March 19, 2024, 4:35 pm

সংবাদ শিরোনাম
সিলেট তামাবিল মহাসড়কে ক্যারিক্যাব ও পিকআপের সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত ৭ কুড়িগ্রামে ৩ শতাধিক রোগীদেরকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান কুড়িগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচারণায় পুলিশ সিংড়ায় চলনবিলে সরকারী খাল দখলমুক্ত হওয়ায় মাছ ধরলো শত শত মানুষ র‍্যাবের অভিযানে রাজশাহীর বানেশ্বরে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের সময় চক্রের মূলহোতা’সহ গ্রেফতার- ৩ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে লালমনিরহাট জেলা পুলিশের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন তিস্তা ইউনিভার্সিটিতে বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দলবদ্ধ হামলা লুটপাট ও ভাঙচুর, রমেকে ভর্তি র‍্যাবের অভিযানে জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ফেন্সিডিল ও নগদ অর্থ উদ্ধার’ ০৮ পেশাদার জুয়ারী ও মাদকসেবী গ্রেফতার চিনিকলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বেতারের সাবেক শিল্পী নাজমুল ইসলামের ইন্তেকাল

গণমাধ্যম কর্মীরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন

গণমাধ্যম কর্মীরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন

বাংলাদেশ নানাবিধ দূষণে জর্জরিত। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ ইত্যাদি বর্তমানে তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। নগর জীবনে শব্দদূষণ দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে শব্দের মাত্রা ৫৫ ডেসিবেলের বেশি হলেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শ্রবণক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও শব্দদূষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এজন্য প্রয়োজন তাদের এ বিষয়ে তথ্য প্রদান এবং এক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আজ ০৯ জুন ২০২১ পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প এর আওতায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের/গণমাধ্যমকর্মীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। যেকোন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীগণ বরাবরই ভূমিকা রেখেছেন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণেও তারা কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন বলে কার্যক্রমে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক জনাব মো হুমায়ুন কবীর (যুগ্ম সচিব)। তিনি বলেন, শব্দদূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০-২০২২ মেয়াদে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রনে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম কর্মীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম/ফোরাম বা মঞ্চের মাধ্যমে তারা শব্দদূষণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারেন। বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ, বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ, যৌতুক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সংবাদ কর্মীরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণেও আমরা তাদের পাশে পাবো বলে বিশ্বাস করি।
আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা। তিনি বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংবাদ কর্মীরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন, যেমন- সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, গবেষণা নির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ, শব্দের উৎস ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ, নিয়মিত শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যবিধি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ, শব্দদূষণের ক্ষতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশ, ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ, টিভি চ্যানেলগুলোতে স্ক্রল ও টিভিসি প্রচার, দিবসভিত্তিক প্রচারণা ইত্যাদি। এছাড়াও সাধারণ জনগণের মতামত প্রচারের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরকে তারা পরামর্শ প্রদান করতে পারেন।
আয়োজনে অপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আয়োজনের বিশেষ অতিথি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান যত এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের জীবন সহজ হয়ে উঠছে। সেই সাথে আমাদের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। তিনি শব্দদূষণ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে। শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্লান্তি, অবসাদ, অনিদ্রা, মানসিক চাপ ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয় মর্মে জানান। শব্দদূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তিনি শিশুর জন্ম নেয়ার পিছনে উচ্চ শব্দের একটি ভূমিকা রয়েছে। তিনি শ্রবণক্ষমতা কম এবং এমন শিশু/ব্যক্তিরাসহ অটিস্টিক শিশুরা সামাজিকভাবে মেলামেশা এড়িয়ে চলে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব মুকিদ মজুমদার বাবু বলেন, যানবাহনজনিত শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক আইন খুব কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। শব্দদূষণের উৎস যেমন কলকারখানা বা নির্মাণকাজে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যেও সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। যে ধরণের সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করে শব্দদূষণের ক্ষতি হ্রাস করে তাদের কাজ করার কথা, সেগুলো ব্যবহার করা হয় না। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে শব্দদূষণের ক্ষতি ও উত্তরণের উপায় বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা  আসবে।
আয়োজনের বিশেষ অতিতি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, শব্দদূষণের ভয়াবহতার ফলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প এর আওতায় কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হবে বলে আমরা আশা করি। এ জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের পক্ষ থেকে আমরা প্রচারণা ও মিডিয়া কাভারেজের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা হবে মর্মে জানান।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রধান অতিথি তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য অফিসার জনাব সুরথ কুমার সরকার বলেন, যেকোন ক্যাম্পেইন সফল করতে হলে পরিকল্পনা ও অর্থের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারদের সম্পৃক্ত ও সচেতন করা জরুরি। মানুষকে সচেতন করার জন্য তথ্য প্রদান করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মিডিয়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শুধু তথ্য দেয়া বা ক্যাম্পেইন করাই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি এর ফলাফল নিশ্চিত করাও জরুরি। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জনমানুষকে সাথে নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। এ বিষয়ে প্রচারের জন্য তথ্য অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা থাকবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে সচেতনতামূলক ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে মর্মে জানিয়ে তিনি সংবাদ ও মিডিয়া কর্মীদের আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মো: আশরাফউদ্দিন। তিনি বলেন, আজকের আয়োজনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, পাঠ্যপুস্তকে শব্দদূষণের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা, আইনের কঠোর প্রয়োগ, শিল্প-কারখানায় সহায়ক উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আমরা সচেষ্ট থাকবো। আগামী সপ্তাহ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে আগারগাঁও এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা অন্য এলাকায় একই কার্যক্রম পরিচালিত করবো।
আয়োজনে গণমাধ্যম কর্মীগণ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন, যেমন- বিধিমালা সংশোধন, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, হাইড্রলিক হর্নের আমদানি বন্ধ, সরকারি গাড়িতে হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধ, নীরব এলাকা ঘোষনার পাশাপাশি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে শব্দদূষণের বিষয়টি যুক্ত করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
আয়োজনটিতে অংশগ্রহণ করেন অংশগ্রহণ করেন …

ধন্যবাদসহ

মোঃ হুমায়ুন কবীর
অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও
প্রকল্প পরিচালক,
পরিবেশ অধিদপ্তর
ফোন: ৮১৮১৭৬৭

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর