রংপুর ব্যুরো
গত দুইদিনে ৮ ও ৯ আশ্বিন শনিবার ও রবিবার এক টানা থেমে থেমে মাঝে মধ্যে ভারি বর্ষনে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। রংপুর বিভাগে ১৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানা যায়। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৪১৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার। আর শুধু রংপুরে ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলের বৃষ্টির কারণে নিম্ন অঞ্চল ও নদ-নদীতে ও খাল বিলে পানিততে ভড়ে উঠে। একটানা বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বিপাকে ও ভীত গ্রস্থ হয়ে উঠেন শহর অঞ্চলের অনেক এলাকার সাধারণ পরিবার ও মানুষ।
সড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা কমেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে অনেক মার্কেট, খোলা হয়নি দোকানপাট। এদিকে কাজের মংগায় বিপাকে রয়েছেন দিনমজুর ও শ্রমিকেরা। নতুন ধান রোপন করা কৃষকদেরও কপালে পড়েছে চিন্তায় ভাঁজ।
রংপুর নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রবাহপ্রাণ এক মাত্র শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল। এই দুই খাল গেল কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে এখন উপচেপড়া পানি নিষ্কাশনের অবস্থা একে বারে অচল ও ধীর গতি। অতচ, রংপুর শহরের একমাত্র এই শ্যামা সুন্দরি খাল সংস্কারের জন্য মানিক চেয়্যারমেন ও ঝন্টুর আমলে ২৫ কুটি টাকা বরাদ্ধ থাকলেও কাজের কাজ কিছুই হয় নাই।
অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতায় বিড়ম্বনায় পড়েছে এই খেটে খাওয়া অসহায় পরিবার গুলি।
নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়াতে ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মতো শহর ডুবে যাবার আশঙ্কা ও ভয় আতংক বসেছে অনেকের মনে।
আষাঢ়-শ্রাবণকে হার মানিয়ে আশ্বিন মাসে অসময়ের এই অবিরাম বৃষ্টিপাতে নদীপাড়েও আবার বন্যার শঙ্কা জেগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর মুলাটোল, কেরানী পড়ার নিম্ন অঞ্চল, লালবাগ, খামার মোড়, নেসকো গেট, নূরপূর, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, নিউ জুম্মাপাড়া, পূর্ব জুম্মাপাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, মহাদেবপুর, কামারপাড়া, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, দর্শনা, আশরতপুর, ধাপ এলাকা, মুন্সিপাড়া, হনুমানতলা, মুলাটোল, মেডিকেল পাকার মাথা ও জলকরসহ বিভাগের আট এলাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুর নগরীর কলেজ রোড নেসকো ওয়াবদা মোড় এলাকার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষজন ঠিক মতো চলাচল করতে পারছে না। ড্রেনের মুখগুলো ময়লা-আবর্জনার বন্ধ হওয়াতে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। চারতলা মোড় মাষ্টার পাড়া রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ কর্ম মুখি মানুষ। বৃষ্টির কারণে প্রায় সব কিছুই অসম্ভব হয়ে উঠে। শহর অঞ্চলে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। ২০২০ সালে এরকম অতি ভারী বর্ষণে পুরো রংপুর নগর পানিতে ডুবেছিল। সেবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে যা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। বিরতিহীনভাবে পরের দিন সকাল পর্যন্ত গড়ায়, যা স্মরণকালেও ঘটেনি। এই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৪৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। বিগত এক শতাব্দীতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা বলেন গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে হওয়া ১ হাজার ৩০০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ৪১৫.৪ মিলিমিটার এবং রংপুরে ১৬২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও দিনাজপুরে ৩১৮.৪ মিলিমিটার, নীলফামারী ডিমলায় ২০৪.৭, পঞ্চগড়ে ১৩৭ মিলিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ।