সাজা স্থগিত না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না, হাইকোর্টের রায় বহাল
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
কোনো মামলায় দুই বছরের বেশি সাজা হলে এবং সেই সাজা আপিলে স্থগিত না হলে ভোটের পথ বন্ধ জানিয়ে হাই কোর্টের দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেনের আবেদন আপিল বিভাগের সাড়া পায়নি। বিচারকি আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে জাহিদ হোসেনের করা আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চ গতকাল বুধবার ‘নো অর্ডার’ দিয়েছে। এর ফলে হাই কোর্টের দেওয়া ওই আদেশই বহাল থাকছে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিত কারও আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী। এই আদেশের ফলে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এ জেড এম জাহিদ হোসেনের আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়ে এই আদেশ দেন। আদালতে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। আপিল বিভাগের আদেশের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, হাই কোর্টের আদেশই বহাল আছে। নির্বাচন কমিশন আদালতের এ আদেশ মানতে বাধ্য। ফলে বিএনপির ওই পাঁচ নেতা, খালেদা জিয়া, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিত কেউ এবার নির্বাচন করতে পারবেন না। অন্যদিকে জাহিদ হোসেনের অন্যতম আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, এখন দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারবে কি না- সেটা নির্ভর করছে রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর। কারণ কেউ নির্বাচন করতে পারবে কি পারবে না, সেটা পুরোপুরি রিটার্নিং কর্মকর্তার এখতিয়ার। এর আগে গত মঙ্গলবার দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানসহ পাঁচ নেতার দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে এই পাঁচ নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত ও বাতিল হলেই কেবল অংশ নিতে পারবেন। বিএনপির অন্য চার নেতা হলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মশিউর রহমান এবং ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ মো. আবদুল ওহাব। আদালতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জাহিদুল ইসলাম। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। ওয়াদুদ ভুঁইয়া ও আবদুল ওহাবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ব্যারিস্টার এ কে এম ফখরুল ইসলাম। মশিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এর আগে গত মঙ্গলবার এই পাঁচ নেতার দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। মামলার বিবরণে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত মামলায় ২০০৭ সালের ২১ জুন বিচারিক আদালত ১৩ বছরের সাজা দেন। পরে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন বলে জানান আমিন উদ্দিন মানিক। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ছয় কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করায় ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল জামিন লাভ করেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করার দায়ে আবদুল ওহাবকে যশোর স্পেশাল জজ গত বছরের ৩০ অক্টোবর আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। ওহাব এ বিষয়ে আপিল করেন ৬ ডিসেম্বর জামিন পান। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১০ কোটি পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোশরাফ হোসেন মৃধা মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে পৃথক ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ কোটি পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরে তিনি আপিল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ২৫ মে দুর্নীতির মামলায় মশিউর রহমানকে ১৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্ট থেকে পরে তিনি জামিন নেন।