July 17, 2025, 7:10 am

সংবাদ শিরোনাম
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত- ৪, শতাধিক আহত গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে জয়পুরহাটে এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ উত্তপ্ত গোপালগঞ্জ,১৪৪ধারা জারি জামালপুরে ভারতীয় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ব্লেড উদ্ধার, আটক ২ সাংবাদিক স্বপ্না আক্তারের উপর হামলার প্রতিবাদে ডোমারে মানববন্ধন কমলগঞ্জে ময়ূর মিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন:আলামত সহ মূল আসামী গ্রেফতার শেরপুরে সরকারি অফিস আদালতে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্ত্বা রয়েছে এখনও বলেন হযরত আলী বেনাপোল বন্দরে চাকরির রক্ষায় ঘুষ দাবির অভিযোগ। বিপাকে ১২৯ জন নিরাপত্তা কর্মী মাদারীপুর দরগা শরীফে দুদকের অভিযান ‎ ‎ চার খলিফার লুটপাটে উন্নয়ন বঞ্চিত ছিলো মৌলভীবাজার- এম নাসের রহমান

ঝিকরগাছার বায়সা চাঁদপুর ৪দিন গত হলেও মেলেনি সোহানা হত্যার রহস্য

যশোর প্রতিনিধিঃ

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারন ইউনিয়নের বায়শা চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী সোহানা (১১) হত্যাকান্ডের ৪দিন পার হলেও এই হত্যার কোনো রহস্য এখনও মেলেনি।

গত ৭জুন ঈদুল আজহার দিন নিখোঁজ হওয়ার পরেরদিন রবিবার (৮জুন) ভোরে সোহানার ফুফু বাড়ির পাশে একটি পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায়। এরপর পুলিশ সন্দেহ ভাজন হিসেবে তার ফুফু ফাতেমা, ফুফুজি ইলিয়াস, ফুফাতো ভাই নয়ন ও ফুফাতো বোন তন্বি কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে।

কিন্তু দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদের পরেও পুলিশ এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পায়নি। গত মঙ্গলবার (১০জুন) থেকে পিবিআই পুলিশ ও সাথে যৌথ ভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু হত্যাকারী কে বা কেনই তাকে হত্যা করা হলো এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর আজও মেলেনি।

এদিকে পরিবারের ভেতর প্রথম থেকেই বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার কারণে এই হত্যাকান্ডের সাথে সোহানার পরিবারের লোকই জড়িত বলে এলাকাবাসীর ধারণা। সোহানা হত্যাকান্ডে বেশকিছু প্রশ্ন সামনে আসলেও তার কোনো উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। সোহানার দাদা হাফেজ আব্দুর রহমান। তিনি ঐ এলাকার একজন নামকরা গনক। তাবিজ,কবজ, ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া, তেলপড়া, আয়না ভারন দিয়ে সহজসরল মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করেছেন। বিভিন্ন মানুষের হারিয়ে যাওয়া জিনিস আয়না ভারন দিয়ে খুঁজে দিলেও তিনি তার ছেলের কন্যার কোনো খোঁজ বের করতে পারেননি।

সোহানার ফুফু ফাতেমার বক্তব্য অনুযায়ী সোহানার জামাকাপড়, জুতা সবই ফাতেমা খাতুনের ঘরেই পড়েছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন সোহানা জুতা খুলে রেখে কোথাও যায়না। এ-থেকে বোঝা যায় সোহানা আসলে ঘর থেকে বের হয়নি যেন বের করা হয়েছিল। যা কিছু হয়েছে সব ঘরের মধ্যেই হয়েছে।

এছাড়া তিনি আরও বলেছেন, যেখানে সোহানার লাশ পাওয়া গিয়েছে সেখানে দিনের আলোতে ২-৩বার খুঁজে এসেছেন কিন্তু সেখানে কিছুই ছিলোনা। এর থেকে প্রমাণিত হয়, রাতের আধারে কেউ সেখানে লাশটি রেখে এসেছে। সোহানার পিতা প্রথম থেকেই বলে আসছে মেয়ে ফুলমোড়ে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। যেখানে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো তার ফুফু বাড়ির উদ্দেশ্যে।

মুল সন্দেহ ভাজন সোহানার ফুফা ইলিয়াস এর ব্যক্তিগত জীবনের অতীত ইতিহাস খুব বেশি ভালো নয়। তাকে হাফেজ আব্দুর রহমান বাইরে থেকে এনে নিজের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজের জমিতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এখানে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকার পরও তিনি আরও কয়েকটি বিয়ে করেছেন এবং মাঝে মাঝেই এলাকার বাইরে গিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। তার স্বভাব চরিত্র নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ ও সন্দেহ আছে।

তিনি তার শ্বশুর এর ভাঁওতাবাজি কবিরাজি আর ঝাড়ফুঁক এর পার্টনার। এই ইলিয়াসই প্রথম সোহানার লাশ আয়না ভারনের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছিলো বলে জানা গিয়েছে। অথচ এসকল আয়না ভারন এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তিনিই লাশটি ওখানে রেখে আয়না ভারনের নাটক সাজিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর ধারণা। আয়না ভারন দিয়েই যদি খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে মেয়েটা জীবিত থাকতেই কেনো পাওয়া গেলোনা? এই প্রশ্নটা বারবার ঘুরে আসছে জনমনে। সোহানা যখন তার ফুফু বাড়িতে ছিলো তখন তার ফুফাতো ভাই নয়ন (১৭) বাড়িতেই ছিলো। একারণে তাকেও সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হচ্ছে, এলাকা বাসী বলেন নয়নের চরিত্র ও ভাল না, সে মাদ্রাসায় পড়লে কি হবে ফোনে সব পণ্যগ্রাফি ভরা বদের হাড়ি। বেলা ২টার সময় সোহানাকে দোলনায় দোল খেতে দেখেছেন ফাতেমার একজন প্রতিবেশী। সোহানার ফুফাতো বোন তন্বির (১৩) দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে থাকাটাও রহস্যময়। সব মিলিয়ে সোহানার হত্যাকান্ড ঘিরে অজস্র প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বায়সা চাঁদপুর দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ২য় শ্রেণি থেকেই সোহানা ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। তার হাতের লেখা ছিলো অসাধারণ। সে খুবই মেধাবী ছিলো। তার অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবু সাইদ বলেন, পুলিশ এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। সন্দেহভাজন দেরকে ধারাবাহিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখনও এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে অভিযুক্তদের কেউ মুখ খোলেনি। তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড চাওয়া হবে। এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

পিডিনিউজ/বিল্লাল হুসাইন

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর