জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে মৃত্যুবরণ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেই থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো এই দিনকে শাহাদাৎ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৭ মে দলের এক যৌথসভা শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৫ মে থেকে শুরু হয়ে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হবে। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে ছিলো ২৯ মে (গতকাল মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা, ৩০ মে (আজ বুধবার) সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও মিলাদ মাহফিল, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বই মেলা প্রভৃতি। ৩০ মে বিএনপি নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করবে এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ বুকে ধারণ করবে। একইদিনে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানায় দুস্থদের মধ্যে কাপড় ও ইফতার সামগ্রি বিতরণ করা হবে। ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়াউর রহমানের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিলো কমল। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মনসুর ছিলেন একজন কেমিষ্ট। মা জাহানারা খাতুন ছিলেন করাচি বেতার কেন্দ্রের একজন সঙ্গীত শিল্পী। স্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। করাচি একাডেমী স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি করাচির ডিজে কলেজে ভর্তি হন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন পান । তিনি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে প্রথম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পানির নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমীর প্রশিক্ষক ও দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হন। ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করেন। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামস্থ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠিত মুজিবনগর সরকার কর্তৃক সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। পরে তিনি জেড ফোর্সের অধিনায়ক হন। বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি স্বাধীনতার পর বীর উত্তম খেতাব লাভ করেন ।
১৯৭৩ সালে তিনি বিগ্রেডিয়ার ও পরে মেজর জেনারেল পদ লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের ২৫ আগস্ট তিনি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদ লাভ করেন। এরপর ৩ নভেম্বর এক সামরিক অভ্যুখানে তিনি বন্দি হন। ৭ নভেম্বর ‘সিপাহীজনতার বিপ্লবের’ পর মুক্তিলাভ করেন। চিফ অব স্টাফ পদে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পরে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব লাভ করেন।
১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং দেশ সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি জনগণের ব্যাপক আস্থা লাভ করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ মে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে “বিসমিল্লাহ” সংযোগ করেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। যা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে বিতর্কিত। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২০৮টি আসন লাভ করে। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল তিনি সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন। ১৯৮১ সালের ২১ এপ্রিল তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ফোরাম সার্ক-এর প্রস্তাব ও পরিকল্পনা উত্থাপন করেন। তার শাসনামলে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান হয়। শেষ অভ্যুত্থানে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তিনি নিহত হন। ২ জুন জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর পার্শ্বে ক্রিসেন্ট লেকের পাড়ে থাকে সমাহিত করা হয়।