প্রধানমন্ত্রী সব নির্দেশ দিলে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ কী, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে হাইকোর্ট
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে সতর্ক করার পরও দুই সিটি করপোরেশন তা আমলে না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার ডেঙ্গু নিয়ে এক রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সব কাজে নির্দেশ দিলে সরকারের কর্মকর্তাদের কাজ কী? তিনটি জেলা ছাড়া সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে সিটি করপোরেশন নড়েচড়ে বসছে। ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারিতে সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডেকে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া রোধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আমলে নেননি। দুই-তিন জন মারা যাওয়ার পর ভাসা ভাসা কথা বললেন। কিন্তু এখন তো সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালত আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন। তাঁকে সেখান থেকে নির্দেশনা দিতে হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা কী করছেন। তাঁদের বেতন-ভাতা, গাড়ি সবই জনগণের করের টাকায়। কিন্তু জনগণ সেবা পাচ্ছে না। কথা বললে তো বলবেন বেশি বলছি। প্রশাসন যেখানে ব্যর্থ হচ্ছে, জুডিশিয়ারি সেখানে হস্তক্ষেপ করছে। বিচারকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিকালে আদালত এসব মন্তব্য করেন। পরে ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন আমাদের দেশে কোনো কিছুই প্রথম থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে তখন সবাই নড়েচড়ে বসেন। এ প্রসঙ্গে বলেছেন, দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। তখন বলেছিলেন সামনে বর্ষা মৌসুম। এখন থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেন। যেন চিকুনগুনিয়া-ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়, মশার প্রার্দুভাব নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওনারা যদি তখন আদালতের নির্দেশ মানতেন, তাহলে আজকে মশা যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সেটা করতে পারতো না। তিনি বলেন, আদালত আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজের চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। সেখানে চিকিৎসাকালীন সময়ে যারা দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে, নির্দেশ দিতে হচ্ছে। প্রশাসনের এ যে ব্যর্থতা ও দুর্বলতা এটা ওনারা (আদালত) অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন। ভয়াবহ রূপ ধারণ করার আগে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি আদালত রুলসহ আদেশ দেন। ওই রুলের শুনানিতে দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
এদিকে, ডেঙ্গু জ¦রের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নিম্ন আদালতের একাধিক বিচারক, আইনজীবী ও তাঁদের পরিবার ডেঙ্গু জ¦রে ভুগছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আ স ম শামস জগলুরের বোন ফারজানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। ফারজানা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আমিন নাহিদের স্ত্রী। এ ছাড়া ঢাকার আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট ইয়াসিন মিয়ার ছেলে গত ১১ জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে ঢাকার মহানগর হাকিম ইলিয়াস মিয়া ২০ দিন ধরে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন। ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু আদালতের বিচারক ও ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা বারের একাধিক আইনজীবী ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম হলেও জুন ও জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।