ভারতে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হামলায় ৩ দলিত নিহত
ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের উপস্থিতিতে পায়ের ওপর পা তুলে বসার জন্য ওই দুই দলিতকে অপদস্থ করা হয়। কারণ নিম্নবর্ণের দলিতরা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সামনে পায়ের ওপর পা তুলে বসবে তা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের দৃষ্টিতে অসম্মানজনক। তামিলনাড়ু প্রদেশে ৩ জন দলিতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা। ঘটনার শুরু যথযথ সম্মান না দেখানোর অভিযোগ থেকে। দুই জন দলিত পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকায় উচ্চবর্ণের হিন্দুরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করার অভিযোগ করেছিল। সংশ্লিষ্ট দুই জন দলিতকে তারা এ নিয়ে অপদস্থও করেছিল। রুশ সংবাদসংস্থা স্পুতনিক লিখেছে, দলিতরা থানায় অভিযোগ জানালে গ্রেফতার করা হয় উচ্চবর্ণের এক হিন্দুকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা দলবেঁধে হামলা চালায়। ওই হামলায় নিহত হয় ৩ জন। আহত হয় আরও ৬ দলিত। হামলার ঘটনা ঘটে গত সোমবার প্রদেশটির শিভগাঙ্গা জেলার কাচানাথাম গ্রামে। মাদুরাইভিত্তিক এনজিও এভিডেন্সের পরিচালনা প্রধান এ কাথির জানিয়েছেন, ঘটনার শুরু গত ২৩ মে। ওই দিন কারুপাসামি মন্দিরের সামনে থেইভেনথিরান ও প্রবাকারান নামের দুই দলিতকে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে দুইজন উচ্চবর্ণের হিন্দু আপত্তি তোলে। উচ্চবর্ণের হিন্দু ও নিম্নবর্ণের দলিতদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে দলিতদের পক্ষে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে চান্দ্রাকুমারা নামের একজনের কথা উল্লেখ করা হয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠালে অভিযুক্তের ১৯ বছর বয়সী ছেলে সি সুমন প্রতিশোধ নিতে জনা বিশেক সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে দলিতদের বাড়িতে হামলা চালায়। রাত ৯টার পর চালানো ওই হামলার সময় তারা বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মুম্বাই মিরর উল্লেখ করেছে, চান্দ্রাকুমারা ও তার ছেলের সঙ্গে আগে থেকেই দলিতদের আসন্ন পূজা নিয়ে মতদ্বৈততা চলছে। তাছাড়া দলিতদের শহরের রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়ার কথা বলার পরও তারা তা করতে রাজি হয়নি। সেটাও উত্তেজনায় বাড়িয়ে তুলেছিল। ইন্ডিয়া টাইমস জানিয়েছে, হামলার পর আহত দলিতদের ২ জন হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যায়। আরেক জন আহত দলিত গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ৬ জন দলিত আহতও হয়েছেন। হামলাকারীরা তাদের বাড়িঘরেরও ক্ষতিসাধন করে। দলিতরা তামিল নাড়ুতে ‘আদি দ্রাবিড়’ নামেও পরিচিত, যাদেরকে ‘অস্পৃশ্য’ মনে করা হয়। দলিতরা ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ হলেও আর্থসামাজিক অবস্থায় ঐতিহাসিক কাল থেকে তারা পিছিয়ে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হওয়া বৈষম্য ও বঞ্চনা বন্ধে বারংবার চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে নিয়মিত সহিংসতা, ধর্ষণ ও জমি দখলের শিকার হতে হয়। ইন্ডিয়া টাইমস জানিয়েছে, পুলিশ কদাচিৎ তাদের পক্ষে কাজ করে। তামিলনাড়ুতে অস্পৃশ্যতার ধারণা দূর করতে কাজ করা সমাজকর্মী চেল্লাকান্নু ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ডিএনএকে বলেছেন, কাচানাথাম নামের যে গ্রামে ওই ঘটনা ঘটেছে সেখানে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মাত্র ৫টি পরিবার থাকে। আর সেখানে বাস করা দলিত পরিবারের সংখ্যা ৩০টি। তারপরও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে বঞ্চনার শিকার হতে হয়। দলিতদের ১৫০ একর কৃষি জমি থাকলেও সেচ দেওয়ার জন্য উচ্চবর্ণের হিন্দুদের ওপর নির্ভর করে থাকা লাগে। তারা পানি না দিলে জমিতে সেচ দিতে পারে না দলিতরা। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হামলায় নিম্নবর্ণের দলিতদের মারা যাওয়ার বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘পুলিশ আরও আগে ব্যবস্থা নিলে ৩ জন মানুষ প্রাণ হারাত না।’