আঃ রহিম সজল, প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)::
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে এক ও দুই টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন একেবারেই অচল। এই কয়েনে হচ্ছে না কোনো বেচাকেনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই কয়েন অচল না হলেও উপজেলার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে তা নিচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে তারা সব ধরনের মুদ্রা আদান-প্রদান করছেন। এ নিয়ে রীতিমতো দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ। এমনকি ভিক্ষুকরাও এক ও দুই টাকার কয়েন নিতে চান না। তবে পাঁচ টাকার কয়েন নিয়ে কারো আপত্তি নেই। শুধু এক ও দুই টাকার কয়েন যেন ‘অচল পয়সা’।
রিক্সা বা ভ্যান ভাড়া ও মুদি দোকানদারেরাও কেনাকাটায় এক ও দুই টাকার কয়েন নিচ্ছে না। হাট-বাজারসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক ও দুই টাকার কয়েন দেখলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লেগে যায় তর্ক। কোনও পক্ষই এসব ধাতব মুদ্রা নিতে রাজি হয় না। তবে এসব কয়েনের বদলে দোকানিরা ক্রেতাদেরকে দেন চকলেট। উপজেলার দোকানদার ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য উঠে আসে।
কোন ক্রেতা চার টাকা মূল্যের কোনো পণ্য কিনে পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট দিলে দোকানিরা ভাংতি নেই বলে এক টাকা ফেরত দেন না। আবার অনেক সময় এক টাকার বদলে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি চকলেট। কয়েনের ব্যাপারে পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। কয়েনের বদলে এসব পণ্য দিয়ে কাজ চালানোর প্রবণতা দেখা যায় দোকানগুলোতে। তাই কয়েন লেনদেন না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীদের কাছে পরে আছে হাজার হাজার এক ও দুই টাকার কয়েন বা ধাতব মুদ্রা।
উপজেলার সুবিদখালী বাজারের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন হাওলাদারসহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, এক ও দুই টাকার কয়েন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। পকেটে বা টাকা রাখার ব্যাগে কয়েন রাখতে সমস্যা হয় বলে মানুষের মধ্যে খুচরা পয়সা (কয়েন) ব্যবহারের আগ্রহ কমেছে।
সুবিদখালী বাজারের চা-দোকানি রহিম হাওলাদার বলেন, আমার কাছে এক ও দুই টাকার হাজারখানেক কয়েন জমা হয়ে আছে। কেউই এই কয়েন নিতে চায় না। তাই এক ও দুই টাকার কয়েন অনেকে দিলেও তা নেই না। কারণ এই কয়েন মির্জাগঞ্জে চলে না।
উপজেলা সদর সুবিদখালী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান রুবেল বলেন, কয়েক বছর যাবৎ এক ও দুই টাকার কয়েন মির্জাগঞ্জে অচল হয়ে আছে। কেউ এই কয়েন নিতে চান না। অনেক ব্যবসায়ীর কাছে বিপুল পরিমাণ কয়েন জমে আছে। এক ও দুই টাকার কয়েনগুলো কোনও ব্যাংকও নিতে চাচ্ছে না।
সচেতন মহল মনে করে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মির্জাগঞ্জে দুই ও এক টাকার কয়েন চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কোন ব্যবসায়ী কয়েন না নিতে চাইলে তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ কয়েন পড়ে আছে অলস টাকা হিসেবে। এতে অর্থনীতির গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এ ব্যাপারে সুবিদখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবু বেপারী বলেন, ব্যবসায়ীরা কয়েন নিচ্ছে না কারণ ব্যাংকে তা নিচ্ছে না। সরকার থেকে কয়েনগুলো বাতিল করা হয়নি। এক ও দুই টাকার কয়েন চালানোর ব্যাপারে প্রশাসনের জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।
সোনালী ব্যাংকের মির্জাগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সোলায়মান হায়দার বলেন, সরকার এক ও দুই টাকার কয়েন বাতিল করেননি। তাই আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে সব ধরনের কয়েন নেই এবং দেই। মির্জাগঞ্জে এক ও দুই টাকার কয়েন কেন চলে না এর কারণ আমার জানা নাই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. সাইয়েমা হাসান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে কয়েন না নেয়ার বিষয়ে লিখিত কোন নির্দেশনা না থাকলে অবশ্যই কয়েন নিতে হবে।