ইদলিবে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির আলামত দেখেছে যুক্তরাষ্ট্র
ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়াবিষয়ক নতুন মার্কিন উপদেষ্টা জিম জেফ্রে দাবি করে বলছেন, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা ইদলিবে দেশটির সরকার রাসায়নিক অস্ত্র প্রস্তুত করছে বলে ‘প্রচুর আলামত’ থাকার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার আশঙ্কা, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিতেও অভিযান চালানো হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। গত ১৭ আগস্ট জিম জেফ্রেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ঘোষণা করা হয়। নিয়োগ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেসময় জেফ্রে সতর্ক করে বলেন, ইদলিবে বড় ধরনের অভিযান ও রাসায়নিক হামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেফ্রে বলেন, ‘আমি খুব নিশ্চিত এসব সতর্কতা দেওয়ার পেছনে খুব শক্ত ভিত্তি আছে। যেকোনও আক্রমণই আমাদের জন্য আপত্তিযোগ্য। এ ধরনের হামলাকে বেপরোয়া বিবেচনা করি আমরা। রাসায়নিক অস্ত্র যে তৈরি হচ্ছে সে ব্যাপারে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।’ বিদ্রোহীদের সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি ইদলিবের ভাগ্য কী হবে তা গতকাল শুক্রবার তেহরানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে। আসাদের মিত্র রাশিয়া ও ইরান এবং বিদ্রোহীদের মিত্র তুরস্কের মধ্যে এ বৈঠক হবে। গত বৃহস্পতিবার জেফ্রে বলেন, ‘রাশিয়া যদি তুর্কি আলোচকদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চায় তবে আগামীকাল আমরা কোনও একটা পথ খুঁজে বের করব।’ এ মাসের শেষের দিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরান ইস্যুতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধে তেরানের হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে। জেফ্রে জানান, জাতিসংঘের বৈঠকের ফাঁকে আলোচনায় বসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, জার্মানি ও ব্রিটেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ফ্রান্স। জেফ্রে মনে করেন, শাসক হিসেবে সিরিয়ায় আসাদের কোনও ভবিষ্যত নেই। তবে তাকে উৎখাত করার দায়িত্ব ওয়াশিংটনের ওপর বর্তায় না। তিনি জানান, সিরিয়ায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে। উল্লেখ্য, সিরিয়ায় আসাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভ্যুত্থান থেকে যে সংঘর্ষের শুরু,তা পরবর্তীতে বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান ও ইসরায়েলের মতো বিদেশি শক্তিগুলো যুদ্ধরত ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করছে আসাদ সরকারকে। নিজের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে অস্ত্র পর্যন্ত সবই রাশিয়া দিয়েছে আসাদের সমর্থনে। এমন কী জাতিসংঘে কূটনৈতিক সমর্থনও নিশ্চিত করেছে সিরিয়ার জন্য। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে রাশিয়া দেশটিতে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে। তাদের ভাষায় এইসব সন্ত্রাসীরা আইএসের সদস্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বারবার অভিযোগ করেছে রাশিয়া আইএস দমনের অজুহাতে তাদের সমর্থিত বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা করছে। অন্য দিকে রাশিয়াও অভিযোগ করেছে,যুক্তরাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে এমনভাবে ব্যবহার করছে যেন রাশিয়া ও সিরীয় বাহিনীর অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়। রাশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বি ইরানও সমর্থন করে আসাদকে। সিরিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই তুরস্ক আসাদবিরোধীদের সমর্থন করছে। কুর্দি ব্যতীত অন্যান্য সরকারবিরোধী শক্তি যেমন ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মির’ সঙ্গে তারা আসাদবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জোটের অংশ তুরস্ক আইএসের অবস্থানের ওপর যেমন হামলা করেছে তেমনি একতরফাভাবে কুর্দিদের অবস্থানের ওপরও হামলা করেছে।