March 29, 2024, 12:04 am

সংবাদ শিরোনাম
মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈখর এলাকা হতে ০৩টি দেশীয় অস্ত্র পাইপগান ফেনসিডিলসহ ০২ জন অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভূটানের রাজা ৭২ হাজার জাল টাকাসহ চক্রের সদস্য গ্রেফতার পটুয়াখালীতে শ্রমীক লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ সুন্দরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ ৯ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার র‍্যাব-৫, এর অভিযানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী দূর্গম চর হতে ১১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার’ চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রংপুরে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে কতৃপক্ষের ব্যাপক অভিজান পীরগঞ্জের ১৫টি পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ, মামলার রায় পেয়েও ১৭ মাস ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলে কাটা পড়ে কিশোরীর মৃত্যু

মাজার কর্মকর্তা কর্তৃক স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে সহযোগীতা না করার অভিযোগ.জটাধারী সাধু সন্যাসীদের মিলন মেলায় শেষ হয়ে গেলো বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে শেষ বৈশাখী মেলা

সাখাওয়াত হোসেন মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

হিন্দু ও মুসলমানের তীর্থস্থান বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে বৃহস্পতিবার (৯ মে) শেষ হয়ে গেলো বৈশাখী মেলা। প্রতি বছর বাংলা সনের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বসে এই মেলা। এ মেলায় যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী ও জিকির আজগরে মেতে ওঠেন, অপর দিকে আধ্যাত্মিক সাধনা বিশ্বাসী সাধু সন্ন্যাসী ও বাউল-সাধকরা জিকির ও মারফতী গানে মুখরিত করে পুরো গড় এলাকা,তারা সারা রাত গান গেয়ে ও গঞ্জিকা সেবন করে আসর জমায়। ইতিপূর্বে এসব আসরে পালা করে গাঁজা সেবন করতে দেখা গেলেও, বেশ কয়েক বছর ধরে অবশ্য মাজারের পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রশাসন ও এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে মাদকের কোন ধূয়া উড়তে দেয়া হয় না। তবে বেশ কিছু ভন্ড জটাধারীরা গোপনে গাঁজা সেবন করলেও সেটি মাজার এলাকার বাহিরে করে বলে জানা যায়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, এককালে বাংলার রাজধানী হিসাবে খ্যাত এই পুন্ড্রনগরের হিন্দু রাজ্যের অত্যাচারী রাজা পরশুরামকে যুদ্ধে পরাজিত করে বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল সুফী ও সাধক হযরত শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলখী (রঃ) তিনি এখানে ইসলামের পতাকা উত্তোলণ করেন। এবং নিজের সম্ভ্রম ও ধর্ম রক্ষার জন্য অত্যাচারী পরশুরামের একমাত্র বোন শীলা দেবীকে করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জনের দিন বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই থেকে হযরত শাহ সুলতানের স্মৃতি স্মরনে পরবর্তী বছর গুলোতে এই দিনে মহাস্থানে উভয় ধর্মের মানুষেরা সমবেত হয়ে পুণ্য সঞ্চয় করেন। এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগীর জন্য শাহ সুলতান বলখী (রঃ) মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু-সন্ন্যাসী, মারফতি, বাউল গায়কেরা অবস্থান নেন পার্শ্ববর্তী অলীয়ে কামেল হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) মাজার এর পশ্চিম পাশের আমবাগান, মাযারের পাশে দুধ পাথর ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকায়। মেলা শুরুর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে মাযার ভক্ত আসেকান জটাধারী, সাধু, সন্নাসী, ছিন্নমূল ভাসমান পাগল, ও ধর্ম প্রাণ মাযার জিয়ারতকারী মুসাল্লিরা। এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থানগড় এলাকা জুড়ে বসেছে এক একটি আস্তানা। হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) এর মাজার ও পশ্চিমে মহাস্থান বাগান নামক চত্বরে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে মারফতি গানের আসর বসিয়েছে বাউল সাধকরা। সন্ধ্যায় মাযারের দুধ পাথরের পাশে জটাধারী সাধু সন্যাসীদের প্রকাশ্য গাঁজা সেবন করা লক্ষ করা গেলেও পুলিশ ও মাযার প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ। মাযারের পাশে দুধ পাথর নামক স্থানে ও হযরত বোরহান আলী মাযারের পাশে জটাধারী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আশা আবুল হোসেন ওরফে শিকল বাবা সহ বেশ কয়েকজন সাধু সন্যাসীদের সাথে কথা বললে তারা আক্ষেপ করে জানান, আমরা বছরে একবার বাবার মাযারে এসে মনোবাসনা পূরনের জন্য গঞ্জিকা সেবক করে জিকির আসকারে মেতে থাকি সেখানে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা ঠিক না। মাজার এলাকায় দানের টাকা- পয়সা ও খাবার পাওয়ার আশায় অগণিত ফকির-মিসকিনও জড়ো হতে দেখা গেছে। মহাস্থানে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ও আশাপূরণের জন্য অনেকেই মাজারের পশ্চিমপাশে দুধ পাথরে দুধ ঢেলে দেয়। অনেককেই সেখান থেকে দুধ সংগ্রহ করে পান করতেও দেখা গেছে। শুধু সাধু-সন্ন্যাসী আর পূণ্যার্থীরাই নয়, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও মাজার জিয়ারত ও মেলা দর্শন করতে ছুটে আসছেন এমেলায়। এদিকে মাজারের পশ্চিম পাশের মাঠে বসেছে হরেক রকম অস্থায়ী খাবারের হোটেল, পণ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতান এর দোকানপাট। মেলায় আগতরা ফেরার পথে নানা সামগ্রী কেনাকাটা করেন। মেলাকে কেন্দ্র করে মাযারের চারপার্শ্বেই স্থাপন করা হয়েছে চোখ ঝাজালো আলোক সজ্জা টিপটপ ঝাড় বাতী। ধর্মপ্রান মানুষ যাতে নিবিঘ্নে তাদের ইবাদত বন্দেগী করতে পারে সে ক্ষেত্রে প্রশাসন থাকে তৎপর। ওই দিনে আইন শৃঙ্খলা বিহীনার অসংখ্য সিভিল ও পোশাকধারী কর্মকর্তা এবং ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট, সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে মাজারের বেশ কিছু এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় কেউ যেন কোন প্রকার মাদকদ্রব্য খাওয়া বিক্রি বা অসামাজিক কার্যকলাপ করতে না পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতায় থাকেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা । মহাস্থানগড়ের এ মেলার প্রধান আকর্ষনীয় বিখ্যাত জিনিস হল ঐতিহ্যবাহী কটকটি। আদিকাল থেকেই এটি সুনামের সাথে বিক্রি হয়ে আসছে। দুর দুরান্ত থেকে মাযারে আসা মানুষ ঐতিহ্যবাহী চাউলের ভাজা কটকটি কিনতে প্রতিটি দোকানে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে তবে পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় লোকজন কম হওয়ায় ব্যবসা ভালো হয়নি বলে জানান কটকট ব্যবসায়ীরা। মহাসড়কে জানযট মুক্ত রাখতে বগুড়া জেলা ট্রাফিক পুলিশ সার্বক্ষনিক দ্বায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। মহাস্থান মাজারের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার অসহযোগীতায় উৎসাহ উদ্দিপনায় পালিত হলো শেষ বৈশাখ। এ ধরণের সংবাদ স্থানীয় সাংবাদিকেরা কয়েকদিন পূর্ব থেকেই সংবাদ পরিবেশন করে ছিল। এবার মাজারের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কিছু অসাধু কর্মচারীর অবহেলার কারণে স্থানীয় সাংবাদিকদের আইন শৃংখোলা সভাতেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিষয়টি বগুড়া জেলা প্রশাসক ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খতিয়ে দেখা উচিৎ। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় একটি পূর্ণভূমি এর পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের নৈতিক দ্বায়িত্ব এদিন কোন প্রকার গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, লটারী, জুয়া সহ কোন প্রকার মাদক সেবন ও বিক্রি করতে দেওয়া হবেনা, তিনি আরো জানান, আইন শৃংঙ্খলা নিয়ন্ত্রন রাখতে সারে ৪ শত পুলিশ ও ২ শতাধিক স্বেচ্চাসেবী কাজ করবেন। সব মিলিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়ে গেলো বৈশাখীর শেষ বৃহস্পতিবার মহাস্থান গড়ের সাধু সন্যাসীদের মিলন মেলা।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/৯ মে ২০১৯/ইকবাল

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর