কলাপাড়া প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর মহিপুর থানা পুলিশ মেসের বাবুর্চি নাজমা বেগম (৩৭) কে তুচ্ছ কারনে রাইফেল দিয়ে এক পুলিশ কনেষ্টবলের বর্বর নির্যাতন ঘটনার চার দিন পর সোমবার (২এপ্রিল) দুপুরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতাল থেকে আশংকাজনক অবস্থায় বরিশালে নেয়া হয়। ২৯ মার্চ দুপুরে ঘটনার পর পর থানায় ডাক্তার ডেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু নাজমার অবস্থার অবনতি দেখে অতি গোপনে তাকে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনদিন পর সেখান থেকে তাকে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে নেয়া হয় কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে। কিন্তু নাজমার অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল রেফার করেন। বর্তমানে নাজমা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ অসুস্থ্য নাজমার চিকিৎসার সকল দায়িত্ব নিলেও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহিপুর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার নাজমা বেগম জানান, গত ২৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের খাবারের শেষ পর্যায়ে নির্বাচনী ডিউটি শেষে মহিলা পুলিশ কনেষ্টবল ইমি তাকে খাবার দিতে বলেন। কিন্তু ভাত শেষ হয়ে গেছে বলতেই রেগে যায় সে। এক পর্যায়ে সে আমার গালে চড়-থাপ্পর মারে এবং মাথার পিছনে রাইফেল দিয়ে আঘাত করে। এতে আমি সাথে সাথে বেহুশ হয়ে যাই এবং বমি করতে থাকি। পরক্ষণে ওসি স্যার মহিপুর বাজার থেকে ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা করান। পরে আমার অবস্থা খারাপ দেখে আমার বোন নুরজাহানকে খবর দেন তারা।
নাজমার বোন আলীপুর মৎস্য বন্দরের বাসিন্দা মোসা: নুরজাহান বেগম বলেন, খবর পেয়ে থানায় গেলে ওসি স্যার আমাকে কুয়াকাটা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু আমি কুয়াকাটা না নিয়ে কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। এতেও পুলিশের লোকজন আমার সাথে রাগারাগি করেন এবং বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। এমনকি আমাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও না জানানোর জন্য বলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পরে ১ এপ্রিল পুলিশ চাপ প্রয়োগ করে নাম কাটিয়ে কুয়াকাটা হাসপাতালে নিয়ে আসতে বাধ্য করেন। রাতে আমার বোন মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ডাক্তার দ্রুত তাকে বরিশাল নিয়ে যেতে বলেন।
নাজমার ভাই সোহেল জানান, ঘটনাটি ২৯ মার্চ ঘটলেও আমি খবর পেয়েছি সোমবার (২এপ্রিল) সকালে। আমার বোনের অবস্থার এখনও কোন উন্নতি হয়নি। সোহেল আক্ষেপ করে আরও বলেন, দেশে কি কোন আইন নাই?, পুলিশ কি আইনের উর্ধ্বে??
কুয়াকাটা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, রোগীর মাথার পিছনের অংশে আঘাত রয়েছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়া চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল রেফার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ২৯ মার্চ ইউপি নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে আমি ব্যস্ত ছিলাম। পরে জেনেছি মহিলা কনেষ্টবলের সাথে বাবুর্চির ঝগড়া হয়েছে। বর্তমানে মাইক্রো ভাড়া করে বরিশাল নিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। মহিলা অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। বিষয়টি তিনি এসপি স্যারকে জানিয়েছেন বলে জানান।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৪মার্চ২০১৮/ইকবাল