-
- সারাদেশে
- পাইকগাছায় স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা দেয়ায় এক সন্তানের জননীকে পৈশাচিক নির্যাতন
- আপডেট সময় May, 29, 2018, 2:32 pm
- 466 বার পড়া হয়েছে
আফরোজা পারভীন পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
যৌতুকের ১লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বিয়ের সময় পরিশোধ করা হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। নগদ টাকার সাথে দেয়া হয় আরো ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের স্বর্নালংকার ও আসবাবপত্র। কিন্তু যৌতুকের বাকি ৪০ হাজার টাকা দিতে না পারা সহ স্বামীর পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেওয়ায় গৃহবধু দিপ্তি রানী দাশের উপর চালানো হয়েছে বর্বর ও পৈশাচিক নির্যাতন। শশুরের মদদে স্বামী ও শাশুড়ি সহ ভাসুর দিপ্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মুমূর্ষাবস্থায় ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখে ১০দিন। এসময় দেয়া হয়নি ঠিকমতো চিকিৎসা ও খাওয়া। ফলে নির্যাতনের শিকার দিপ্তির একটি চোখ চিরতরে নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া সমস্ত শরীরে আঘাতের ফলে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন ১ সন্তানের জননী দিপ্তি (২২)।
পৈশাচিক নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটেছে পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামে।
দিপ্তির পিতা ফকির দাশ জানান, প্রায় ৩ বছর আগে ভদ্র ঘরের জামাই দেখে পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের মনোরঞ্জন দাশের ছেলে সুকুমার দাশের সাথে বিয়ে দেয়া হয় দিপ্তি রানীর। বিয়ের সময় বর পক্ষের দাবী অনুযায়ী যৌতুকের দেড় লাখ টাকার মধ্যে প্রথমে ১ লাখ টাকা সহ আরো ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের স্বর্নালংকার ও আসবাবপত্র দেয়া হয়। এছাড়া পরবর্তীতে যৌতুকের বাকি ৫০ হাজার টাকার মধ্যে পরিশোধ করা হয় আরো ১০ হাজার টাকা।
ফকির দাশ বলেন, বিয়ের ১ বছরের মধ্যে দিপ্তি রানী কন্যা সন্তানের মা হয়। এরপর থেকে জামাই সুকুমার দাশ যৌতুকের বাকী ৪০ হাজার টাকার দাবীতে চাঁপ দিতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় ফকির দাশ তাঁর জামাইকে যৌতুকের বাকি ৪০ হাজার টাকা দিতে পারেনি। যেকারনে গত দু’ বছর ধরে দিপ্তির উপর চালানো হচ্ছে অমানুষিক নির্যাতন।
নির্যাতনের শিকার দিপ্তি রানী দাশ বলেন, যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় শশুর মনোরঞ্জন এর মদদে শাশুড়ি ময়না মতী দাশ, ভাসুর পরিমল দাশ, দেবর মিলন দাশ সহ স্বামী সুকুমার দাশ প্রতিনিয়ত যে যেমন ইচ্ছে সেই ভাবে মারপিট করতো। মারপিট সহ্য করতে না পেরে কোলের সন্তানকে নিয়ে অনেকবার বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছি। সালিশ বিচার করে ভুল স্বীকার করে বারবার শশুর বাড়ির লোক ঘরে নিয়ে গিয়েছে। আর সংসার ও সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমিও সব নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর বাড়ি চলে গিয়েছি।
তালা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দিপ্তি জানালেন, সন্তান হবার পর থেকে স্বামী সুকুমার পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। তাতে বাঁধা দিলেই চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। গত ১০/১২দিন আগে পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় বাঁধা দিলে স্বামী সুকুমার দাশ বিয়ের সময়ে যৌতুকের বাকি ৪০ হাজার টাকা দাবী করে। এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে শশুরের মদদে স্বামী, শাশুড়ি ও ভাসুর বাঁশের চটা, ঝাটা ও কাঠ দিয়ে পিটিয়ে ও কিল, ঘুষি মেরে চোখ সহ সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। এঘটনার পর দিপ্তি যাতে পিতা-মাতা বা থানা পুলিশকে জানাতে না পারে সেজন্য তাকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয়। ঘরে বন্ধি অবস্থায় দিপ্তিকে দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহ খাবার। এমনকি নির্মম নির্যাতনের ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য বাড়িতে প্রতিবেশিদের আসা যাওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে অনুষ্ঠিতব্য যজ্ঞ অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিতে ফকির দাশ তার জামাই বাড়ি কাশিমনগর গ্রামে যেয়ে মেয়ে দিপ্তির উপর চালানো পৈশাচিক ঘটনা জানতে পারেন। এসময় তালাবদ্ধ ঘর থেকে মেয়েকে উদ্ধার করতে গেলে ফকির দাশকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে গত শুক্রবার কপিলমুনি ক্যাম্পের পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য’র সহযোগীতা নিয়ে ফকির দাশ তার মেয়ে দিপ্তিকে উদ্ধার করে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ এনে ভর্তি করেন। মুমূর্ষাবস্তায় দিপ্তি দাশ এখানে চিকিৎসাধিন রয়েছেন।
এদিকে শনিবার তালা হাসপাতালে এসে দিপ্তির শশুর বাড়ির লোকেরা মামলা না করার জন্য হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় মামলা দায়ের এর প্রস্তুতি চলছে।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৯মে২০১৮/ইকবাল
এ জাতীয় আরো খবর