মোঃ জুলহাজুল কবীর নবাবগঞ্জ , দিনাজপুর:
রঙের বিন্যাস, কারিগরি দক্ষতা, বাস্তব ধর্মী আঙ্গিক, সৌম্য আর সুক্ষতার ব্যঞ্জনায় মৃৎ শিল্পীরা যুগ যুগ ধরে ছিল সমাদৃত। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা আবহমান নবাবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যের মৃৎ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
ঐতিহ্যবাহী সেই মৃৎ শিল্প সিলভার ও প্লাস্টিক শিল্পের আগ্রাসনে এবং সাথে পাল্লা দিতে না পেরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে মৃৎ শিল্প টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরী মাটির জিনিসের কদর ছিলো অনেকাংশ বেশি। পরিবেশ বান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে। আধুনিক যান্ত্রিক ছোঁয়ায় সময়ের বিবর্তনে নবাবগঞ্জের ঐতিহ্যের মৃৎ শিল্প বিলীন হতে চলেছে।
এই মাটির তৈরী শিল্পগুলির অনেক কিছুই এখন শোভা পায় ধনীদের বাসার ছাদে, বেলকনীতে ও অফিসের সৌন্দর্য বাড়াতে। তবে মৃৎ শিল্পীরা(কুমাররা) হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও পাচ্ছে না এর সঠিক মূল্য। অপর দিকে আধুনিক জিনিসপত্র ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় হ্রাস পাচ্ছে মাটির তৈরী তৈজসপত্র । তাই ক্রমশ নবাবগঞ্জ উপজেলার মৃৎ শিল্পপল্লী(কুমারপাড়া) গুলো হয়ে পড়ছে নীরব নি:শব্দ। হয়তবা কিছুদিন পর শোনা যাবেনা কুমার পাড়াগুলোতে টাকুর-টুকুর শব্দ। দেখা যাবে না সেই ঐতিহ্যের চাকি ঘুরানো ।
এ প্রসঙ্গে আক্ষেপ করে দাউদপুর হাটের মৃৎ শিল্প বিক্রেতা মৃত হেমন্ত কুমার পালের পুত্র শ্রী সুজন পাল বলেন, আগের মত আর মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হয় না। অভাবের তাড়নায় অনেকে পৈত্রিক এই কারুকার্যের পেশা ছেড়ে অন্যপেশায় চলে গেছেন। যাঁরা একেবারেই হত দরিদ, তারাই শুধু পড়ে আছেন এই পেশায়। বছরের মধ্যে কার্তিক- অগ্রহায়ণ মাসে একটু বেশী বিক্রি হয়,তার পরেও দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে লোকসান গুনতে হয়।
হাটের বিক্রেতা জিতেন পাল বলেন, এখন অল্প কিছু জিনিস তৈরি করে বিক্রি করি আর আগের দিনে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা কাজ করে তৈরী করছিলাম বাহারী রংঙের বাসন, ঘট, নঁকশি করা বাহারী ফুলদানী, ফুলের টপ, বড় বড় মটকা, গরুর খাবার খাওয়ার জন্য ভাগারী, সরা, মালা, পাতিল, পিঠা বানানোর সাজ, মুড়ি ভাজার পাতিল, রসের হাড়ি, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের খেলনা হাতি, ঘোড়া, বাশিঁ, টাকা জমানোর মাটির তৈরী ব্যাংক বিভিন্ন তৈজসপত্র”।
দাউদপুরের মৃৎ শিল্প পল্লীর (পালপাড়া) শ্রী মিলন কুমার পালের স্ত্রী শ্রীমতি ভারতী রানী পাল মাটির পাতিল তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার পিতার বাড়ী রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বড়দরগা এলাকায় । এখানে স্বামীর সংসারে এসে স্বামীর পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি। তিনি জানান,আমরা অর্থ অভাবে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প তৈরির পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছি। কোন দাতা সংস্থা বা সরকার যদি আমাদের পাশে এসে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়াত অথবা আমাদের এই শিল্পের উপর বিনা সুদে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করত তবে আমরা এই শিল্পকে আরও আধুনিক করতে পারতাম।
উপজেলার ৭নং দাউদপুর ইউনিয়নের মোঃ সাজেদুল ইসলাম দাবী জানিয়ে বলেন, দেশের এই ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরী মৃৎ শিল্প আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে আধুনিকভাবে এই হস্তশিল্পের প্রসার ঘটানোর জোর দাবী জানান তিনি।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রুহুল আমিন