নাগরিকদের সমালোচনার অধিকার আছে, ধ্বংসের নয়: রুহানি
ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মন্তব্য করে বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার ইরানিদের আছে; কিন্তু নিরাপত্তাকে বিপন্ন করার অধিকার তাদের নেই। গত রোববার দেশটির মন্ত্রীসভার এক বৈঠক চলাকালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি, জানিয়েছে বিবিসি, বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ সময় সমস্যা থাকার কথা স্বীকার করে নিয়ে তা সমাধান করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি, কিন্তু সহিংসতা সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করেছেন। ইরানের সরকারি গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী রুহানি বলেছেন, “দেশের উন্নয়নের পথ দেখায়, সরকারের এমন সমালোচনা ও প্রতিবাদ করার বিষয়ে (ইরানিরা) পুরোপুরি স্বাধীন। “কিন্তু যারা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করছে, আইন-শৃঙ্খলা লংঘন করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, সরকার তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখাবে না।” সরকারের সমালোচনা প্রকাশ করা আর সহিংসতা ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিরাজমান ক্ষোভ, সরকারি কাজে স্বচ্ছতার অভাব ও দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি, পাশাপাশি নিজের সফলতাগুলোও তুলে ধরেছেন। গত রোববারও দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। প্রতিবাদ সংগঠিত করতে এসব নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে অভিযোগ। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরিবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শান্তি বজায় রাখার জন্য’ টেলিগ্রাম ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাপসের ওপর ‘অস্থায়ী’ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি শহরে মূলত অথনৈতিক দুরবস্থা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন স্থানীয় বিক্ষুব্ধরা। পরে তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চারদিন ধরে চলা এ বিক্ষোভে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে শ্লোগান ওঠে। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতি ও সংঘাতে প্রেসিডেন্ট রুহানি ও ইরানের হস্তক্ষেপ নিয়েও ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীরা। গত শনিবার রাজধানী তেহরানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি ব্যাংক ও সরকারি ভবনে ভাংচুর করেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়। ওইদিন রাতে পশ্চিমাঞ্চলীয় লরেস্তান প্রদেশের শহর দরুদে দুই বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া দাঙ্গা পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে প্রতিবাদকারীরা। অপরদিকে প্রাদেশিক গভর্নর হাবিবোল্লাহ খোজাস্তেহপুর তাদের মৃত্যুর জন্য বিদেশি চরদের দায়ী করেছেন। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট মেহমুদ আহমাদিনেজাদ বিতর্কিতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। তারপর থেকে এবারের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকেই দেশটির জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক প্রকাশ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।