেনের মন্ত্রীসভা কেন্দ্রীয় সরকারকে কাতালুনিয়ায় সরাসরি শাসন জারির পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে কাতালুনিয়ায় গণভোট আয়োজনের প্রায় তিন সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নিজের মন্ত্রীসভার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন, জানিয়েছে বিবিসি।
ওই গণভোটকে অবৈধ বলে দাবি করেছে স্পেনীয় সরকার, কিন্তু এই গণভোট তাকে স্বাধীনতা ঘোষণার হুকুম দিয়েছে বলে দাবি কাতালুনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমনের।
এর ফলে কাতালুনিয়ার স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে নেওয়ার জন প্রস্তুত হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে, মন্ত্রীসভার বৈঠকে স্পেনের সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ কার্যকর করার বিষয়টি অনুমোদিত হবে, এই অনুচ্ছেদে সঙ্কটকালে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ওপর সরাসরি শাসন জারি করার অনুমোদন আছে। এই অনুচ্ছেদটি ব্যবহার করে স্পেনে চার দশকের গণতন্ত্রে প্রথমবারের মতো কোনো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পথে আছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে কাতালুনিয়ার আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের বিষয়টিও আছে। পাশাপাশি কাতালানের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেওয়া হতে পারে। তবে ১৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন পুরোপুরি বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় সরকারকে। সেই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার কাতালুনিয়ার কর্মকর্তাদের জায়গায় নিজেদের অনুগত কর্মকর্তাদের দায়িত্বে নিয়োগ করতে পারে কিংবা অঞ্চলিক পার্লামেন্ট বাতিল করে নতুন নির্বাচনের আয়োজনের পথে যেতে পারে। ১ অক্টোবর কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে ওই অঞ্চলে গণভোট গ্রহণের পর থেকেই সঙ্কটে আছে স্পেন। গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ৯০ শতাংশের রায় পড়ে বলে ভাষ্য কাতালান সরকারের। স্পেন সরকারের বিরোধিতা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গণভোটের আয়োজন করা হয়। যদিও ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে সেদিন ৪৩ শতাংশের বেশি ভোট জমা পড়েনি। ওই ফলাফলের ভিত্তিতেই ১০ অক্টোবর কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ‘প্রতীকী ঘোষণা’ দেন পুজদেমন; মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রাখতে ঘোষণার কার্যকারিতা স্থগিত রাখারও আহ্বান জানান তিনি। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাখয় স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে গত সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত কাতালান নেতাকে সময় দেন। কাতালুনিয়ার অবস্থান যদি স্বাধীনতার পক্ষে হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত বদলাতে দেওয়া হয় ‘আরও চারদিন’সময়, যা বৃহস্পতিবার শেষ হয়। কাতালান নেতার এই সময়সীমার মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মাদ্রিদ তা প্রত্যাখ্যান করে স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার পথেই হাঁটছে। স্পেন সরকার সংবিধানের ১৫৫ অনুচ্ছেদ চালু করলেও তা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে বিশ্লেষকদের মধ্যেও। অনুচ্ছেদটি চালু করে মাদ্রিদ কাতালুনিয়ার স্থানীয় প্রশাসনকে বরখাস্ত করে নতুন একটি প্রশাসন বসাতে পারবে; অর্থনীতি ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে, ডাকতে পারবে নতুন নির্বাচনও। কিন্তু স্বাধীনতার প্রশ্নে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে দূর করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। কাতালান পার্লামেন্টের অনেক সদস্য সংবিধানের এই ব্যাখ্যার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন; যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, স্পেন ও কাতালুনিয়ার এই মুখোমুখি অবস্থান আরও অনেকদূর গড়াবে।