রোগী মারার না বাঁচানোর ডাক্তার হচ্ছে তা দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেডিকেল কলেজগুলোর পড়াশুনার মান কঠোরভাবে তদারকি করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোগী মারার ডাক্তার হচ্ছে, নাকি রোগী বাঁচানোর ডাক্তার হচ্ছে, এটা একটু ভালো করে দেখতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের অর্থে সংগৃহীত সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জাপান থেকে আনা সর্বাধুনিক এ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিককে। প্রথম ধাপে সাতটি দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ৫০০ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ আমরা দিয়েছি। …মেডিকেল কলেজগুলো আমরা করে দিচ্ছি, কিন্তু তার মানটা বজায় রাখতে হবে যে, কী চিকিৎসা বা কী শেখানো হচ্ছে। রোগী মারার ডাক্তার হচ্ছে, নাকি রোগী বাঁচানোর ডাক্তার হচ্ছে। এটা একটু ভালো করে দেখতে হবে। পড়াশোনা, কারিকুলাম দেখতে হবে। এসময় হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন শেখ হাসিনা। ভালো মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলো অন্যান্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সারা বাংলাদেশে আমাদের ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। পৃথিবীটা এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। …ভালো মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসগুলো যেন তারা দেখতে পারে। ক্লাসগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করা হলে অনেকে লাভবান হবে। বাংলাদেশে বিদেশি চিকিৎসক আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু বিদেশি চিকিৎসককে আমাদের দেশে আসতে দেওয়া উচিত, পড়ানোর জন্য। তাদের এখানে পড়ানোর সুযোগ দেওয়া হলে এদের সঙ্গে কাজ করে আমাদের এখানকার ডাক্তাররা অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেন। তাহলে আমাদের রোগীদের আর বিদেশে যেতে হয় না। দেশে গ্যাস্ট্রোয়েন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাতেগোনা কয়েকজন গ্যাস্ট্রোয়েন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন। অথচ বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ পেটের পীড়ায় ভোগে। গ্যাস্ট্রোয়েন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও বিশেষায়িত এ বিভাগকে সমৃদ্ধ করারও নির্দেশনা দেন তিনি। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোয়েন্টারোলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রথম ধাপে দেওয়া সাতটি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বান্দরবান সদর হাসপাতাল, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, খুলনার ফুলতলা, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। মফস্বলের সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে না থেকে যদি তারা শুধু ঢাকায় আসতে চায় তবে সরকারি চাকরি করার কোনো প্রয়োজন নেই। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় এসে ব্যক্তিগতভাবে রোগী দেখতেও তাঁদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কয়েকটি জেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁকে ডাক্তার আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, কিন্তু যেই আমরা পাঠাচ্ছি উপজেলায় সেখানে না থেকেই, সরকারি চাকরি হলেই এই সমস্যাটা হয়। যেই আমরা দিয়ে দিচ্ছি ওমনি কোনোভাবে কায়দা টায়দা করে ঢাকায় এসে বসে থাকবে। তো এভাবে যদি কেউ চলে আসে তাহলে তার চাকরি করার তো দরকার নেই। ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেই তো অনেক টাকা পাবে। দয়া করে তারা বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে যাক, আমরা নতুন নিয়োগ দেব। একটা সমস্যা আমি বের করেছি- সেটা হচ্ছে তাঁদের আবাসিক সমস্যাটা। সেজন্য ইতিমধ্যেই গণপূর্তকে আমি নির্দেশ দিয়েছি মানে প্রত্যেক উপজেলায় একটা মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং যদি করে দেয় যেটা অনেক কাজে ব্যবহার করতে পারে। যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবে। নিজের বক্তব্যে দ্বীপ ও হাওড় অঞ্চলের জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দ্বীপাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স খুব দরকার। হাসপাতাল ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হলে তাৎক্ষণিক সারিয়ে নিতে আলাদাভাবে ‘রক্ষণাবক্ষণ বাজেট’ খাত তৈরিরও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌছে দেওয়াই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো সব বিভাগীয় শহরেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানান শেখ হাসিনা। শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কৃমির ওষুধ বা টিকা দেওয়ার আগে কিছু খাওয়ানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের অভিভাবকেরা অনেক সময় খালি পেটে কৃমির ওষুধ খাওয়ান তাদের শিশুদের। কিন্তু ভর পেটে এ ওষুধ খাওয়ালেই সেটার কার্যকারিতা থাকে ভালো। তাই শিশুদের ভরপেটে কৃমির ওষুধ খাওয়ান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।