কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা। আর এ পূর্ণিমা তিথিতে রাস উৎসব পালনে দেশী-বিদেশী পুণ্যার্থী, সাধু-সন্যাসী ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাস উৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাসভক্ত নর-নারী ছাড়াও অন্য ধর্মের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটেছে। আজ শুক্রবার অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী রাসমেলা। রাস উৎসবকে ঘিরে কুয়াকাটাসহ কলাপাড়ার গোটা উপজেলায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেবাশ্রম প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নির্বিঘেœ এ রাস মেলা ঘিরে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হিন্দু ধর্মীয় মতে, দাপরযুগে কংশ রাজার অত্যাচারে যখন মানবকুল অতিষ্ঠ, তখন অত্যাচারী রাজার হাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষায় ধরাধামে আবির্ভূত হন ভগবান রূপে শ্রীকৃষ্ণ। অলৌকিক ক্ষমতাবলে কংস রাজাকে বধ করে মানবকুলকে রক্ষা করেন। পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে হিংসা, হানাহানি, বিদ্বেষ মোচন করে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় করতে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে বৃন্দাবনের গোকুলে তমাল ও কদমকুঞ্জে পূর্ণিমার এই তথিতে নিষ্কাম প্রেমে মিলিত হয়ে এক উপাখ্যানের রচনা করেন। যা তখন থেকে রাস উৎসবে পরিণত হয়। বৃন্দাবনের মদন মোহন মন্দিরের ঠাকুরের অনুমতি নিয়েই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে রাসপূর্ণিমার এ পূজা ও রাসলীলা উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। ওই সময় থেকেই কুয়াকাটায় শুরু হয় সাগরে পুণ্য¯œান।
যাতায়াত ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রস্থ নৈতিকের কারনে প্রায় দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা উৎসবে দিনদিন বাড়ছে সমাগম। প্রত্যেক বছর কার্তিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের রাতে কুয়াকাটায় রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রাঙ্গনে ধর্মীয় উৎসব চলে। স্থাপন করা হয় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। পর্যাপ্ত হোটেল-মোটেল না থাকায় পুণ্যার্থীদের আবাসন সুবিধায় স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়।
রাসমেলায় আগতদের থাকা খাওয়া নির্বিঘœ করতে আবাসিক হোটেল ভাড়া ও রেস্তরাঁয় খাবারের তালিকামূল্য টাঙ্গানো, সুপেয় পানি ও পর্যাপ্ত স্যনিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করণ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করে ইতোমধ্যে পৌরসভা থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে চারদিকে দুই কিমির মধ্যে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল রাখার পাশাপাশি পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখার কথা জানানো হয়েছে।
কুয়াকাটা অনন্যা ভিলা রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত অনন্ত মুখার্জী জানান, রহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আমরা এবার সাদামাটা রাস উৎসব পালন করছি। অনন্যা ভিলা রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে স্থাপিত মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের চার ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ১৬৩ কেজি ওজনের যুগল প্রতিমা দর্শনেও ভিড় জমবে হাজারো ভক্তের। আর এ ভক্তদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে খাবারের।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের জোনের এ.এস.পি মো.আ.করমি জানান, রাস উৎসবে আগত সকল তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমাদের সব রকম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তানভির রহমান সাংবাদিকদের জানান, সকল প্রস্তুতির পাশাপাশি রাস উৎসবে আগত সকল তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনকে প্রস্তুতি করা হয়েছে।