সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
প্রেম মানে না বাধা, সেই প্রচীন যুগে ভালবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য
জীবন দিয়েও প্রমাণ করে গেছেন অনেকে। শাহজাহান ভালবাসার মানুষটির জন্য
তৈরি করে গেছেন তাজমহল। কিন্তু বর্তমান যুগে ভালবাসা মানে হচ্ছে ধোঁকা,
তার বাস্তব উদাহরণ সুনামগঞ্জে এক তরুণির প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার
শিকার জুবায়ের আহমদ জনি (২২) নামের এক তরুণের সর্বনাশ হয়েছে। এক পর্যায়ে
ওই তরুণ আহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। একমাত্র পুত্র সস্তান
হারিয়ে জুবায়ের বাবা ব্যবসায়ী ছয়ফুল্লা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন,
আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মামলা নিয়েছে। এর আগে গত ৯ জুন রাত
১২ টা থেকে ভোর সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত মামলার আসামী ওই তরুণির সঙ্গে ভিডিও
কলে কথা বলা অবস্থায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে জুবায়ের। এ ঘটনায়
ছয়ফুল্লা ওই তরুণিসহ ৮ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
ব্যবসায়ী ছয়ফুল্লা এই প্রতিবেদককে জানান, প্রায় আড়াই মাস আগে শহরের আফতাব
নগরের বাসিন্দা এক তরুণির সঙ্গে একদিনই দেখা হয় তার ছেলের। এরপর দুয়েক
দিন ফোনে কথা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ছেলে জুবায়েরকে কিছু কথা আছে বলে
বাসায় ডাকে তরুণি। জুবায়ের ওই বাড়িতে গেলে আগে থেকে ফাঁদ পেতে রাখা গোয়াল
ঘরে জুবায়েরসহ ঢুকে তরুণি। ওরা গোয়াল ঘরে ঢুকতেই তরুণির বন্ধু ফরহাদসহ
অন্যরা বাইরের দিকে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর তারা নিহত জুবায়েরকে অমানবিক
নির্যাতন করে। পরদিন থানায় ধর্ষণ মামলা (নম্বর ২৯, তারিখ ২৬.০৩.২১) দায়ের
করে। এই মামলায় পুলিশ জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করে। জুবায়েরকে গ্রেপ্তারের পর
তরুণির বন্ধুরা ছয়ফুল্লাকে জানায় ১০ লাখ টাকা দিলে তরুণি আপোস করবে এবং
তার একমাত্র সস্তান জুবায়ের মুক্তি পাবে। ছয়ফুল্লা একমাত্র সস্তানকে
মামলা থেকে রেহাই দিতে স্থানীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে মেয়েটিকে তিন লাখ ২০
হাজার টাকা নগদ তুলে দেন। স্থানীয় কাউন্সিলরসহ কয়েকজন গণ্যমান্যের
উপস্থিতে টাকা দিয়ে আপোস করার পর ২৭ দিন পর জুবায়ের জেল থেকে বের হয়। এ
ঘটনায় জুবায়ের অপমানিত বোধ করে। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু ওই
তরুণি তার পিছু ছাড়ে নি। নানা ফোন থেকে ছেলেটিকে হুমকি ধামকি এবং বিয়ের
জন্য চাপ দিতো সে। মেয়েটির চাপে সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত’ থাকতো জুবায়ের।
ছয়ফুল্লা জানান, বুধবার রাতে তিনি এবং তার ছেলে একসাথে রাতের খাবার খেয়ে
নিজ নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান। ভোর ৫ টা ৪৮ মিনিটে স্ত্রী আজিজুন নেছার
মোবাইলে ০১৭৪০৭৪৮০৪৯ নম্বর থেকে ওই তরুণি ফোন দিয়ে বলে, জুবায়েরের কক্ষে
তাড়াতাড়ি যেতে। আমার স্ত্রী তাড়াতাড়ি ওই কক্ষে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে
দেখতে পান ছেলেটির লাশ ফ্যানে ঝুলছে। ওই সময় আমার ছেলের ম্যাসেঞ্জার অন
করা ছিল এবং ভিডিও কলে তার মৃত্যু দেখিয়েছে ওই তরুণিকে। আমি এই ঘটনার
বিবরণ ও টাকা লেন দেনের ভিডিওসহ, ছেলের মোবাইল ফোনের সিম এবং আমার
স্ত্রীর ফোনের সিম আদালতের কাছে উপস্থাপন করে প্রতিকার চেয়ে সোমবার
দরখাস্ত করি। আদালত দরখাস্ত গ্রহণ করে সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে মামলা
গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। জুবায়েরের মা
আজিজুন নেছা বলেন, ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে ওঠা মাত্র আমার মোবাইলে
একটি মেয়ের ফোন আসে, সে বলে আমার ছেলে মারা গেছে। তাড়াতাড়ি রুমে যেতে।
রুমে গিয়ে দেখি আমার ছেলে সত্যি সত্যি সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। এরপর
আমি চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। স্থানীয় কাউন্সিলর পেয়ারা বেগম বলেন,
মেয়েটি দরিদ্র হওয়ায় পাশে দাঁড়িছিলাম। কিন্তু পরে আমার সন্দেহ হয়। ধর্ষণ
মামলা করে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেবার পর আমার খারাপ লেগেছে। ছেলেটি
মারা যাবার কয়েকদিন আগে আমার কাছে এসে বলেছিল, মেয়েটি তাকে নানাভাবে
বিরক্ত করছে, ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। আমি বিষয়টি দেখব বলে তাকে আশ্বাস
দিয়েছিলাম। অভিযুক্ত তরুণিসহ ছয়ফুল্লার মামলার দায়ের করা আসামীরা হলেন-
তরুণির বাবা হিরন মিয়া, আসামী নাছির মিয়া, শহীদ মিয়া, লুৎফুর মিয়া, আতাউর
মিয়া, ফজরুননেছা ও নাঈম মেহেদী ফাহাদ। অভিযুক্ত তরুণি এবং তার বাবা হিরন
মিয়ার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায় নি। সুনামগঞ্জ
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশে
জুবায়ের আহমদ জনির বাবা ব্যবসায়ী ছয়ফুল্লার মামলা মঙ্গলবার রাতেই গ্রহণ
করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তার করতে মঙ্গলবার রাত থেকেই অভিযান চালানো
হচ্ছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।