March 29, 2024, 3:57 am

সংবাদ শিরোনাম
মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈখর এলাকা হতে ০৩টি দেশীয় অস্ত্র পাইপগান ফেনসিডিলসহ ০২ জন অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভূটানের রাজা ৭২ হাজার জাল টাকাসহ চক্রের সদস্য গ্রেফতার পটুয়াখালীতে শ্রমীক লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ সুন্দরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ ৯ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার র‍্যাব-৫, এর অভিযানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী দূর্গম চর হতে ১১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার’ চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রংপুরে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে কতৃপক্ষের ব্যাপক অভিজান পীরগঞ্জের ১৫টি পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ, মামলার রায় পেয়েও ১৭ মাস ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলে কাটা পড়ে কিশোরীর মৃত্যু

পল্টনে পুলিশের গাড়িতে লাফানো হেলমেটধারীসহ গ্রেফতার ৬

পল্টনে পুলিশের গাড়িতে লাফানো হেলমেটধারীসহ গ্রেফতার ৬

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

রাজধানীর নয়া পল্টনে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যারা সবাই ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। হেলমেট পরে হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠে তীব্র ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যে যুবকের ছবি ভাইরাল হয়েছিল, তিনিও আছেন গ্রেফতারদের মধ্যে। পুলিশ বলছে, মো. এইচ কে হোসেন আলী নামের এই যুবক বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের অনুসারী। শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা হোসেন ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী। গত ১৪ নভেম্বর ওই সংঘর্ষের পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে হোসেন আলীর ছবি দেখিয়ে নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের দায়ী করেছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছিলেন, সুপরিকল্পিতভাবে হেলমেটধারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। যারা আগুন দিয়েছে তারা পুলিশের প্রটেকশনে এই নাশকতার কাজ করেছে, এরা ছাত্রলীগ, যুবলীগের মহানগরের নেতা, যার সুস্পষ্ট প্রমাণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পরে এই ঘটনায় দায়ের করা তিন মামলায় রিজভীকেও আসামি করেছে পুলিশ। তিনি ছাড়াও মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, আখতারুজ্জামান রঞ্জন, নিপুন রায় চৌধুরীসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মীর নাম রয়েছে মামলাগুলোতে। হেলমেটধারী হোসেন আলীর সঙ্গে ওই নাশকতার বিভিন্ন ছবিতে আসা পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন। অন্যরা হলেন- শাজাহানপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূঁইয়া, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্বাস আলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রবিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন উজ্জ্বল এবং তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম। সোমবার বিকালে রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেন মনিরুল। তবে তাদের কারও কারও পরিবার বলছে, কয়েক দিন আগেই ধরে নেওয়া হয়েছে তাদের। মনিরুল ইসলাম বলেন, হোসেন আলী কালো শার্ট পরে গাড়িতে উঠে লাফালাফি করছিল। রবিন প্রথমে গাড়িতে আঘাত করেছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশকে উসকানি দিতেই তারা ওই হামলা করেছিল, যাতে পুলিশ সেখানে নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে। সেদিন ওখানে কোনো লাঠিচার্জ করা হয়নি। এই মামলায় এর আগে নিপুন রায়সহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পল্টনে পুলিশের উপর হামলার সময় পরিচয় এড়াতে হামরাকারীদের হেলমেট পরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন নেতারা। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে লাঠি মজুদ ছিল এবং সেসব লাঠি দেখিয়ে কর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন কয়েকজন নেতা। হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে উসকানি দেওয়া। তারা ভেবেছিল এ ঘটনায় পুলিশ অ্যাকশনে যাবে এবং নির্বিচারে লাঠিচার্জ করবে। আর সেসব ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে দলটি রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে। তিনি বলেন, যারা অজ্ঞাত ছিল তাদেরও মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজের সহায়তায় শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকেই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তিনি জানান, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, সেদিন যখন হামলা করা হয় তখন কোনো কোনো নেতারা তাদেরক হেলমেট পরে যেতে বলেছেন, যাতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না যায়। লাঠিও ওখানে আগে থেকেই জড়ো করা হয়েছিল, কেউ কেউ লাঠি নিয়ে যেতে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত আছে তাদের কাউকে কাউকে শনাক্ত করা হয়েছে আবার কাউকে শনাক্ত করার কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, সেদিন যে ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল সেটি ফৌজদারী অপরাধ। ফৌজদারী অপরাধ বিবেচনায় নিয়েই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, এখানে কারও রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। যে যুবক গাড়িতে আগুন দিয়েছে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারলেও এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এর বাইরেও অনেককে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। ঘটনার দিন পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে পুলিশ ইসির নির্দেশে কাজ করতে বাধ্য। সেদিন পল্টনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। ৫-৭ মিনিটে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে ডিএমপির ক্যাপাসিটি রয়েছে। সেদিন পুলিশ অ্যাকশনে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে ৫-১০ মিনিটে সবাইকে সরিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, অনেক পুলিশকে সেদিন আক্রমণ করা হয়েছিল, আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের লাইফ রেসকিউ করাই সেদিন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা সেটি করতে পেরেছিলাম। হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য, তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে উসকানি দেওয়া। তারা মনে করেছে এর ফলে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করবে এবং এসব অ্যাকশনের ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন মহলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবে। দ্যা ইকোনোমিস্টের একটি রিপোর্টে লেখা হয়েছে- সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত নাশকতা করবে এবং তাদের ব্যাকআপ দেবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা সব রাজনৈতিক দলের শুভবুদ্ধি হবে। সবাই গণতান্ত্রিক পন্থায় তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করবেন। কিন্তু কেউ যদি নাশকতা করার চেষ্টা করে, সে যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পল্টনের ঘটনায় আসামিরা ফেসবুকের অ্যাকাউন্টও ডিঅ্যাকটিভেটেড করেছিল, তবুও তারা পালাতে পারেনি। অপরাধ করে কেউ পালাতে পারবে না। জনগণের জান-মাল ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো ফৌজদারি অপরাধ নস্যাৎ করার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে বলে জানান তিনি। পল্টনের ঘটনায় পুলিশের উপর হেলমেট পরিহিত হামলাকারীদের দ্রুতই গ্রেফতার করা হলো, সেই সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সাংবাদিকদের উপর হেলমেটধারী হামলাকারীদের কেন এখনও শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়নি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফৌজদারী অপরাধ হলে সেটিকে আমরা অপরাধ হিসেবেই দেখি, কার উপর হামলা হয়েছে বিষয়টি মুখ্য নয়। এই মামলাটির তদন্ত চলছে, দায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর