March 19, 2024, 12:11 pm

সংবাদ শিরোনাম
সিলেট তামাবিল মহাসড়কে ক্যারিক্যাব ও পিকআপের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত ৭ কুড়িগ্রামে ৩ শতাধিক রোগীদেরকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান কুড়িগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচারণায় পুলিশ সিংড়ায় চলনবিলে সরকারী খাল দখলমুক্ত হওয়ায় মাছ ধরলো শত শত মানুষ র‍্যাবের অভিযানে রাজশাহীর বানেশ্বরে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের সময় চক্রের মূলহোতা’সহ গ্রেফতার- ৩ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন তিস্তা ইউনিভার্সিটিতে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দলবদ্ধ হামলা লুটপাট ও ভাঙচুর, রমেকে ভর্তি র‍্যাবের অভিযানে জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ফেন্সিডিল ও নগদ অর্থ উদ্ধার’ ০৮ পেশাদার জুয়ারী ও মাদকসেবী গ্রেফতার চিনিকলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বেতারের সাবেক শিল্পী নাজমুল ইসলামের ইন্তেকাল

নবীগঞ্জে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে গ্রামবাসী না গেলে জরিমানার হুমকি!

বুলবুল আহমদ, নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃঃ

পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১৩/১৩টি পরিবারের মানুষ দিশেহারা! দেশ- বিদেশে সমালোচনার ঝড়। বেরিয়ে এলো তলের বিড়াল।

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে সাতাইহাল ৬মৌজা কর্তৃক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায়
অনুসন্ধানি তথ্যে বেড়িয়ে আসলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার মূল নায়ক বহুল সমালোচিত ইমদাদুর রহমান মুকুল। তিনি অসহায় গরিবের চাল আত্মসাত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হন। এবং চাল চুরির দায়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবার অসহায় দিন মজুর মানুষের বাড়ি- ঘরে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গিয়ে ফের আলোচনায় এখন মুকুল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানাযায়- ঘটনার আগেরদিন সাতাইহাল ৬মৌজার বৈঠক ছিল। এ বৈঠকে নোয়াগাঁও গ্রামের লোকজনকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়টি অবগত ছিল থানা প্রশাসন। নোয়াগাঁও গ্রামের তান্ডবে সাতাইহাল ৬মৌজার লোকজনের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে নেয়া হয় কঠোর সিদ্ধান্ত। ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে ৬মৌজার কেউ না গেলে  তাদের উপট ১২ হাজার টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছয় মৌজার অনেকেরই সাথে আলাপকালে তারা জানান, গত (২৯মে) শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলী বাজারে সাতাইহাল ৬মৌজার এক জরুরী বৈঠকের আহবান করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, গজনাইপুর ইউনিয়নের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল। ঐ বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে গত (২৬মে) রাতে পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের রোক্কা বিলের পাশ্ববর্তী তাঁর ব্যক্তি মালিকানাধীন ফিশারির পাহাড়াদার আবুল মিয়া ও তার স্ত্রী জারু বেগমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনা ও পরবর্তীতে থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি অবগত করেন। বৈঠক চলাকালীন সময়ে আলোচনা সাপেক্ষে এক পর্যায়ে ৬মৌজার বৈঠকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের ঘোষনা করেন, ইমদাদুর রহমান মুকুল।
এ সিদ্ধান্তের নির্দেশ দেয়া হয় গত রবিবার (৩০মে) সকালে। এতে ৬মৌজার সকল লোকজন একত্রিত হয়ে নোয়াগাঁও’র হাওড়ে গিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের উচ্ছেদ করতে হবে। একই সাথে ৬মৌজার কেউ এই উচ্ছেদে না গেলে ১২ হাজার টাকা করে জরিমানা করারও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত ৬মৌজার বাহিরের কাউকে জানালে আরো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতার মালা পড়িয়ে ছয় মৌজা প্রদক্ষিণের সিদ্ধান্তও হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত রবিবার সকালে ৬ মৌজার ২ থেকে ৩ হাজার লোকজন একত্রিত হয়ে নোয়াগাঁও হাওড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে সেখানে তারা চলে যায়।
অন্যদিকে (২৯মে) রাতেই সাতাইহাল ৬মৌজা কর্তৃক সহিংসতার সিদ্ধান্তের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উধ্বর্তন কর্তকর্তাদের অবগত করেন, পানিউমদা ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় লোকজন। এর ফলে ঘটনার ১ দিন আগে থেকেই সহিংসতার বিষয়ে অবগত ছিল প্রশাসন।
এ খবরে রবিবার (৩০মে) সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন ও নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. ডালিম আহমেদ বিপুল সংখ্যক পুলিশসহ সাতাইহাল গ্রামে গিয়ে নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের সহিংসতায় না জড়াতে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে
সাতাইহাল ৬মৌজার লোকজন ততক্ষণে নোয়াগাঁও’র হাওড়ে পৌঁছে তাদের ঘর- বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। কৌশলগত কারণে ঘটনাস্থলে যাতে পুলিশ না যেতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে কথার মারপ্যাচে আটকে রাখে নুর উদ্দিন, ইমদাদুর রহমান মুকুলসহ ৬মৌজার কিছুমসংখ্যক গ্রাম্য মাতব্বররা। কিন্তু মুকুলের নির্দেশে সময় মতোই শুরু হয় এ নারকীয় তান্ডব।  প্রায় ৩০ মিনিট পর খবর পেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা র‌্যাব ও পুলিশকে নিয়ে নোয়াগাঁও’র হাওড়ে পৌছাঁলে ততক্ষণে সাতাইহাল ৬মৌজার লোকজনের দেয়া আগুনের লেলিহান শিখা নোয়াগাঁও গ্রামের অসহায় মানুষের ১৩/১৪টি ঘর পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। শুরু হয় অসহায় মানুষের আহাজারী। সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে নিরপরাধ অসহায় মানুষ। তাদের চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠেছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরে থাকা আসবাবপত্র সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায়। লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয় ধান, ঘরের আসবাবপত্রসহ অনেক জিনিস। এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের টিন, নগদ অর্থ, চাল ও খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে।
উক্ত ঘটনায় গত (১জুন) পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুস শহীদের পুত্র জামাল হোসাইন বাদী হয়ে নুর উদ্দিন (বীরপ্রতিক), গজনাইপুর ইউনিয়নের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলসহ ৪৭জনের নাম উল্লেখ করে ও ২ আড়াইশ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারেও গত (২৯ মে) শনিবার রাতের সাতাইহাল ৬মৌজার বৈঠকে ইমদাদুর মুকুলের নির্দেশে নোয়াগাঁও গ্রামের হামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ওই হামলায় আগুণে পুড়ে প্রায় ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ৫শ টাকার মালামাল পুড়িয়ে নষ্ট করা হয় এবং ৩১ লক্ষ ৭২ হাজার ৬শত টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়। এঘটনার পর তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে গজনাইপুর ইউনিয়নের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলসহ ৯জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেন, বিষয়টি ঘটার পূর্বেই অবগত হয়ে আমরা (৩০মে) সকালে সাতাইহাল হায়রা ঘাটে পৌঁছি। কিন্তু ভোর থেকেই সাতাইহাল ৬মৌজার দুষ্কৃতিকারী লোকজন নোয়াগাঁও গ্রামের হাওড়ে যেতে শুরু করে। আমরা সেখানে পৌঁছে স্থানীয় মুরুব্বিয়ানদেরকে আহবান করি। এবং তাদের লোকজনকে ফিরিয়ে আনার জন্য মাইকিংও করা হয় । তখন সেখানে উপস্থিত নেতৃস্থানীয় লোকজন প্রশাসনকে আশ্বস্থ করেন যে, ৬মৌজার মানুষ কোনো ধরণের সহিংসতায় যাবেনা এবং ফিরে আসবে। তাদের আশ্বাসের পরও এরকম ঘটনা ঘটলো এটা সত্যিই দুঃখজনক। যে বা যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত আমরা অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনবো। তিনি আরো বলেন, ৬মৌজার বৈঠকে (৩০মে) সকালে নোয়াগাঁও গ্রামে যদি কেউ না যায় তাহলে তাকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সে বিষয়টি আমি ঘটনার পরবর্তীতে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে অবগত হয়েছি।
Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর