রংপুর ব্যুরো,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে সপ্তাহের প্রতিদিনই ঘরে বসে সেবা পান, এজন্য ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম বাড়িয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই বা এএসআই) প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বসছেন। তার উপস্থিতিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক বসে অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। ফলে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সমস্যায় সাধারণ মানুষকে অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে হচ্ছে না।রংপুর জেলাকে ৭৬টি বিট পুলিশিংয়ে ভাগ করে চলছে এ কার্যক্রম। সপ্তাহে একদিন বিট অফিসারদের তদারকির (বিট অফিসে যাওয়া) নিয়ম থাকলেও এসপি বিপ্লব তার জেলার কর্মকর্তাদের প্রতিদিন হাজির হওয়ার নিয়ম করেছেন।এতে মাদক, জুয়া খেলা বন্ধসহ বিভিন্ন অপরাধ কমেছে। পাশাপাশি পুলিশের প্রতি বাড়ছে মানুষের আস্থা।এ কথা জানান পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।রংপুর জেলার এসপি বলেন, ৭৬টি বিটের জন্য রেজিস্ট্রার ছাপানোসহ পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে সেবা কার্যক্রম। এই কার্যক্রমে নাগরিকরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার বলেন, ‘ছোটখাটো সমস্যায় নাগরিকদের থানায় আসতে হবে না।
বিশেষ করে যেগুলো স্থানীয় পর্যায় বসেই মীমাংসা করে দেওয়া যায় অথবা পুলিশি সেবার জন্য থানায় আসার প্রয়োজন পড়ে না। আবার অনেককে প্রত্যন্ত এলাকা কিংবা দূর থেকে থানায় আসতে হয়। তাই আমাদের অফিসাররা এখন প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বসছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন বসার কথা। আমার জেলায় এই সেবা প্রতিদিন চলবে। তাই একজন অফিসার প্রতিদিন ‘বিট পুলিশিং’ অফিসে গিয়ে বসছে।অনেক সময় ছোটখাটো পারিবারিক দ্বন্দ্ব, স্থানীয় ঝামেলা, ছোটখাটো নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা থাকে। এসপি বিপ্লব কুমার জানান, এসব সমস্যা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বসলে সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকের ভোগান্তিও কমছে। যেগুলো সমাধান হচ্ছে না, সেগুলো থানায় গিয়ে সমাধান করতে বলেছেন তিনি।ঘরে সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিট পুলিশিং জোরদারের পর জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে বলে জানান এসপি বিপ্লব। তিনি বলেন, কোথাও বড় ধরনের সমস্যা নেই। ট্র্যাডিশনাল যেসব অপরাধ, যেমন- জমিজমা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে মারামারি, এসব কিছু আছে। তবে কোনো ঘটনার আগে যদি সেখানে পুলিশের হস্তক্ষেপ হয়ে যায়, তাহলে অপরাধ করার আগে মানুষ দুবার ভাবে। এ কারণে নাগরিকদের সব সময় বলছি, কোনো ছোটখাটো ঘটনা হলে আগে আমাদের জানান, যাতে আমরা একটা মীমাংসা করে দিতে পারি।বিট পুলিশিং থাকলে জুয়া, মাদকের আসর এসব অবাধে চলতে পারে না। কারণ, বিট পুলিশকে মানুষ সহজে তথ্য জানিয়ে দিতে পারে।বিপ্লব কুমার জানান, বিট অফিসারদের জন্য ডেডিকেটেড ফোন নম্বর আছে। মানে বিট প্রতি একটি করে নির্দিষ্ট ফোন নম্বর চালু করা হয়েছে। অফিসার বদলি হলেও নম্বর ঠিক থাকবে। যখন যে অফিসার বিটের দায়িত্বে থাকবেন, তিনি এই নম্বর ব্যবহার করবেন। আর ছোটখাটো যেকোনো প্রয়োজনে ওসিকে কল করার দরকার নেই। ওই নম্বরে কল করলেই সেবা পাওয়া যাবে।কাজেই আইন-শৃঙ্খলার উন্নতিতে বিট পুলিশিংয়ের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।জনবান্ধব ও জনপ্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তার। ২১তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের এই কর্মকর্তা রংপুর জেলা পুলিশে যোগদানের আগে ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় রেকর্ড ২৪ বার শ্রেষ্ঠ উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন বিপ্লব কুমার। পুলিশের রংপুর রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ এসপি নির্বাচিত হয়েছেন রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। চতুর্থ বারের মতো শ্রেষ্ঠ এসপির পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।এছাড়া ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার দুবার বিপিএম ও একবার পিপিএম পেয়েছেন।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৮ আগষ্ট ২০২০/ইকবাল