February 18, 2025, 7:07 pm

কিংবদন্তী নারী ঝিনাইদহের ইলা মিত্র

কিংবদন্তী নারী ঝিনাইদহের ইলা মিত্র

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

ঝিনাইদহ শৈলকুপা শহর থেকে পূর্ব দক্ষিনে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দুরের গ্রাম বাগুটিয়া গ্রামের এক প্রান্তে কাঁচা রাস্তার পাশে চুনসুড়কি দিয়ে গাঁথা রুমের পুরাতন একটি দ্বিতল বাড়ি অধিকাংশ মানুষই জানেনা বাড়িটির ইতিহাস শুধু জানেন হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো ছিল, এখন হাজী কিয়াম উদ্দিনের ছেলেরা বসবাস করেছিল দখলে আছেন তারা কিভাবে মালিক হয়েছেন তা কেউ বলতে পারেন না গ্রামের মানুষ শুধু জানেন বাড়িটি এক সংগ্রামী মানুষের

সেই সংগ্রামী মানুষটি হচ্ছেন তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, সংগ্রামী নারী, নাচোলের রানী ইলা মিত্রঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের এই বাড়িটি ইলা মিত্রের পৈত্রিক বাড়ি ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আজো বাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকলেও রয়েছে বেদখল ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে ইটের গাথুনি গুলো চওড়া দেওয়ালে ঘেরা প্রাচীরের অনেক অংশ ভেঙ্গে ফেলেছে দখলদাররা শুধু বাড়ি নয়, দখল করা হয়েছে বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের রেখে যাওয়া শত শত বিঘা জমি সরকারের খাতায় এগুলো ভিপি তালিকাভুক্ত হলেও বাস্তবে এলাকার প্রভাব শালীদের দখলেইলা মিত্র বাংলাদেশের কিংবদন্তী নারী বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের চাকুরীর সুবাদে ইলা সেনের জন্ম কলকাতায়

১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি জন্ম গ্রহন করেন তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বেঙ্গলের ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল মা মনোরমা সেন গৃহিনী ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রাম তাদের পৈত্রিক নিবাস ইলা মিত্রের জন্ম কলকাতায় হলেও ছোট বেলায় তিনি বেশ কয়েক বার বাগুটিয়া গ্রামে এসেছেন ১৯৪৫ সালে চাপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরের জমিদার বাড়ির রমেশচন্দ্র মিত্রের সাথে ইলা সেনের বিয়ে হয় বিয়ের পর তার নাম হয় ইলা মিত্রইলা মিত্রের রানৈতিক জীবন সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি এই আন্দোলনের সময় তার উপর পুলিশের অমানবিক নির্যাতন চলে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে যান এরপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক গনতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন

তিনি কলকাতার মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন কর্ম জীবনে তিনি কলকাতা সিটি কলেজের বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপিকা হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসর নেনসরেজমিনে ইলা মিত্রের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরাতন আমলের নিদর্শন চুনসুড়কির তৈরী দ্বিতল বাড়িতে বসবাস করছেন হাজি কিয়াম উদ্দিনের তিন সন্তান বড় ছেলে আলী হোসেন জানান, তারা বাগুটিয়া ১১৬ নং মৌজার ২৩৪৫ দাগের জমির উপর বাড়িটি সহ ৮৪ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন বাবা হাজি কিয়াম উদ্দিন বহু পূর্বে ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের শাশুড়ি সরদিনি সেনের কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেন সরদিনি সেন কিভাবে এই জামির মালিক হলেন তা তিনি বলতে পারেন না বলে জানান তিনি ছাড়াও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম, আবদুর রশিদ রাশিদুল ইসলামের পরিবার এখানে বসবাস করেন মূল ঘরটির টি রুম ব্যবহার করা যায় সেগুলো ভায়েরা ভাগ করে নিয়েছেন বাকি রুমগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কিংবদন্তী নারী ইলার শৈশব কৈশর সময় পার করা বাগুটিয়া, গোপালপুর, শেখরা, রঘুনন্দপুর, শাহাবাজপুর সহ কয়েকটি গ্রামে তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন, মা মনোরমা সেন, দাদা রাজমোহন সেনের নামে রয়েছে কয়েক বিঘা জমি এসব ভিপি সম্পত্তি হিসাবে সরকারী খাতায় থাকলেও তার সবটুকুই এখন বেদখল তবে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানান এসব সম্পত্তির ব্যাপারে সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি দুই শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রভাব শালীদের বিরুদ্ধে

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর