March 19, 2024, 4:39 pm

সংবাদ শিরোনাম
সিলেট তামাবিল মহাসড়কে ক্যারিক্যাব ও পিকআপের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত ৭ কুড়িগ্রামে ৩ শতাধিক রোগীদেরকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান কুড়িগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচারণায় পুলিশ সিংড়ায় চলনবিলে সরকারী খাল দখলমুক্ত হওয়ায় মাছ ধরলো শত শত মানুষ র‍্যাবের অভিযানে রাজশাহীর বানেশ্বরে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের সময় চক্রের মূলহোতা’সহ গ্রেফতার- ৩ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন তিস্তা ইউনিভার্সিটিতে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দলবদ্ধ হামলা লুটপাট ও ভাঙচুর, রমেকে ভর্তি র‍্যাবের অভিযানে জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ফেন্সিডিল ও নগদ অর্থ উদ্ধার’ ০৮ পেশাদার জুয়ারী ও মাদকসেবী গ্রেফতার চিনিকলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বেতারের সাবেক শিল্পী নাজমুল ইসলামের ইন্তেকাল

সিলেটের বালাগঞ্জ “আদিত্যপুর গণহত্যা দিবস” যেখানে শহীদ হন ৬৫ জনের মধ্যে ৬৩ জন,বেঁচে ছিলেন ২ জন

লিপন দেব বালাগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
আজ সেই ভয়াবহ ১৪ই জুন।১৯৭১ সালের এই দিনই অন্ধকার নেমে এসেছিল আদিত্যপুরে।ভোরে এক সাথে পাকবাহিনীর ৩টি যান প্রবেশ করে সিলেটের বালাগঞ্জের আদিত্যপুরে।পাকবাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে আদিত্যপুরসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।ভয় পেয়ে পুরুষ-মহিলারা এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করলেন।বালাগঞ্জ থানা রাজাকার কমান্ডার আব্দুল আহাদ চৌধুরী(ছাদ মিয়া), লতিবপুরের লাল মোল্লা, মসরু মিয়াসহ ৫/৭জন দালাল দুজন পাক সেনাসহ এলাকার প্রতিটা ঘরে গিয়ে পুরুষদের খুঁজতে থাকে।তারা জানায়,ভয়ের কিছু নেই।এলাকার আইন শৃংখলা বজায় রাখতে সবাইকে নিয়ে আদিত্যপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শান্তি কমিটি গঠন করা হবে।শান্তি কার্ড (ড্যাণ্ডি কার্ড) দেওয়া হবে।এলাকায় কোন অরাজকতা ঘটলে পাকবাহিনী কার্ডধারীদের সহায়তা দেবে।তারপরও তাদের কথায় আস্থা রাখতে পারেনি সাধারণ মানুষ। কেউ লুকিয়ে পড়লো খাটের নীচে কেউ বাড়ির পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আবার কিছু সংখ্যক (মহিলা ও শিশু) আশ্রয় নিলেন গ্রামের পেছনের হাওরে।
রাজাকাররা প্রায় ৫ঘণ্টা রিফাতপুর, আদিত্যপুর, সত্যপুর, নারায়নপুর গ্রাম তছনছ করে পুরুষদের ধরে এনে আদিত্যপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো করে। শান্তি কমিটি গঠনকে প্রহসনে পরিণত করে ৬৫ জন পুরুষকে রশি দিয়ে বেঁধে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। বাঁচাও বাচাঁও আর্তনাদে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চারদিক। মুহূর্তেই শহীদ হন ৬৩জন। শরীরে গুলি নিয়েও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শিব প্রসাদ সেন ও সুকময় বাবু।
প্রতিটা পরিবারের পুরুষ যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সে সময় রাজাকার ও পাকবাহিনীর হাত থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে গ্রামের মহিলারা পালানোর সুযোগ খুঁজছে। তবু এ দেশীয় হায়নার কবলে সতিত্ব হারায় প্রায় ২০মহিলা। প্রায় ৭ঘণ্টা তান্ডব চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা প্রতিটা বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালায়। ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পূর্বে সেখান থেকে এক ষোড়শীকে ধরে নিয়ে যায় রাজাকার আব্দুল আহাদ চৌধুরী (ছাদ মিয়া)। প্রায় এক সপ্তাহ মেয়েটিকে ছাদ মিয়া তার বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করে।
এতো বড় অঘটনের পর আবারো নির্যাতনের ভয়ে কেউ থাকলো না আদিত্যপুর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে। অন্যদিকে লাশের পঁচা গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। ১৭ই জুন বৃহস্পতিবার রাজাকাররা আবার এলো আদিত্যপুরে। এবার লুণ্ঠন বা হত্যা নয়। সংবাদ মিডিয়া থেকে আড়াল করতে কোনোরকম ধর্মীয় আচার ছাড়াই লাশগুলো এবার মাটিচাপা দিল তারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে লাশ বের করা হয়। তারপর পোস্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করা হয় সিলেট সদর হাসপাতালে। সেখানে দেশি ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সামনে লাশের সংখ্যা গণনা করা হয়। তারপর লাশগুলো আবার আদিত্যপুর এনে বর্তমান গণকবরে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের বেশ কবছর পর সদ্য প্রয়াত শিবপ্রসাদ সেন চৌধুরী (পাকিস্তানিদের বুলেট বিদ্ধ হয়ে বেঁচে যাওয়া একজন) আদিত্যপুর গণকবরের সীমানা নির্ধারনে দেয়াল তৈরির কাজে হাত দেন। ইট, বালু ইত্যাদি ক্রয় করার পর জমির মালিক বাঁধা দেয়। ফলে তার এ উদ্যোগের মৃত্যু। ১৯৮৪ সালের ৩০এপ্রিল বালাগঞ্জ থানা পরিষদের এক সভায় আদিত্যপুর গণকবর নামে ২৪হাজার ৮৩২টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চারিদিকে দেয়াল দিয়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রায় ৩লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে শহীদদের নাম ফলক বসানো হয়।ফলকে ৬৩ জনের মধ্যে ৫৬ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/১৪ জুন ২০১৮/ইকবাল
Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর