দেশজুড়ে জ্বালানি তেল সরবরাহে সরকারের বিপুল খরচ ও পরিবহন ঘাটতি হচ্ছে। সেজন্য জ্বালানি তেল পরিবহন পদ্ধতিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এতোদিন ট্যাংকারের মাধ্যমে দেশজুড়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ হলেও এখন তা পাইপলাইনে করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে পাইপলাইন। তাতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সেজন্য পরিকল্পনা কমিশনে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি এটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা যায়। আর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বাস্তবায়ন করবে। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ট্যাংকার যোগে পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে তেল পরিবহন সহজ, সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন হবে। সেজন্য চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল পর্যন্ত ২৩৭ দশমিক ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট পাইপলাইন, গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার ১০ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট এবং কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট ভূগর্ভস্থ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে দেশে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। আর বিদ্যমান গ্যাস সংকটের ফলে পেট্রোলিয়ামের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২১ সালের পর দেশের বিভিন্ন পুরনো গ্যাস ফিল্ড থেকেও উত্তোলন কমতে থাকবে। আর নতুন কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ঢাকা ও তৎসংলগ্ন জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ টন, যা ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। আর চাঁদপুরে অবস্থিত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর ৩টি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা ১ দশমিক ৫৫ লাখ টন। চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকার যোগে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। বিপণন কোম্পানিগুলো থেকে গোদনাইল বা ফতুল্লা ডিপো থেকে শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকারযোগে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত বাঘাবাড়ি, চিলমারি ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠানো হয়। ওসব ডিপোতে বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪ দশমিক ১৮ লাখ টন। বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থায় ট্যাংকার যোগে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল যথাসময়ে চট্টগ্রাম থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনে সরকারকে বড় অংকের খরচ এবং পরিবহন ঘাটতি বহন করতে হয়। পাশাপাশি নদী পথে ট্যাংকারযোগে জ্বালানি তেল পরিবহনে পরিবেশগত ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে জলপথে প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। সেজন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর পরিবহন বহরে ২০০টি কোস্টাল ট্যাংকার রয়েছে। ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোস্টাল ট্যাংকারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া ওসব ট্যাংকার থেকে লোডিং-আনলোডিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়বে। পাশাপাশি দিন দিন নদীগুলোর নাব্য কমে যাচ্ছে। ফলে ট্যাংকার চলাচলে বাধার সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চাহিদা ব্যাপক বাড়লেও দ্রুততার সঙ্গে ট্যাংকারযোগে জ্বালানি পরিবহন সম্ভব হবে না। তাই ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিস্তা করে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুততার সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা, পরিবহন সময় ও পরিবহন ঘাটতি কমাতে পাইপলাইন পদ্ধতির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে পিইসি সভার কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতির পরিপত্রে কোন নির্বাহক সংস্থার পদ নেই। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পে নির্বাহক সংস্থা হিসেবে পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে দেখানো হয়েছে। তা দেখানোর যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয় পিইসি সভায়। তাছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবে যাতায়াত বাবদ ৫০ লাখ টাকার যৌক্তিকতাও জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাতের ব্যয় নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। পরে আলোচনার পর বিভিন্ন সুপারিশ দেয় পিইসি সভা।