পিডি নিউজ ডেক্সঃ
সিলেট বিভাগের চার জেলার উন্নয়নের দাবিতে বৃহত্তর সিলেটবাসী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনসহ সিলেটের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে নিউইয়র্কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ১৫ অক্টোবর বিকেল তিনটায় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক ও বৃহত্তর সিলেটবাসীর পক্ষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন সিলেট বিভাগের প্রবাসীরা। বক্তারা সিলেট বিভাগের সকল জেলার দ্রুত উন্নয়ন এবং মানুষের ভোগান্তির অবসান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। দুই মাসের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়িত না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এদিকে সিলেটবাসীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে মইনুল-আসাদের নেতৃত্বাধীন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি গত ১৫ অক্টোবর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মইনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আতাউল গনি আসাদ, কোষাধ্যক্ষ ময়নুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ সভাপতি দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম ও প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকনের যৌথ সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার ইনকের সভাপতি বদরুল খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সিলেট পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল, বাংলাদেশ সোসাইটি বোর্ড অব ট্রাস্টি আজিমুর রহমান বোরহান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, সহসভাপতি শামীম আহমেদ, মো. জাবেদ উদ্দিন, মো. লোকমান হোসেন লুকু, সদস্য হুমায়ূন কবির সোহেল, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার ইনকের সাবেক উপদেষ্টা আব্দুস শহীদ, সাবেক সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল, সাবেক সহসভাপতি জোসেফ চৌধুরী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মুমিত চৌধুরী তানিম, সেলিনা উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, ফারমিস আক্তার, ফকু চৌধুরী, ভায়লা সালিনা, মাহবুব রহমান, শেলী জামান খান, শাহ মুজিবুর রহমান জকন, কিনু চৌধুরী, শেখ আতিক, আব্দুল খালেক, এনআরবি চেয়ারম্যান শেকিল চৌধুরী, নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলি ওমেন প্রার্থী মেরী জোবাইদা, সৈয়দ উতবা, লাখাই চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তালুকদার, কাদির খান, সালেহ চৌধুরী, সৈয়দ লোকমান, শাহানা বেগম, নুরে আলম জিকু, কল্লোল আহমেদ, মাহবুবুর রহমান, আসিফ চৌধুরী, আলিম উদ্দীন, মিসবাহ আহমেদ, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, সাংবাদিক এমদাদ দীপু প্রমুখ।
সমাবেশে বৃহত্তর সিলেটবাসী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতারা ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে যোগ দেন। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বৃহত্তর সিলেটÑসিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ-এখনো উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস এই প্রবাসী সিলেটবাসীই। রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি সচল থাকলেও নিজ অঞ্চল পড়ে আছে প্রশাসনিক অবহেলার ছায়ায়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ‘জাগো সিলেট’ আন্দোলনের নেতা বাবরুল হোসেন বাবুল, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বদরুল হোসেন খান, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান সেলিম, টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, ইব্রাহিম চৌধুরী, রানা ফেরদৌস চৌধুরী, মইনুল হক চৌধুরী হেলাল প্রমুখ। সমাবেশে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবর পাঠানো স্মারকলিপি পাঠ করেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সুমাইয়া চৌধুরী। স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও সিলেট অঞ্চল অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, হাসপাতালের সেবা করুণ, রেললাইন জরাজীর্ণ, বিমানবন্দর সীমিত ক্ষমতার। উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হলেও অর্থছাড় না হওয়ায় কাজের অগ্রগতি থেমে যায় কাগজে-কলমে।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। তারা প্রশ্ন তোলেন, একটি অঞ্চলের নামেই যখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সেখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সীমিত কেন থাকবে?
এ ছাড়া তারা দাবি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করা, ঢাকা-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করা, সিলেট-কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু করা, সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ঝউঅ) সক্রিয় করা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষায় আইনগত নিশ্চয়তা ও প্রতিটি জেলায় প্রবাসী মনিটরিং সেল গঠন, বিমানবন্দর ও সরকারি অফিসে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও উন্নয়নের জোরালো দাবি উঠে আসে। বক্তারা বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিকীকরণ, অফিস-আদালতে ঘুষ বন্ধ এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগে সিলেট অঞ্চলের প্রয়োজন মেটাতে হবে। এ ছাড়া সিলেটের নদী-খাল রক্ষা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পর্যটন এলাকা সংরক্ষণ ও সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন, সিলেট-ঢাকা বিমানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদানের দাবি জানান তারা। বক্তারা বলেন, সিলেটের উন্নয়ন মানে কেবল সিলেট নয়, এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।