March 29, 2024, 12:45 am

সংবাদ শিরোনাম
মুন্সিগঞ্জ জেলার বৈখর এলাকা হতে ০৩টি দেশীয় অস্ত্র পাইপগান ফেনসিডিলসহ ০২ জন অবৈধ অস্ত্রধারী গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভূটানের রাজা ৭২ হাজার জাল টাকাসহ চক্রের সদস্য গ্রেফতার পটুয়াখালীতে শ্রমীক লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ সুন্দরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ ৯ জুয়াড়ি গ্রেপ্তার র‍্যাব-৫, এর অভিযানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তবর্তী দূর্গম চর হতে ১১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার’ চিলমারীতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত রংপুরে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে কতৃপক্ষের ব্যাপক অভিজান পীরগঞ্জের ১৫টি পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ, মামলার রায় পেয়েও ১৭ মাস ধরে অবরুদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলে কাটা পড়ে কিশোরীর মৃত্যু

গোয়াইনঘাটের নকল নবীশদের মানবেতর জীবন যাপন

আবু তালহা তোফায়েল,গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধিঃ

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে কর্মহীন দেশের বেশির ভাগ পেশার মানুষ। এর মধ্যে রয়েছেন নিম্নবিত্ত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু সরকারি অফিসে চাকরি করেও মানবেতর জীবনযাপন করছেন এক্সট্রা মোহরার বা নকল নবিসরা। করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের সকল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ। তাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাওয়া দেশের ২০ হাজারেরও বেশি নকল নবিস। বাংলাদেশ এক্সট্রা-মোহরার (নকল নবিস) অ্যাসোসিয়েশনের গোয়াইনঘাট শাখার নকল নবীশ রাজীব কুমার দেব বলেন, এমনিতেই বেশির ভাগ অফিসের নকল নবিসের ৮-৯ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এর পর গত মাস থেকে বাংলাদেশের সকল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ। করোনা ভাইরাসের কারণে অফিস বন্ধ থাকলেও নকল নবিসরা ছাড়া সবাই সরকারের কাছ থেকে বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সংসার কিভাবে চলে কেউ খোঁজ নেয় না। নকল নবিসদের বেশির ভাগ পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তারা না পারছি হাত পাততে, না পারছি ন্যায্য পাওনা আদায় করতে। সূত্র মতে, দলিল সম্পাদনের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও সম্পত্তি বেচাকেনায় প্রতারণা বন্ধ এবং ভূমি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ১৭৮১ সালে উপমহাদেশে প্রথম রেজিস্ট্রি আইন প্রবর্তিত হয়। তখন থেকেই দলিল রেজিস্ট্রি এবং দলিলের নকল লেখার জন্য সৃষ্টি হয় নকল নবিস পদ। কিন্তু পদ সৃষ্টি হলেও প্রায় ২৩৯ বছর ধরে মাস্টার রোলে কাজ করতে হচ্ছে নকল নবিসদের। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে হয়নি চাকরি স্থায়ীকরণ। অথচ ১৯৫৮ সালে কালেক্টরেট, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট ও সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত নকলনবিসদের চাকরি স্থায়ী করে নেয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন অধিদফতরের অধীন রেজিস্ট্রি বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের উৎস। জমির দলিল বাবদ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় আসে এই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা এই অফিসের অস্থায়ী জনশক্তি নকল নবিসদের। নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরির নিয়োগ বিধির মতোই শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সব যোগ্যতা ও নিয়মের ভিত্তিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে এক্সট্রা মোহরার নিয়োগ করা হয়। এসব অফিসে স্থায়ী কর্মচারী মোহরারদের প্রধান কাজ হলো রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নকল ভলিউমে লেখা। দলিল রেজিস্ট্রির ১৫ দিনের মধ্যে নকল লেখার কাজ শেষ না হলে সহযোগী হিসেবে ভলিউমে নকল লেখা এক্সট্রা মোহরারদের কাজ। জানা যায়, সারা দেশে ৫০৯টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার নকল নবীশ এসোসিয়েশন এর গোয়াইনঘাট শাখার সভাপতি এবাদুর রহমান বলেন,সিলেট জেলায় ১৩টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এতে প্রায় ৫০০ জন নকল নবিস কাজ করেন। এবং সিলেট বিভাগে রেজিস্ট্রি অফিসে আছে ৪০ টি এবং এক্সট্রা মোহরার বা নকল নবিশ আছেন প্রায় ২০০০ হাজার। এমনিতেই আমরা প্রতি মাসের বেতন নিয়মিত পাই না। সর্বশেষ বেতন পেয়েছি প্রায় তিন মাস আগে। এখন তো অফিসই বন্ধ। নকল নবিসদের পরিবার খুব খারাপ অবস্থায় সময় পার করছে। এই মুহূর্তে কমপক্ষে নকল নবিসরা যাতে সংসার চালাতে পারেন সরকারের কাছে এই সহযোগিতা আমরা চাই।  একটা ৩০০ পাতার বালাম লিখলে ৮-৯ হাজার টাকা পাওয়া যায়।  আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি নকল নবিসদের চাকরি জাতীয়করণের। এজন্য নানা কর্মসূচি পালন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। জাতীয় সংসদে আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে বলেছিলেন নকল নবিসদের চাকুরী স্থায়ী করা হবে এর পর ১৯৮৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় জনসভায় বলেছিলেন নকল নবিসদের চাকুরী স্থায়ী করা হবে। আইন মন্ত্রী বারবার বলেছেন নকল নবিশ দের চাকুরী জাতীয়করণের প্রক্রিয়া চলছে কিন্তু সেটি হবে হবে বলেও হচ্ছে না। এভাবে আর কত দিন? এক্সট্রা মোহরার নকল নবিশ এসোসিয়েশন এর গোয়াইনঘাট শাখার সাধারণ সম্পাদক   মিটু লাল দাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, এতোদিনে ও নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয় না এর মধ্যে আবার অতিরিক্ত নকল নবিস নিয়োগ কিন্তু থেমে নেই। টাকার বিনিময়ে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এই নিয়োগ দিয়েছেন। আগে নকল নবিসদের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার ছিল, এখন এটা ২০ হাজার ছুঁইছুঁই। প্রত্যেকের পরিবার আছে। তাদের অবস্থা এখন কী বলুন? আমরা সরকারের কাছে দ্রুত চাকরি স্থায়ীকরণ দাবি করছি। পাশাপাশি এই ক্রান্তিকালে নকল নবিসরা যাতে পরিবার নিয়ে কমপক্ষে জীবধারণ করতে পারে সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/ ৬ মে ২০২০/ইকবাল

Facebook Comments Box
Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর