সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন কমেছে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
আগাম বন্যার কারণে গত অর্থবছর দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ নয় লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন কমেছে বলে জানিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আউশ, আমন ও বোরো ধান এবং গম, ভুট্টা ও আলুর উৎপাদনের হিসাব তুলে ধরেন।
মোজাম্মেল জানান, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২২ দশমিক ৮৮ লাখ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ২১ দশমিক ৩৩ লাখ মেট্রিক টনে নেমে আসে।
তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমন উৎপাদন বেড়েছে। এই অর্থবছরে ১৩৬ দশমিক ৫৬ লাখ মেট্রিক টন আমন উৎপাদন হয়েছে, যা আগের অর্থবছর ছিল ১৩৪ দশমিক ৮৩ লাখ মেট্রিক টন।
আগাম বন্যায় এবার বোরো ধানের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান বিবিএস সচিব।
মার্চ থেকে মে- এই তিন মাস বাংলাদেশে বোরোর চাষ হয়। গত অর্থবছর এই মৌসুমে ১৮৯ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছিল। আর এবার বন্যার কারণে তা কমে হয়েছে ১৮০ দশমিক ১৩ লাখ মেট্রিক টন।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে গম উৎপাদনও আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কমেছে বলে জানান মোজাম্মেল হক।
তবে গত অর্থবছর আলুর উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যেখানে ৯৪ দশমিক ৭৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল, সেখানে ২০১৬-১৭ সময়ে হয়েছে ১০২ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন।
বেড়েছে ভুট্টার উৎপাদনও। আগের অর্থবছরের ২৪ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে হয়েছে ২৭ দশমিক ৫৮ লাখ মেট্রিক টন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, বোরো ধানের উৎপাদন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সার্বিকভাবে খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে।
খাদ্য পণ্যের উৎপাদন কমলেও গত অর্থবছরে কৃষি খাতে ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন মন্ত্রী।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হিসাব করতে খাদ্য পণ্যের বাইরেও অন্যান্য কৃষি পণ্যের হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বন্যায় ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকলে সরকার আমদানি শুল্ক কমানোসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়। জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করা হয় প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য।
তারপরও বাজারে চালের দাম সেই অনুপাতে কমছে না কেন- এ প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “সরকার বাজারে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি। কারণ বাজারে হস্তক্ষেপ করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তখন মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করত। আমরা চাই স্বাভাবিক নিয়মে সবকিছু চলুক।”
তিনি বলেন, সরকার চাইলে হাওর এলাকায় বাজারে হস্তক্ষেপ করে দাম কমাতে পারত। কিন্তু তা না করে ওই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে খাবার দেওয়া হয়েছে।
“এতে ‘খাবার নেই’ এই ভয় মানুষের মধ্যে কমে আসবে। এভাবে আস্তে আস্তে খাবারের দামও কমে আসবে।ৃ আগে বাণিজ্যমন্ত্রী বাজারে গিয়ে মনিটরিং করতেন। এতে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতির সৃষ্টি হত। আমরা মনে করি বাজারের নিয়মেই বাজার চলবে।”
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজবের কারণেও বাজারে দাম বেড়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “এখন সোশাল মিডিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা গুজব ছড়াচ্ছে। তাতে একবার ছড়িয়ে দিল যে ভারত থেকে আর চাল আসবে না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই মিথ্য তথ্য দিয়ে কয়দিন জিনিসের দাম বাড়াল।”