March 28, 2024, 9:04 pm

সংবাদ শিরোনাম
মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈখর এলাকা হতে ০৩টি দেশীয় অস্ত্র পাইপগান ফেনসিডিলসহ ০২ জন অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভূটানের রাজা ৭২ হাজার জাল টাকাসহ চক্রের সদস্য গ্রেফতার পটুয়াখালীতে শ্রমীক লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ সুন্দরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ ৯ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার র‍্যাব-৫, এর অভিযানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী দূর্গম চর হতে ১১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার’ চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রংপুরে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে কতৃপক্ষের ব্যাপক অভিজান পীরগঞ্জের ১৫টি পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ, মামলার রায় পেয়েও ১৭ মাস ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলে কাটা পড়ে কিশোরীর মৃত্যু

সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী মহাকবির ১৯৬ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে ২২ জানুয়ারী থেকে বসছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা

জাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) থেকে ঃ

অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৬ তম জন্মবার্ষিকী

উপলক্ষে কবির জন্মভ’মি কেশবপুর উপজেলা সাগরদাঁড়িতে ২২ জানুয়ারী থেকে বসছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। সংস্কৃত বিষযক মন্ত্রনালয়ের পৃষ্টপোষকতায় ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেলা উদযাপনে প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মেলাকে ঘিরে সাজ সাজ রব চলছে গোটা সাগরদাঁড়িতে। বুধবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার শুভ উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি।
যশোরের কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলিােমটিার দক্ষিণে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্ণবী দেবীর সংসারে ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। নিজ গ্রামে মধু কবির শৈশব কাটে। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি ১৮৩০ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুরে চলে যান মাইকেল মধুসূদন দত্ত। লেখাপড়া করাকালিন ফ্রান্সের সুদুর ভার্সাই নগরীতে বসে তিনি রচনা করেন চতুদশপদী কবিতা সনেট। তার সাহিত্য কর্ম আর শোত্ববোধ চির জাগরুক রয়েছে মধু পরিমন্ডলে। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার এক হাসপাতালে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রতিবছর ২৫ জানুয়ারী সংস্কৃত মন্ত্রণালয় সপ্তাহব্যাপী মধু মেলার আয়োজন করে থাকে। তবে এস এসসি পরীক্ষার কারণে এ মেলা ২২ জানুয়ারী থেকে শুরু হবে আর তা চলবে ২৮ জানুয়ারী পর্যন্ত বলে মেলা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলায় রুপ নেয় ঐতিহ্যবাহী এ মধু মেলা।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান সাংবাদিকদের জানান, মেলায় মধু ভক্তদের নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলা, বিসিকের কুঠির শিল্প পন্যের স্টল, প্রতিদিন উন্মুক্ত মঞ্চে থাকছে মহাকবির সাহিত্য সৃষ্টির উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাটক, যাত্রাপালা। এবারের মধু মেলা অশ্লিলতামুক্ত থাকবে। একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ জানান, মেলার মাঠ নিরাপত্তা চাদরে মোড়া হবে।
এদিকে মধুপল্ল¬¬ী নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভুমি সাগরদাঁড়িতে ‘মধুপল¬¬ী’ গড়ে তোলার ঘোষনা দেন। ঘোষনা অনুযায়ী সে সময় মধুপল¬¬ীতে মধুসূদন মিউজিয়াম, পিকনিক কর্ণার, অতিথি শালা, কুঠিরের আদলে গেট, একটি মঞ্চ, ২টি অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ২০০৮ সালে ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ‘মধুমঞ্চ’ নির্মাণ করা হয়। তবে উন্নয়নের ধারাবহিকতা না থাকায় মধুপল্ল¬¬ী’র রাস্তা জরার্জীন হয়ে পড়েছে। সংস্কারের নামে লুঠপাট, আর ভূমিদস্যূদের দখলদারীত্বে মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদের উপছে পড়া পানিতে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে মধুপল্ল¬¬ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়। মধুপল্ল¬ী সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রীজ নির্মাণ না করায় সাগরদাঁড়ী ও সাতক্ষীরাবাসীকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে। এ ব্রীজটি নির্মাণ করা হলে মধুপল্ল¬¬ীতে পর্যটকদের পদচারনা বৃদ্ধি পাবে। সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল এর নামে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে নানা আন্দোলন সংগ্রাম করলেও সে দাবী আজও পুরন হয়নি। মধুসূদন দত্তের বাড়িতে একটি সংগ্রহশালা থাকলেও নেই সমৃদ্ধ কোন পাঠাগার। কবিকে নিয়ে গবেষণা ধর্মী কাজের দাবী আজও পূরণ হয়নি। আশির দশকে সাগরদাঁড়িতে একটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল তৈরির লক্ষ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মান করা হলেও পরবর্তীতে স্কুলটি আর চালু হয়নি। মধুপল্লীকে আধুনিকায়ন না করায় বর্তমানে পর্যাটকদের উপস্থিতি দিন দিন হ্রাস পেয়েছে। ফলে ভ্যারাইটি পণ্যের দোকান গুলোতে বেচাকেনা কমে গেছে। ভ্যারাইটি পন্যের দোকানদার নজরুল ইসলাম জানান, পর্যাটকদের উপস্থিতি দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সাগরদাঁড়ি গ্রামের সমাজ সেবক ইয়াছিন আলী বলেন, ‘মধুপল্ল¬ী’র আধুনিকায়ন না হওয়ায় পিকনিক পাটির লোকজন ‘মধুপল্ল¬¬ী’তে কিছুসময় যাত্রাবিরতি করে অন্য পিকনিক স্পটে চলে যায়। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সহিত বলেন, মহাকবি জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্টিত ৭ দিন ব্যাপী মধুমেলা থেকে একটি মহল লক্ষ লক্ষ টাকা বানিজ্য করলেও মধুপল্ল¬¬ীর কোন উন্নয়ন হচ্ছে না।
সাগরদাঁড়ির কৃতি সন্তান শিল্পী আব্দুর সাত্তার খাঁন বলেন, ‘মধুপল্ল¬¬ী’তে পর্যটকদের ভীড় বাড়াতে কপোতাক্ষ নদে ¯িপ্রড বোর্ডের ব্যবস্থাসহ আধুনিক পিকনিক স্পটের অবকাঠামো স্থাপন করা প্রয়োজন।
সাগরদাঁড়িতে মহাকবির নামে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মধুপল¬ী সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রীজ নির্মাণ, কপোতাক্ষ নদের তীর পাথর দিয়ে বাঁধা, মাটি তুলে মধুপল্লীর ভূমি উচুঁ করা, রাস্তা সংস্কার করাসহ আধুনিক পিকনিক স্পটের অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে পর্যাটন কেন্দ্র হিসাবে ‘মধুপল্ল¬¬ী’র বাস্তব রুপ দেয়ার জন্য এলাকাবাসি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২১ জানুয়ারি ২০২০/ইকবাল

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর